ইসলামে স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা

আমরা অনেক সময় মনে করি ইসলামে ভালোবাসা বলে কিছু নেই, শুধু চোখমুখ বুজে রোবটের মত জীবন কাটাব।

আমরা অনেক সময় মনে করি ইসলামে ভালোবাসা বলে কিছু নেই, শুধু চোখমুখ বুজে রোবটের মত জীবন কাটাব। 

 

আসলে কিন্তু তা সঠিক নয়, বরং আমাদের নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্ত্রীদেরকে অনেক ভালোবাসতেন। ভালোবাসায় ছিল না কোন মিথ্যা, বেহায়াপনা বা অশ্লীল কিছু, ভালবাসা ছিল পবিত্র যা আমাদের জন্য আদর্শ। 

 

তিনি বলেন “তোমরা ঐ পর্যন্ত জান্নাতে যেতে পারবেনা যতক্ষণ না পর্যন্ত মুমিন হও, আর ততক্ষন পর্যন্ত মুমিন হতে পারবেনা যতক্ষণ না পর্যন্ত একে অপরকে ভাল না বাসো।” 

 

অতএব আমরা বুঝতে পারলাম ভালবাসা ঈমান এর আলামত। যাই হোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্ত্রীদেরকে কি পরিমাণ ভালোবাসতেন তার কয়েকটি নমুনা তুলে ধরা হলঃ 

 

ঘটনা-১

 ভালোবাসা লুকিয়ে রাখার বস্তু নয়। যদি সেটা হালাল হয়। নিজের স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসাও অন্যদের কাছে প্রকাশ করা যায়। খোদ নবীজি বলেছেন: 

 

আমাকে খাদীজার ভালোবাসা দান করা হয়েছে। (তার প্রতি আমার ভালোবাসাটা আল্লাহর হাদিয়া)। (মুসলিম) 

 

ঘটনা-২

 আশেয়া রা.-এর কাছে তার ছেলেবেলার বান্ধবীরা আসতো। তার বয়স তখনো কমই ছিল। পুতুল খেলতে পছন্দ করতেন। সইদের সাথে তিনি খেলতেন। নবীজি তাদেরকে (সইদের ) আয়েশার কাছে পাঠিয়ে দিতেন। খেলার সুযোগ করে দিতেন (মুসলিম)। 

 

শুধু স্ত্রীদের ভালোবাসতেন তা কিন্তু নয়, তাদের বান্ধবীদেরকেও ভালোবাসতেন। খোঁজখবর রাখতেন। যোগাযোগ ছিন্ন হতে দিতেন না। এটা সেটা হাদিয়া পাঠাতেন। ছাগল যবেহ হলেই কিছু গোশত আলাদা করে বলতেন: 

 

-এটা খাদীজার (অমুক) বান্ধবীর বাড়িতে দিয়ে এসো! (মুসলিম)। 

 

ঘটনা-৩

 নবীজি সারাদিন ব্যস্ত থাকতেন। ফাঁকে ফাঁকে স্ত্রীদেরকে সময় দিতেন। তবে রাতের বেলায়, চারদিক নীরব হয়ে এলে, তিনি আয়েশা রা.-এর সাথে ঘুরতে বের হতেন। হাঁটতে হাঁটতে কথাবার্তা বলতেন (বুখারী)। 

 

ঘটনা-৪

 স্ত্রীদের সাথে খেলাধূলা করা। আয়েশা রা. বলেছেন: 

☞একবার নবীজি আমাকে বললেন, চলো দৌড় প্রতিযোগিতা করি! আমরা দৌড়ালাম। আমি তার চেয়ে এগিয়ে থেকে দৌড় শেষ করলাম। কিছুদিন পর আমার স্বাস্থ্য একটু ভাল হলে, তিনি আবার একদিন প্রতিযোগিতা দিতে বললেন। এবার তিনি জয়ী হলেন। মুচকি হেসে বললেন: 

 

☞এটা সেটার বদলা। শোধবোধ। (আবু দাউদ)। 

 

ঘটনা-৫

 নবীজি সফর থেকে এসে, চট করে ঘরে চলে যেতেন না। স্ত্রীদেরকে সাজগোজ করার সুযোগ দিতেন। প্রস্তুতি নেয়ার সময় দিতেন। জাবের রা. বলেছেন: 

 

আমরা একবার সফর থেকে মদীনায় ফিরলাম। ঘরে যেতে উদ্যত হলে, নবীজি বললেন: 

 

☞ থামো, স্ত্রীদেরকে সুযোগ দাও। রাতের দিকে ঘরে যেয়ো। স্ত্রীরা এর মধ্যে ‘ক্ষৌরকর্ম’ সেরে নিতে পারবে। আলুলায়িত কেশ বিন্যাস করে নিতে পারবে! (নাসায়ী)। 

 

ঘটনা-৬

 স্ত্রীর শুধু দোষ নয়, তার গুণগুলোও খুঁজে বের করা দরকার। সেগুলো প্রকাশ করা দরকার। অপছন্দনীয় কিছু দেখলে অমনিই তেতে ওঠার কোনও কারণ নেই: 

 

স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি যেন অন্যায় আচরণ না করে। তার কোনও একটা স্বভাব পছন্দ না হলেও, অন্য আরেকটা স্বভাব পছন্দ হবে! (মুসলিম)। 

 

ঘটনা-৭

 সাফিয়া রা. এক সফরে নবীজির সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। সাফিয়া(রাঃ) কিছুটা ধীরে পথ চলছিলেন। পিছিয়ে পড়েছিলেন। নবীজি তার কাছে এগিয়ে গেলেন। গিয়ে দেখলেন সাফিয়া কাঁদছেন আর বলছেন: 

 

☞আপনি আমাকে একটা ধীরগামী গাধায় সওয়ার করিয়েছেন! 

 

নবীজি স্নেহভরে সাফিয়ার চোখের অশ্রু মুছে দিলেন। তাকে না কেঁদে চুপ করতে বললেন (নাসায়ী)। 

 

ঘটনা-৮

 নবীজি আরও অবিশ্বাস্য (আমাদের যুগের দৃষ্টিভঙ্গিতে) কাজও করেছেন। তিনি বলেছেন: 

 

”তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমা তুলে দিবে, সেটার বিনিময়েও আল্লাহ তোমাকে সওয়াব দান করবেন (বুখারী)”। 

 

ঈদে-উৎসবে স্ত্রীদেরও শরীক করা। তাদেরকে সাথে নিয়ে উপভোগ করা সুন্নাত। আয়েশা রা. বলেছেন: 

 

☞ একবার মসজিদের চত্ত্বরে কিছু হাবশী বালক বর্শা নিয়ে খেলাধূলা করছিল। নবীজি তাদের খেলা দেখছিলেন। আমিও তার পেছনে দাঁড়িয়ে, তার গায়ে হেলান দিয়ে খেলাটা উপভোগ করেছি (বুখারী)। 

 

আমাদেরকে মহান আল্লাহ স্বামী স্ত্রীর একে অপরের ভালবাসার ক্ষেত্রে এসব সুন্নাহ মেনে চলার তৌফিক দান করুন- আমীন


Jwel Jwel

181 בלוג פוסטים

הערות