যাকাত ইসলামের স্তম্ভগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি কেবল একটি আর্থিক সাহায্যই নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যাকাত আদায় করা প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য ফরয বা আবশ্যিক কর্তব্য।
যাকাত কী?
যাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো বৃদ্ধি, প্রাচুর্য ও পবিত্রতা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হলে বছরান্তে তার একটি নির্দিষ্ট অংশ (সাধারণত ২.৫%) আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দরিদ্র ও অভাবীসহ যাকাত পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করে দেওয়াকে যাকাত বলে।
যাকাতের গুরুত্ব:
* ইসলামের স্তম্ভ: যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয় স্তম্ভ। এর গুরুত্ব অপরিসীম।
* আর্থিক ইবাদত: যাকাত একটি আর্থিক ইবাদত, যা আল্লাহ্র নির্দেশ পালনের মাধ্যমে আদায় করা হয়।
* সম্পদের পবিত্রতা: যাকাত আদায় করার মাধ্যমে সম্পদ পরিশুদ্ধ ও পবিত্র হয়।
* সামাজিক ন্যায়বিচার: যাকাত সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এবং দরিদ্র ও অভাবী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে।
* সম্প্রীতি বৃদ্ধি: যাকাত ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতি ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি করে।
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত:
যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। এগুলো হলো:
* মুসলিম হওয়া: যাকাত কেবল মুসলিমদের উপরই ফরজ।
* স্বাধীন হওয়া: যাকাত আদায়ের জন্য ব্যক্তিকে স্বাধীন হতে হবে।
* নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া: নিসাব হলো শরীয়ত নির্ধারিত ন্যূনতম সম্পদ, যার মালিক হলে যাকাত দিতে হয়। স্বর্ণ, রুপা, নগদ অর্থ, ব্যবসার পণ্য, এবং গবাদি পশুর ক্ষেত্রে নিসাবের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন।
* বছর পূর্ণ হওয়া: যাকাতের মাল নিসাব পরিমাণ হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হতে হবে।
* ঋণমুক্ত হওয়া: যাকাতদাতার মৌলিক প্রয়োজন পূরণের পর ঋণমুক্ত থাকতে হবে।
যাকাত প্রদানের খাত:
কোরআনে যাকাত প্রদানের আটটি খাত উল্লেখ করা হয়েছে:
* ফকীর (দরিদ্র)
* মিসকীন (অসহায়)
* যাকাত আদায়কারী কর্মচারী
* ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট ব্যক্তি
* দাসমুক্তি
* ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি
* আল্লাহ্র পথে জিহাদকারী
* মুসাফির (পথিক)
যাকাতের তাৎপর্য:
যাকাত কেবল একটি আর্থিক লেনদেন নয়, এর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক তাৎপর্য অনেক গভীর। এটি মানুষকে কৃপণতা ও লোভ থেকে মুক্তি দেয় এবং দানশীলতা ও সহানুভূতির শিক্ষা দেয়। যাকাত সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে এবং একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে