হোম
ডাউনলোড
কল
প্রশ্ন
আরও
মূলপাতা > মার্চ ২০২০ > দরসে হাদীছ
পরোপকারীর মর্যাদা
প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব |
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلاً جَاءَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَيُّ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ؟ فَقَالَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللهِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ، وَأَحَبُّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ سُرُورٌ تُدْخِلُهُ عَلَى مُسْلِمٍ أَوْ تَكْشِفُ عَنْهُ كُرْبَةً أَوْ تَقْضِى عَنْهُ دَيْناً أَوْ تَطْرُدُ عَنْهُ جُوْعاً، وَلأَنْ أَمْشِىَ مَعَ أَخِى الْمُسْلِمِ فِى حَاجَةٍ أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ أَعْتَكِفَ فِى هَذَا الْمَسْجِدِ يَعْنِيْ مَسْجِدَ الْمَدِيْنَةِ شَهْرًا، وَمَنْ كَفَّ غَضْبَهُ سَتَرَ اللهُ عَوْرَتَهُ وَمَنْ كَظَمَ غَيْظَهُ وَلَوْ شَاءَ أَنْ يُّمْضِيَهُ أَمْضَاهُ مَلَأَ اللهُ قَلْبَهُ رِضًا يَّوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ مَّشَى مَعَ أَخِيْهِ الْمُسْلِمِ فِى حَاجَةٍ حَتَّى يَقْضِيَهَا لَهُ أَثْبَتَ اللهُ قَدَمَهُ يَوْمَ تَزِلُّ الْأَقْدَامُ، وَإِنَّ سُوءَ الْخُلُقِ يُفْسِدُ الْعَمَلَ كَمَا يُفْسِدُ الْخَلُّ الْعَسَلَ-
প্রত্যেক মুমিনই আল্লাহর নিকট প্রিয় হ’তে চায়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
(১) আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় যে মানুষের সবচেয়ে বেশী উপকার করে। (২) আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় নেক আমল হ’ল কোন মুসলিমকে আনন্দিত করা অথবা তার কোন বিপদ, কষ্ট বা উৎকণ্ঠা দূর করা, অথবা তার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া অথবা তার ক্ষুধা দূর করা। তিনি বলেন, (৩) আমার কোন ভাইয়ের সাহায্যের জন্য তার সাথে হেঁটে যাওয়া আমার নিকট এই মসজিদে (মসজিদে নববীতে) এক মাস ই‘তেকাফ করার চেয়েও প্রিয়। (৪) যে ব্যক্তি তার ক্রোধ সংবরণ করবে, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। নিজের ক্রোধ কার্যকর করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তা দমন করবে, ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তার হৃদয়কে সন্তুষ্টি দিয়ে ভরে দিবেন। (৫) যে ব্যক্তি তার কোন ভাইয়ের সাথে গিয়ে তার কোন প্রয়োজন মিটিয়ে দিবে, ক্বিয়ামতের কঠিন দিনে যেদিন পুলছিরাতের উপর সকলের পা পিছলে যাবে, সেদিন আল্লাহ তার পা দৃঢ় রাখবেন। তিনি বলেন, (৬) সিরকা যেমন মধুকে নষ্ট করে দেয়, মন্দ আচরণ তেমনি মানুষের সৎকর্ম সমূহ বিনষ্ট করে দেয়’।[1]
উপরোক্ত হাদীছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, ব্যক্তি কল্যাণ ও সমাজ কল্যাণের ছোট-খাট বিষয়েও মুমিনকে সজাগ থাকতে হবে। অনেকের জ্ঞান আছে, কিন্তু হুঁশ নেই। এদের অসতর্কতার জন্যই পরিবারে, সমাজে ও সংগঠনে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয় ও ক্ষতি হয়।
অত্র হাদীছে ৬টি বিষয় বলা হয়েছে, প্রত্যেকটি বিষয়ে কেবল আল্লাহর নিকটে প্রিয় নয়, বরং তা ব্যক্তির নিজের নিকটে ও সকল মানুষের নিকটে প্রিয়। বর্ণিত ৬টি বিষয়ের মধ্যে প্রথমটি হ’ল, ‘যে মানুষের সবচেয়ে বেশী উপকার করে’। এর দ্বারা ন্যায় কাজে উপকার করা বুঝানো হয়েছে, অন্যায় কাজে নয়। যে কাজে কোন ছওয়াব নেই এবং ছওয়াবের আকাঙ্খা নেই, সেকাজ আল্লাহর নিকট প্রিয় নয়। যেমন রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَّاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ- ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রামাযানের ছিয়াম পালন করে, তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করা হয় এবং যে ব্যক্তি রামাযানের রাত্রিতে ঈমানের সাথে ও ছওয়াবের আশায় রাত্রির (নফল) ছালাত আদায় করে, তার বিগত সকল (ছগীরা) গোনাহ মাফ করা হয়’।[2]
إِيمَانًا ‘ঈমানের সাথে’ অর্থ আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে এবং إِحْتِسَابًا ‘ছওয়াবের আশায়’ অর্থ পূর্ণ পুরস্কার লাভের আশায়। যে পুরস্কারে সে দৃঢ় আশা পোষণ করবে যে, এর মাধ্যমে আল্লাহ তার বিগত সকল গোনাহ মাফ করে দিবেন। ফলে যে ব্যক্তি গতানুগতিক অভ্যাস বশে অথবা লোক দেখানোর জন্য কিংবা দুনিয়াবী স্বার্থে অন্যের উপকার করে, সে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় হ’তে পারবেনা। মানুষের জন্য উপকারীদের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُّؤْمِنٍ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ يَّسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ- ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন সংকটাপন্ন ব্যক্তির সংকট নিরসন করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় সংকট নিরসন করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন’।[3]
অন্য এক হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,أَحَبُّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ تَعَالَى أَدْوَمُهَا وَإِنْ قَلَّ- ‘সেই আমল আল্লাহর অধিক পসন্দনীয় যে আমল নিয়মিতভাবে করা হয়, যদিও তা পরিমাণে কম হয়’।[4]
আল্লাহ বলেন, وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ- ‘আর তোমরা সৎকর্ম সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পার’ (হজ্জ ২২/৭৭)। তিনি বলেন, وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى ‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর’ (মায়েদা ৫/২)। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন মানুষের জন্য সর্বাধিক উপকারী ব্যক্তি। যেমন নুযূলে কুরআনের প্রথম দিনে রাসূল (ছাঃ) ভীত হয়ে বলেছিলেন, ‘আমি আমার জীবনের উপর আশঙ্কা করছি। তখন স্ত্রী খাদীজা (রাঃ) তাঁকে বলেন,
كَلاَّ وَاللهِ لاَيُخْزِيْكَ اللهُ اَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ وَتَحْمِلُ الْكَلَّ وَتَكْسِبُ الْمَعْدُوْمَ وَتَقْرِى الضَّيْفَ وَتُعِيْن