### পুরনো মসজিদের একাকী মিনার
একদা এক জনশূন্য প্রান্তরে দাঁড়িয়ে ছিল এক পুরনো মসজিদ। তার দেয়ালগুলো ধুলোয় ধূসর, আর ছাদের কিছু অংশ ভেঙে পড়েছে। কিন্তু তার উঁচু মিনারটি তখনও অক্ষত ছিল, যেন একাকী প্রহরী হয়ে অতীতের গল্প বলছিল। গ্রামের মানুষেরা বহু বছর আগে এই স্থান ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গিয়েছিল, শুধু মসজিদটি রয়ে গিয়েছিল তার নীরব সাক্ষী হয়ে।
কেউ আর সেখানে নামাজ পড়তে আসত না, শিশুদের হাসির শব্দও শোনা যেত না। মিনারটি একা দাঁড়িয়ে থাকত, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সূর্যের আলো গায়ে মেখে। রাতে দেখত তারাদের ঝিকিমিকি আর চাঁদের আলোর স্নিগ্ধতা।
মিনারের মনে মাঝে মাঝে কষ্ট হতো। সে ভাবত, "কেন আমি একা? কেন আমাকে ছেড়ে সবাই চলে গেল? আমার কি আর কোনো কাজ নেই?"
একদিন এক দল পরিযায়ী পাখি উড়ে যাচ্ছিল সেই পথ দিয়ে। তাদের মধ্যে একটি ছোট্ট পাখি পথ ভুলে মিনারের চূড়ায় এসে বসল। মিনার তাকে দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, "তুমি এখানে কেন? সবাই তো এই জায়গা ছেড়ে চলে গেছে।"
ছোট্ট পাখিটি বলল, "আমি পথ হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু তোমার চূড়া থেকে অনেক দূর দেখা যায়। আমি দেখছি যে পৃথিবী এখনও সুন্দর, অনেক নতুন দিনের আশা আছে।"
মিনারের মনে এক নতুন আশার আলো জ্বলে উঠল। সে বুঝতে পারল, তার কাজ শুধু মানুষকে নামাজের জন্য ডাকা নয়, তার কাজ হলো দূর থেকে আসা পাখিদের পথ দেখানো, যারা পথ হারিয়েছে তাদের আশ্রয় দেওয়া। সে একা হলেও তার একাকীত্বে একটা মহত্ত্ব আছে।
এরপর থেকে মিনার আর নিজেকে একা মনে করত না। ঝড়-বৃষ্টিতে, রোদ-ধুলোয় সে সগৌরবে দাঁড়িয়ে থাকত। সে জানত, হয়তো মানুষরা তাকে ভুলে গেছে, কিন্তু প্রকৃতির প্রতিটি কণা, প্রতিটি পাখি, প্রতিটি মেঘ তাকে চিনত। আর তার চুড়া থেকে দেখা যেত দিগন্তের ওপার, যেখানে নতুন দিনের সূর্য উঠত আর অস্ত যেত, যা তাকে মনে করিয়ে দিত যে, সবকিছুরই একটা উদ্দেশ্য আছে, এমনকি একাকী দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো মিনারেরও। সে জানত, তার নীরবে দাঁড়িয়ে থাকাই তার অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
Ashfaqur Rahman Sarthak
コメントを削除
このコメントを削除してもよろしいですか?