ঘটনাটি আমাদের গ্রামের
আমি রফিকুল ইসলাম। আমার বাড়ি দিনাজপুরে। সঙ্গত কারণে আমি গ্রামের নাম বলব না। আমার গ্রামে একটি পালং গাছ আছে। দেখতে বট গাছের মতোই, কিন্তু জোর থাকেনা। সেই পালং গাছের নিচে এক বৃদ্ধ লোককে স্বর্নের হুক্কা খেতে দেখা যেত। গ্রামের অনেক মানুষই দেখেছে তাকে। কিন্তু সবাই জানে জায়গাটা হনটেড। ওখানে রাতের বেলা তো দুরের কথা, দিনের বেলা সেখানে যেতে সবাই ভয় পায়। ওই পালং গাছের সাথে এক লোকের জমি ছিল। বিকেল বা সন্ধার দিকে ওই জায়গায় সে প্রায়ই যেত। তো একদিন তিনটা জীন তাকে তিনটা টাকার হাড়ি দেখায়। বলে তুমি যদি আমাদের দলেচলে আস তাহলে তোমাকে এই টাকা গুলো দেব। তো যথারীতি সেই বেক্তি টাকার লোভে হোক আর এমনি হোক রাজি হয়ে যায়।
তো রাজি হওয়ার পরে তাকে আর জীন গুলো টাকা দেয় না। বিভিন্ন ভাবে আজ না কাল বলে ঘুরাতে থাকে। প্রায় এক মাস লোক টাকে ঘুরায় তারা।
তো লোকটা অবশেষে বিরক্ত হয়ে গ্রামের এক জনের কাছে শেয়ার করে যে কিভাবে আমি এই টাকা ঘুলো আনব ? এবং একটা জিনিস বলে রাখি লোকটা যখন জোর করে টাকার হাড়ি আনতে যেত তখন হাড়ি গুলো মাটির নিচে তলিয়ে যেত। সে কোন অবস্থাতেই টাকা গুলো আনতে পারতনা।
গ্রামের লোকটা এডভাইজ দিলো যে, তুমি একটা কাজ কর, তুমি তিনটা গরুর হাড় সাথে নিয়ে যাবে। যদি তোমাকে টাকা দিতে না চায় তাহলে তুমি হাড়ি তিনটির উপরে গরুর হাড় ( হাড্ডি ) রেখে দিবে।
তো সেদিন সে টাকার হাড়ি আনতে গেল। দুটি জীন রাজি হচ্ছিল, কিন্তু একটা জীন কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না। সে লোকটা কাপড় থেকে হাড় তিনটি বের করে যথারীতি হাড়ি গুলুর উপরে রেখে দিল।
এইবার আগের বারের মত হাড়ি গুলো নিচে তলিয়ে গেল না।
শুধু কাপতে থাকলো এবং জীন তিনটা গায়েব হয়ে গেল।
তো সে যথারীতি আরাম করে হাড়ি তিনটি উঠিয়ে নিয়ে আসে এবং একটি ঝোপের ভিতর লুকিয়ে রাখে এবং বাড়ী চলে যায়। এরপর রাতে তিনি সেখানে আসে এবং হাড়ি তিনটি নিয়ে নিজের ঘরের খাটের নিচে পুতে রাখে এবং তার স্ত্রীকে বলে জায়গাটা সুন্দর করে ভরাট করে দাও যেন কেও বুঝতে না পারে।
এর পরের দিন একটি ঘটনা ঘটে। সেই লোকটা কোনো কারণে পাগল হয়ে যায়। তখন গ্রামবাসী তাকে সুস্থ্য করার জন্য একজন হুজুর নিয়ে আসে। তো সেই হুজুরের দুটি স্ত্রী ছিল। একটি স্ত্রী ছিল মানুষ। আর একটি ছিল জীনদের মেয়ে।
যথারীতি সেই হুজুর চলে আসে এসে একটি বালতি নেয়। সেই বালটিতে কিছু পানি নেয় এবং গ্রাম থেকে একজন লোক নেয়। সে লোকের ভালো করে চোখ বেধে বলে সেই পানিতে তাকাও। লোকটি চোখ বাধা অবস্থায় পানিতে তাকায়, আর তিনি সব দেখতে থাকে এবং সব বলে দেয় যে কি ঘটেছিল।
তার পরে সেই হুজুর বলে আপনারা কি কেও টাকা এনেছেন জীনের কাছ থেকে ? তখন তার স্ত্রী বলে যে আমরা টাকা আনিনি, অর্থাৎ সে অস্বীকার করে।
তখন গ্রামবাসী মনে করে হয়ত হুজুরটা মিথ্যা বলছে। তো যাই হোক তখন সেই হুজুর বলে আপনারা যদি আমাকে বিশ্বাস না করেন তাহলে আপনারা দশ জন আসেন।
আপনারা যদি এই বালতিটা উচা করতে পারেন তাহলে বুঝবেন আমি মিথ্যা বলছি। তো যথারীতি দশ জন আসে বালটির ভিতরে বাশ ঢুকিয়ে দশ জনে উঠানোর চেষ্টা করে, কিন্তু উঠাতে পারেনা।
তখন হুজুর বলে আমি সেই জীন গুলো ধরতে চেষ্টা করতেছি। হয়ত আমি জীনদের ধরতে পারবনা। তখন দেখা গেল ঘরের ভিতরে অনেক কিছু ছিল, যেমন ধান আরো কিছু জিনিস পত্র উড়ে উড়ে বাহিরে পড়তেছে একটি নির্দিষ্ট জায়গার ভিতরে।
অবশেষে ঘরটা শান্ত হয়ে গেল। তখন হুজুর বললো, আমি ঘরটা শান্ত করে দিয়েছি। কিন্তু টাকা ফিরত দেয়া না পর্যন্ত ওরা ছাড়বেনা। যদি টাকা নিয়ে থাকেন ফিরত দেন। এরপর হুজুর কে বিদায় দেয়া হলো
হুজুরকে বিদায় দেয়ার পরে ওই লোকটা সম্পূর্ণ রূপে পাগল। লোকটির স্ত্রী কিছু কিছু টাকা নিয়ে গ্রামে জমি কিনতে থাকে।
তখন গ্রামে মানুষ তাকে বলে তোমরা হত দরিদ্র, তোমরা জমি কেনার টাকা পাও কোথায়? তখন লোকটির স্ত্রী বলে আমার ভাইয়ের কাছ থেকে, আরো আত্মীয় সজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে জমি কিনলাম।
তারা রাতা রাতি অনেক বড়লোক হয়ে যায়।
সেই পাগল থাকা লোকটি বাড়ির বাহিরে দড়ি দিয়ে বাধা ছিল। উত্তর অঞ্চলে যারা ছিলেন তারা হয়ত জানেন সেই খানে বৃষ্টির সময় উপর থেকে গোল্ডেন কালারে সাপ পরে। গাছথেকেই হোক বা যেখান থেকেই হোক সাপ গুলো বিষাক্ত, কিন্তু কাওকে সে ছোবল দেয়না।
সেই লোকটা যখন বাধা ছিল তখন একটা সাপ উপর থেকে পরতেছিল। সেই লোকটা তখন বাধন ছিড়ে গিয়ে দৌড় দিয়ে একটা সাপ মাথা ছিড়ে পুরোটা খেয়ে ফেলে।
এর এক সপ্তাহ পরে লোকটি মারা যায়।
অনেকের ধারনা যে লোকটিকে সেই গাছ তলাতে হুকা খেতে দেখা যায় সে আর কেউ নয়, সে ওই পাগল লোকটিই।
ভুতের গল্প পর্ব ১
লোভ