শাঁখা সিঁদুরের গল্প

ইস্কুলে বিবাহিত মেয়েরা যেন শাঁখা সিঁদুর পরে না আসে, অবিবাহিত মেয়েদের কাছে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের গল্প না কর??

ইস্কুলে বিবাহিত মেয়েরা যেন শাঁখা সিঁদুর পরে না আসে, অবিবাহিত মেয়েদের কাছে নিজেদের দাম্পত্য জীবনের গল্প না করে, কিছুদিন আগে মুর্শিদাবাদের একটি ইস্কুল কর্তৃপক্ষ এমন আদেশই জারি করেছে। জারি করা মাত্র ভীষণভাবে ক্ষেপে উঠলো মিডিয়া, মানুষ। কী? হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে ফতোয়া! কর্তৃপক্ষ বোঝাতে চাইছেন, দাম্পত্য জীবনের সরস বর্ণনা অবিবাহিত মেয়েদের যদি আগ্রহী করে তোলে বিবাহিত জীবনের প্রতি, তবে তারা পড়াশোনায় আগ্রহী না হয়ে বরং যত শীঘ্র পারে বিয়ে করার জন্য আগ্রহী হবে। কতৃপক্ষের যুক্তি কারও পছন্দ হয়নি, হুমকির মুখে ইস্কুলের শাঁখা সিঁদুর না পরার আদেশ তুলে নিতে বাধ্য হলেন কর্তৃপক্ষ।

 

আর ওদিকে উত্তর চব্বিশ পরগণার গুমা গ্রামের রীনা বৌদ্ধকে গ্রামবাসীরা প্রচণ্ড মেরে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তার অপরাধ, বিবাহিত হয়েও শাঁখা সিঁদুর না পরা। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করার কারণে রীনা শাঁখা সিঁদুর পরেননি, কিন্তু গ্রামবাসীর ফতোয়া, শাঁখা সিঁদুর পরতেই হবে, তা না হলে গ্রামে থাকা চলবে না। রীনা বৌদ্ধ অগত্যা তার স্বামী বীরেন্দ্র বৌদ্ধকে নিয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি তাঁর গ্রামের বাড়িতে নিরাপদে বাস করতে চান কিন্তু সেই নিশ্চয়তা এখনও তিনি প্রশাসনের কাছ থেকে পাননি।

 

শাঁখা সিঁদুরের গল্প অনেক। আমার বাড়িতে প্রায়ই গল্প করতে আসে সোনারপুরের সপ্তমী। জন্ম তার সুন্দরবনে। বন্যায় বাড়ি ঘর ভেসে গেল যে বছর, সে বছর তার বাবা মা তার এগারোটা ভাইবোনকে সঙ্গে নিয়ে চলে এসেছিলো সোনারপুরে। সপ্তমী তখন সাত মাসের শিশু। সপ্তমীকে মেঝেয় বসিয়ে রেখে লোকের বাড়িতে কাজ করতো তার মা। সপ্তমীও অল্প বয়স থেকেই লোকের বাড়িতে কাজ করছে। বারো তেরো বছর বয়সেই তার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। স্বামী কোনওদিন ভালোবাসেনি। শ্বশুরবাড়িতে দাসীর কাজ করতো, তারপরও প্রতিদিন তাকে স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা প্রচণ্ড মারতো। এত অত্যাচার সয়েও স্বামীর বাড়ি বলেই রয়ে গিয়েছিল সে। দুটো মেয়ে-বাচ্চা জন্মেছে, বাচ্চাগুলো তখনও কোলে, স্বামী তাকে মেরে প্রায় আধমরা করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল। সেও পনেরো বছর হয়ে গেল। এই পনেরো বছর স্বামী তার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি, বাচ্চাদুটো বেঁচে আছে কী মরে গেছে তা জানতেও কোনওদিন চেষ্টা করেনি। কোনওদিন কোনও খরচপাতি দেয়নি। অসম্ভব আর্থিক কষ্টে দিনের পর দিন কাটিয়েছে। না খেয়ে বা আধপেট খেয়ে বেঁচেছে সপ্তমী, বাঁচিয়েছে দু বাচ্চাকে। তার স্বামী আরেকটা বিয়ে করে নিয়েছে সেও অনেক বছর। কিন্তু সপ্তমী এখনও পরে আছে শাঁখা সিঁদুর, এখনও পরে আছে হাতে লোহা। দেখে সপ্তমীকে জিজ্ঞেস করেছি, ‘যে লোক তোমাকে এত কষ্ট দিলো, এত মারলো, তাড়িয়ে দিল, তোমার সঙ্গে পনেরো বছর কোনও সম্পর্ক নেই। তুমিও কোনওদিন তার কাছে ফিরবে না। সেও তোমাকে নেবে না। তবে কেন পরে আছো শাঁখা সিঁদুর?’

 

সপ্তমী বলে, ‘আমাদের মধ্যে একবার শাঁখা সিঁদুর পরলে তা আমরা ফেলতে পারি না।’

 

আমি বললাম, ‘তুমি ডিভোর্স দিচ্ছ না কেন?’

 

বললো, ‘আমাদের মধ্যে


Rx Munna

447 Blog posts

Comments