31 w ·Traduire

নির্ধারিত সময়ে খাওয়া-দাওয়া শুরু হল। প্রত্যেকেই তৃপ্তিসহকারে খানা খেল। যারা দুরদুরান্ত থেকে আসতে পারেনি তাদেরকেও শেষ পর্যন্ত ঘোড়া ও গাধার পিঠে চড়িয়ে আনা হল। এভাবে প্রায় পনের দিন পর্যন্ত অগণিথ লোক শাহী দাওয়াতে শরিক হওয়ার পর সুলতান জিজ্ঞাসা করলেন আরও কেউ অবশিষ্ট আছে কি? থাকলে তাদেরকেও ডেকে আন।

এই নির্দেশের পর সুলতান বিশ্বস্ত সূত্রে অবগত হলেন যে, আর কোন লোক দাওয়াতে আসতে বাকী নেই। একথা শুনে তিনি সীমাহীন অস্থির হয়ে পড়লেন। চিন্তার অথৈই সাগরে হারিয়ে গেলেন তিনি। ভাবলেন, যদি আর কোন লোক দাওয়াতে শরীক হতে বাকী না থাকে তাহলে সেই অভিশপ্ত লোক দু’জন গেল কোথায়? আমি তো দাওয়াতে শরীক হওয়া প্রতিটি লোককেই অত্যন্ত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। কিন্তু কারও চেহারাইতো স্বপ্নে দেখা লোক দুটোর চেহারার সাথে মিলল না, তাহলে কি আমার মিশন ব্যর্থ হবে? আমি কি ঐ কুচক্রী লোক দুটোকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিতে সক্ষম হব না? এসব চিন্তায় বেশ কিছুক্ষণ তিনি ডুবে রইলেন। তারপর আবারও তিনি নতুন করে ঘোষণা করলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মদিনার সকল লোকদের দাওয়াত খাওয়া এখনও শেষ হয়নি। অতএব সবাইকে আবারও অনুরোধ করা যাচ্ছে, যারা এখনও আসেনি তাদেরকে যেন অনুসন্ধান করে দাওয়াতে শরীক করা হয়।

একথা শ্রবণে মদিনাবাসী সকলেই এক বাক্যে বলে উঠল, "হুজুর! মদিনার আশে পাশে এমন কোন লোক বাকী নেই, যারা আপনার দাওয়াতে অংশ গ্রহণ করেনি।" তখন নূরুদ্দীন জাঙ্কি (র বলিষ্ঠ কন্ঠে বললেন, "আমি যা বলেছি, ঠিকই বলেছি। আপনারা ভাল ভাবে অনুসন্ধান করুন।"

সুলতানের এই দৃঢ়তা দেখে লক্ষাধিক জনতার মধ্য থেকে এক ব্যক্তি হঠাৎ করে বলে উঠল, "হুজুর! আমার জানামতে দু’জন লোক সম্ভবত এখনও বাকী আছে। তারা আল্লাহ্‌ওয়ালা বুযুর্গ মানুষ। জীবনে কখনও কারও কাছ থেকে হাদীয়া তোহফা গ্রহণ করেন না, এমনকি কারও দাওয়াতেও শরীক হন না। তারা নিজেরাই লোকদেরকে অনেক দান-খয়রাত করে থাকেন। নীরবতাই অধিক পছন্দ করেন। লোক সমাজে উপস্থিত হওয়া মোটেও ভালবাসেন না।"

লোকটির বক্তব্য শুনে সুলতানের চেহারায় একটি বিদ্যুত চমক খেলে গেল। তিনি কাল বিলম্ব না করে কয়েকজন লোক সহকারে ঐ লোক দুটোর আবাসস্থলে উপস্থিত হলেন। তিনি দেখলেন, এতো সেই দু’জন, যাদেরকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছিল। তাদেরকে দেখে সুলতানের দু’চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "কে তোমরা? কোথা থেকে এসেছ? তোমরা সুলতানের দাওয়াতে শরীক হলে না কেন?"