AFace1 AFace1
    #spotnrides #mobileappdevelopment #spotneats #uberfortowtruck #uberfortowtrucks
    Advanced Search
  • Login
  • Register

  • Night mode
  • © 2025 AFace1
    About • Contact Us • Privacy Policy • Terms of Use • Refund • Guidelines • Apps Install • DMCA

    Select Language

  • Arabic
  • Bengali
  • Chinese
  • Croatian
  • Danish
  • Dutch
  • English
  • Filipino
  • French
  • German
  • Hebrew
  • Hindi
  • Indonesian
  • Italian
  • Japanese
  • Korean
  • Persian
  • Portuguese
  • Russian
  • Spanish
  • Swedish
  • Turkish
  • Urdu
  • Vietnamese

Watch

Watch Reels Movies

Events

Browse Events My events

Blog

Browse articles

Market

Latest Products

Pages

My Pages Liked Pages

More

Forum Explore Popular Posts Jobs Offers Fundings
Reels Watch Events Market Blog My Pages See all
Md Sazzadur Rahman
User Image
Drag to reposition cover
Md Sazzadur Rahman

Md Sazzadur Rahman

@1755879211825562_25752
  • Timeline
  • Groups
  • Likes
  • Following 84
  • Followers 0
  • Photos
  • Videos
  • Reels
  • Products
আমি একজন স্টুডেন্ট
আমি বর্তমানে অনার্স পড়ছি
84 Following
0 Followers
7 posts
Male
23 years old
Living in Bangladesh
Md Sazzadur Rahman
Md Sazzadur Rahman
15 w ·Translate

ঠিক

---

এক গ্রামের স্বপ্নবাজ ছেলে

সবুজ শ্যামল একটি গ্রাম, নাম তার চন্দ্রপুর। ছোট নদী, খালের কলকল ধ্বনি আর পাখির কূজন মিলিয়ে গ্রামটি ছিল যেন এক টুকরো স্বর্গ। সেই গ্রামেরই এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম নেয় রহিম নামের এক ছেলে। রহিম ছিল পরিবারের একমাত্র সন্তান। তার বাবা সারাদিন মাঠে কাজ করতেন, মা গৃহস্থালির কাজে ব্যস্ত থাকতেন। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত, তবুও তারা ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার স্বপ্ন দেখতেন।

রহিম ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভীষণ মনোযোগী ছিল। মাটির ঘরে টিমটিমে কেরোসিনের আলোয় বসে সে বই পড়ত। অনেক সময় খাতা-কলম কেনার টাকাও জুটত না, তবুও সে হাল ছাড়ত না। ভাঙা পেন্সিলের টুকরো দিয়েই সে লিখে যেত। শিক্ষকরা বলতেন, “এই ছেলেটি একদিন অনেক বড় হবে।”

তবে গ্রামের অনেকেই তাকে নিয়ে ঠাট্টা করত। তারা বলত, “এত পড়াশোনা করে কী হবে? শেষে তো বাবার মতো ক্ষেতেই কাজ করতে হবে।” কিন্তু রহিম কখনো তাদের কথায় কান দিত না। তার বিশ্বাস ছিল—শিক্ষাই তাকে নতুন পথে নিয়ে যাবে।

একদিন গ্রামের স্কুলে এক প্রতিযোগিতা হলো। বিষয় ছিল—“আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ।” রহিম সেই রচনায় নিজের মনের কথা লিখল। সে লিখল, একদিন সে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। গ্রামের গরিব মানুষ যারা টাকা না থাকায় চিকিৎসা পায় না, তাদের সে বিনা মূল্যে সেবা দেবে। রচনা পড়ে শিক্ষকরা অবাক হয়ে গেলেন। তারা অনুভব করলেন, ছেলেটির স্বপ্ন শুধু নিজের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য।

কিন্তু পথ সহজ ছিল না। অষ্টম শ্রেণি পেরোনোর পর বাবার পক্ষে পড়াশোনার খরচ জোগানো কঠিন হয়ে পড়ল। পরিবারে নিত্য অভাব। অনেক সময় রাতের খাবারও ঠিকমতো জুটত না। বাবা চাইলেন, রহিম যেন পড়াশোনা ছেড়ে কাজে লেগে যায়। কিন্তু রহিম অনড়—সে পড়াশোনা ছাড়বে না। অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিল, সকালে ও বিকেলে টিউশন পড়িয়ে যা আয় হবে, তা দিয়েই নিজের পড়াশোনার খরচ চালাবে।

এভাবেই কঠোর পরিশ্রম আর সংগ্রামের মাধ্যমে রহিম স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিল। ফলাফল বের হওয়ার দিন স্কুলের মাঠে সবার ভিড় জমল। রহিম যখন শুনল সে জিপিএ-৫ পেয়েছে, তখন তার চোখে আনন্দের অশ্রু ঝরল। বাবা-মাও গর্বে ভরে উঠলেন। যাদের একসময় ঠাট্টা করত তারা এসে এখন অভিনন্দন জানাচ্ছিল।

এরপর রহিম কলেজে ভর্তি হলো। কলেজ জীবনে এসে সে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে লাগল। দিনে ক্লাস, রাতে পড়াশোনা, আর ফাঁকে ফাঁকে টিউশনি—এভাবেই চলছিল তার জীবন। অনেক সময় বন্ধুদের মতো সে ঘুরতে যেত না, নতুন জামা-কাপড়ও কিনতে পারত না। কিন্তু স্বপ্নের পথে চলতে গিয়ে এসব তার

Like
Comment
Share
Md Sazzadur Rahman
Md Sazzadur Rahman
15 w ·Translate

গল্প: হারানো দীপ্তি

বাংলাদেশের একটি ছোট্ট গ্রামে থাকত আয়ান নামে এক কিশোর। বয়স তার মাত্র চৌদ্দ বছর। ছোটবেলা থেকেই সে পড়াশোনায় ভালো ছিল, বিশেষ করে গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি তার ছিল অন্যরকম টান। কিন্তু তার জীবনটা ছিল সংগ্রামের—কারণ তার বাবা ছিলেন একজন দিনমজুর আর মা গ্রামের মহিলাদের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন।

আয়ান যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তখন থেকেই সে বুঝতে শুরু করে যে দারিদ্র্য তার জীবনের সবচেয়ে বড় বাধা। অনেক সময় স্কুলে যাওয়ার মতো খরচও জোগাড় করা যেত না। বই-খাতা কেনার টাকা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু আয়ান স্বপ্ন দেখতে জানত। সে প্রায়ই রাতে আকাশের তারাগুলো দেখে বলত, “একদিন আমি বিজ্ঞানী হবো, মানুষের জন্য কিছু আবিষ্কার করবো।”

সংগ্রামমুখর দিনগুলো

গ্রামের স্কুলটি ছিল খুবই সাধারণ। শিক্ষকরা আন্তরিক হলেও সুযোগ-সুবিধা একেবারেই কম। বইয়ের পাতা ছেঁড়া, বেঞ্চ ভাঙা—এসব নিয়েই পড়াশোনা চলত। তবুও আয়ান সবসময় প্রথম হতো। শিক্ষকরা তাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। একদিন গণিতের শিক্ষক তাকে বললেন,

— “আয়ান, তুমি যদি মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাও, একদিন অনেক বড় কিছু করতে পারবে।”

এই কথাগুলো আয়ানের মনে আগুন জ্বালিয়ে দিল। তবে বাস্তবের কষ্টগুলো তাকে প্রায়ই দমিয়ে দিত। একদিন স্কুল থেকে ফিরে সে দেখল তার মা অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। ওষুধ কেনার টাকা নেই। বাবার হাতে সামান্য কিছু টাকা, কিন্তু তা দিয়ে সংসারের বাজারই হয় না।

সেদিন রাতে আয়ান অনেক কেঁদেছিল। ভেবেছিল, পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু মায়ের কণ্ঠে ভরাট আশা শুনে সে থেমে গেল। মা তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

— “বাবা, আমরা হয়তো কষ্টে আছি, কিন্তু তুই পড়াশোনা ছাড়বি না। তুই একদিন সফল হবে—আমার এ বিশ্বাস আছে।”

এই কথাই আয়ানকে নতুন করে জেদী করল।

অপ্রত্যাশিত সুযোগ

একদিন স্কুলে বিজ্ঞান মেলার আয়োজন হলো। প্রতিটি ছাত্রকে একটি করে প্রকল্প বানাতে বলা হলো। আয়ানের হাতে টাকা না থাকলেও সে হাল ছাড়ল না। আশেপাশের ভাঙারি দোকান থেকে পুরনো ব্যাটারি, ভাঙা তার, বাতি কুড়িয়ে আনল। কয়েক রাত না ঘুমিয়ে সে বানাল একটি ছোট্ট বিদ্যুতের প্রজেক্ট—যেখানে ব্যাটারির সাহায্যে একটি বাতি জ্বলে ওঠে।

মেলার দিন যখন তার প্রজেক্ট প্রদর্শিত হলো, সবাই বিস্মিত হয়ে গেল। অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না, এত সামান্য উপকরণ দিয়ে এমন কিছু তৈরি করা সম্ভব! সেই মেলায় জেলা পর্যায়ের একজন শিক্ষা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তিনি আয়ানকে ডেকে বললেন,

— “তুমি সত্যিই অসাধারণ ছেলে। তোমার মধ্যে বড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”

তিনি আয়ানকে একটি স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে দিলেন।

নতুন দিগন্তে যাত্রা

স্কলারশিপের টাকায় আয়ানের পড়াশোনার কিছুটা সুরাহা হলো। বই-খাতা কেনা সহজ হলো, স্কুলে যাওয়া আর বন্ধ থাকল না। সে আরও মন দিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করল। ধীরে ধীরে তার প্রতিভা সবার চোখে ধরা পড়তে লাগল।

তবে গ্রামে ঈর্ষাও বাড়তে লাগল। কিছু লোক বলত, “দিনমজুরের ছেলে কি আর বিজ্ঞানী হবে? এসব স্বপ্ন কেবল ধনীদের জন্য।”
কিন্তু আয়ান এসব কথায় কর্ণপাত করত না। সে জানত, মানুষের ঈর্ষা তার পথের কাঁটা, কিন্তু সে হাল ছাড়বে না।

চূড়ান্ত পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জ

এসএসসি পরীক্ষার সময় কাছাকাছি এলো। পড়াশোনার চাপ বাড়ল। হঠাৎ তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সংসারের বোঝা আরও বেড়ে গেল। আয়ান পড়াশোনার পাশাপাশি রাতে একটি দোকানে কাজ করতে শুরু করল। দিনে স্কুল, রাতে কাজ—তবুও সে পড়াশোনা থামাল না।

ক্লান্ত শরীর নিয়ে যখন সে রাত জেগে বই পড়ত, তখন মনে হতো, হয়তো সে পারবে না। কিন্তু মায়ের অনুপ্রেরণা আর নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাকে চালিয়ে নিল।

ফলাফল প্রকাশের দিন, পুরো গ্রাম অবাক হয়ে দেখল—আয়ান জেলায় প্রথম হয়েছে! তার ছবি সংবাদপত্রেও ছাপা হলো। গ্রামবাসী তখন গর্বে বলল, “আমাদের গ্রাম থেকে একজন বড় মেধাবী বের হলো।”

শহরে নতুন জীবন

এসএসসি-র পর আয়ান ঢাকা শহরের একটি নামকরা কলেজে ভর্তি হলো। প্রথমবার গ্রামের বাইরে এসে সে এক নতুন জগৎ দেখল। বিশাল শহর, উঁচু দালান, উন্নত ল্যাব—সবকিছু তার চোখে নতুন ছিল। তবে এখানে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। সবাই মেধাবী, সবাই স্বপ্ন দেখে বড় কিছু হওয়ার।

আয়ান প্রথমদিকে ভয় পেয়ে গিয়েছিল, কিন্তু শিগগিরই বুঝল—পরিশ্রমই তাকে আলাদা করে তুলবে। প্রতিদিন লাইব্রেরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে বই পড়ত, ল্যাবে পরীক্ষা করত। শিক্ষকরা তাকে ভালোবাসতেন, সহপাঠীরা সম্মান করত।

কিন্তু দারিদ্র্যের ছায়া এখনো তাকে তাড়া করত। অনেক সময় টিফিন খাওয়ার টাকা থাকত না। বন্ধুদের লুকিয়ে শুধু পানি খেয়ে কাটিয়ে দিত। তবুও সে নিজের স্বপ্ন আঁকড়ে ধরল।

বড় স্বপ্নের পথে

সময়ের সাথে সাথে আয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো—ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ পেল। সেখানে গিয়ে তার প্রতিভা আরও বিকশিত হলো। সে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উপর গবেষণা শুরু করল। তার স্বপ্ন ছিল, গ্রামের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় সস্তায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া।

বছরের পর বছর কঠোর পরিশ্রমের পর আয়ান একটি বিশেষ সোলার সিস্টেম আবিষ্কার করল। যা খুব কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। তার এই আবিষ্কার গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হলো—এবং ফলাফল ছিল আশ্চর্যজনক। অন্ধকারে ডুবে থাকা গ্রামগুলো আলোয় ভরে উঠল।

গ্রামের মানুষ যারা একসময় তাকে নিয়ে ঠাট্টা করত, তারাই এখন তাকে শ্রদ্ধা করে। তার বাবা-মায়ের চোখ ভরে ওঠে আনন্দের অশ্রুতে।

উপসংহার

আয়ান বুঝেছিল, দারিদ্র্য কিংবা কষ্ট কোনোদিনই মানুষের স্বপ্নকে থামাতে পারে না—যদি তার ভেতরে অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকে। আজ সে কেবল নিজের পরিবার নয়, পুরো দেশের জন্য গর্বের প্রতীক।

তার জীবনের মূল শিক্ষা হলো—
👉 কষ্ট যতই আসুক, হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
👉 দারিদ্র্য স্বপ্নকে মুছে দিতে পারে না।
👉 জ্ঞান আর পরিশ্রমই মানুষকে সত্যিকার অর্থে দীপ্ত করে তোল

Like
Comment
Share
Md Sazzadur Rahman
Md Sazzadur Rahman
15 w ·Translate

স্বপ্নপথের যাত্রী

গ্রামের নাম ছিল কল্যাণপুর। ছোট্ট, সবুজে ঘেরা, নদীর ধারে গড়ে ওঠা শান্ত একটি গ্রাম। এখানে বসবাস করত তামিম নামের এক কিশোর। বয়স তার মাত্র পনেরো, কিন্তু তার চোখে মুখে ছিল অদ্ভুত এক দীপ্তি। গ্রামের অন্যান্য ছেলেরা যখন খেলাধুলায়, মাছ ধরায় কিংবা গরু চরাতে ব্যস্ত থাকত, তখন তামিম বইয়ের পাতায় ডুবে থাকত।

গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল, কিন্তু মাধ্যমিক পড়াশোনার জন্য ছেলেমেয়েদের তিন কিলোমিটার দূরের শহরে যেতে হতো। তামিমের বাবা করিম মিয়া ছিলেন একজন দরিদ্র কৃষক। মাঠে খেটে কোনো রকমে সংসার চালাতেন। মা আমেনা খাতুন সংসারের কাজ সামলাতেন। পরিবারের অবস্থা এমন ছিল যে, প্রতিদিন দুই বেলা খেতে পেলেই তারা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করত।

কিন্তু তামিম ছিল অন্যরকম। দারিদ্র্যের অন্ধকারে থেকেও সে স্বপ্ন দেখত আলোর। তার বিশ্বাস ছিল—একদিন সে পড়াশোনা করে গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবে। শিক্ষক হতে চাইত সে।

সংগ্রামের শুরু

প্রতিদিন ভোরে তামিম উঠত। একদিকে বাবাকে জমিতে সাহায্য করা, অন্যদিকে নিজের পড়াশোনা—দুই দায়িত্ব একসাথে সামলাত। স্কুলে যেতে হলে তাকে হাঁটতে হতো তিন কিলোমিটার। কখনো পায়ে জুতো থাকত, কখনো খালি পায়ে। বর্ষাকালে কাদা মাড়িয়ে স্কুলে যেতেও সে দমে যেত না।

তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল বই আর খাতার অভাব। অনেক সময় সহপাঠীরা পুরনো বই দিয়ে দিত, আর খাতার জায়গায় তামিম ব্যবহার করত পাকা কাগজের টুকরো। স্কুলের শিক্ষকরা তার মেধা দেখে অবাক হতেন।

ঝড়ের রাত

এক বছর বর্ষাকালে গ্রামে ভয়াবহ বন্যা হলো। নদীর পানি গ্রাম ভাসিয়ে নিল। করিম মিয়ার ধানক্ষেত ডুবে গেল, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলো। অনেক পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিল। তামিমের পরিবারও কষ্টে পড়ল। খাওয়ার মতো চাল-ডাল প্রায় শেষ হয়ে এল।

সে সময় গ্রামের অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে কাজ করতে বাধ্য হলো। কিন্তু তামিম মনস্থির করল—যা-ই হোক, পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। রাতের বেলা কুপির আলোয় বসে সে পড়াশোনা চালিয়ে গেল।

অপ্রত্যাশিত সাহায্য

তামিমের স্কুলে নতুন প্রধান শিক্ষক এসেছিলেন—রফিকুল স্যার। তিনি তামিমের মেধা লক্ষ্য করে ডেকে বললেন,
—“তুমি খুব মেধাবী ছেলে। কষ্ট কোরো না। আমি তোমাকে পড়াশোনার খরচে সাহায্য করব।”

তামিম বিস্ময়ে তাকিয়ে রইল। এর আগে কেউ তাকে এভাবে উৎসাহ দেয়নি। স্যারের সাহায্যে সে নতুন বই, খাতা আর ইউনিফর্ম পেল। তামিমের পড়াশোনার প্রতি আরও আগ্রহ বেড়ে গেল।

বন্ধুত্ব

তামিমের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল—সাবিহা। সে ছিল পাশের বাড়ির মেয়ে। পড়াশোনায়ও ভালো ছিল। তারা দুজন একসাথে পড়াশোনা করত, স্বপ্ন দেখত। সাবিহার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। তামিম বলত,
—“আমি শিক্ষক হবো, তুমি ডাক্তার হবে। দুজন মিলে গ্রামকে বদলে দেব।”

সাবিহা হেসে বলত,
—“হ্যাঁ, দারিদ্র্য বা কুসংস্কার কিছুই আমাদের থামাতে পারবে না।”

বড় পরীক্ষা

সময়ের স্রোতে এসে পৌঁছাল এসএসসি পরীক্ষার সময়। গ্রামে অনেকের ধারণা ছিল, এত কষ্টের মধ্যে তামিম ভালো রেজাল্ট করতে পারবে না। কিন্তু তামিম দিন-রাত পড়াশোনা চালিয়ে গেল। রফিকুল স্যার প্রায়ই তাকে নিয়ে পড়াতেন।

অবশেষে ফল প্রকাশের দিন এলো। গ্রামে সবাই জড়ো হলো বাজারের নোটিশ বোর্ডের সামনে। তামিম তালিকা দেখে চোখ কচলাল। সে জিপিএ-৫ পেয়েছে! খুশিতে তার চোখ ভিজে গেল। বাবা-মাও অশ্রুসিক্ত চোখে ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।

নতুন পথচলা

এসএসসি’র পর তামিম শহরের কলেজে ভর্তি হলো। সেখানে নতুন পরিবেশ, নতুন চ্যালেঞ্জ। গ্রাম থেকে শহরে যাওয়া, বাসাভাড়া আর খরচ জোগাড় করা সহজ ছিল না। তবে রফিকুল স্যার এবং গ্রামের কিছু দানশীল মানুষ মিলে একটি ছোট তহবিল গঠন করলেন তামিমের জন্য।

কলেজে গিয়ে তামিম আরও একনিষ্ঠ হয়ে পড়াশোনায় মন দিল। পাশাপাশি সে দরিদ্র ছাত্রদের জন্য কোচিং করিয়ে কিছু টাকা উপার্জন করত। এভাবেই ধীরে ধীরে সে নিজের খরচ চালাতে লাগল।

স্বপ্নপূরণ

বছরের পর বছর সংগ্রামের পর তামিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো বাংলা বিভাগে। গ্রামে এই খবর পৌঁছালে সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। মানুষ বলতে লাগল—“আমাদের গ্রামের ছেলে একদিন বড় মানুষ হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও তামিম ভুলে যায়নি তার গ্রামকে। ছুটির দিনে গ্রামে ফিরে এসে সে ছোটদের পড়াত। সাবিহাও মেডিকেলে ভর্তি হলো। তাদের স্বপ্ন যেন ধীরে ধীরে বাস্তব রূপ নিচ্ছিল।

শিক্ষক তামিম

সময়ের সাথে সাথে তামিম তার পড়াশোনা শেষ করে গ্রামের কাছাকাছি একটি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করল। স্কুলে নতুন জীবন পেল সে। ছোট্ট ছেলেমেয়েদের সে পড়াত, উৎসাহ দিত।

সে সবসময় বলত—
—“স্বপ্ন দেখো, পরিশ্রম করো, আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। কোনো দারিদ্র্যই তোমাদের থামাতে পারবে না।”

গ্রামের মানুষও বুঝতে পারল, শিক্ষা ছাড়া উন্নতি সম্ভব নয়। তামিম ও সাবিহার নেতৃত্বে গ্রামে একটি শিক্ষা আন্দোলন শুরু হলো। মেয়েরা পড়াশোনার সুযোগ পেল, ছেলেরা কুসংস্কার ছেড়ে বইয়ের দিকে মন দিল।

এক নতুন সকাল

বছর দশেক পর কল্যাণপুর বদলে গেল। যেখানে একসময় বাল্যবিবাহ, কুসংস্কার আর অশিক্ষা ছিল, সেখানে এখন শিক্ষা আর জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের প্রান্তরে নতুন স্কুল, লাইব্রেরি তৈরি হয়েছে। আর এই পরিবর্তনের মূল অনুপ্রেরণা ছিলেন তামিম—স্বপ্নপথের যাত্রী।

সে আজও গ্রামের প্রতিটি শিশুকে শিখিয়ে দেয়,
—“অন্ধকার যতই গভীর হোক, শিক্ষা আর জ্ঞানের আলো তা ভেদ করে বেরিয়ে আসবেই।

Like
Comment
Share
Md Sazzadur Rahman
Md Sazzadur Rahman
15 w ·Translate

গল্প: হাফিজের আলো

বাংলাদেশের এক ছোট্ট গ্রাম। সবুজ ধানক্ষেত, কচি গাছপালা, আর দিগন্ত জুড়ে পাখিদের ডাক যেন শান্তির এক অপূর্ব ছবি আঁকত। সেই গ্রামেই জন্ম হয়েছিল এক দরিদ্র ছেলের—নাম তার হাফিজ। ছেলেটির চোখে সবসময় স্বপ্ন ভেসে বেড়াত। কিন্তু সংসারের অভাব-অনটন যেন বারবার তার স্বপ্নকে অন্ধকারে ঢেকে দিত।

হাফিজের বাবা ছিলেন একজন ক্ষুদ্র কৃষক। দিনে মজুরির কাজ আর রাতে জমিতে শ্রম দিয়ে তিনি সংসার চালাতেন। মা ছিলেন গৃহিণী, যিনি ছেলেমেয়েদের জন্য প্রতিদিন দুটো ভাত আর লবণ দিয়েও খুশি থাকতেন। হাফিজ ছিল তিন ভাইবোনের মধ্যে বড়। ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনা শেখানো, তাদের যত্ন নেওয়া, আর বাবাকে কাজে সাহায্য করা—সবকিছু মিলিয়ে তার জীবনে কষ্টের শেষ ছিল না।

তবুও হাফিজের মনে ছিল এক অদম্য জেদ। সে পড়তে চায়, লিখতে চায়, কিছু হতে চায়। গ্রামের স্কুলে শিক্ষক মেহেদী স্যার সবসময় বলতেন,
— “হাফিজ, তোমার মেধা অনেক ভালো। চেষ্টা করলে তুমি অনেক বড় হতে পারবে।”

কিন্তু সমস্যা একটাই—বই-খাতা কেনার মতো টাকা ছিল না। তাই হাফিজ অনেক সময় অন্যের পুরনো খাতা কুড়িয়ে নিয়ে পড়াশোনা করত। গ্রামের লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়ত। কখনও কখনও মাটিতে কাঠি দিয়ে অঙ্ক কষত, আবার কখনও বাতিল কাগজে লেখার চেষ্টা করত।

একদিন স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলো। সবাই অবাক হয়ে দেখল—হাফিজ প্রথম হয়েছে। তার এই সাফল্যে স্যাররা খুব খুশি হলেন। কিন্তু সে খুশি ভাগ করে নিতে বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে যখন দৌড়ে গেল, মা শুধু চোখের জল মুছলেন। কারণ, সামনে নতুন ক্লাসে উঠতে বই কেনার টাকাই ছিল না।

নতুন বাঁক

গ্রামের পাশের বাজারে একটি সাইবার ক্যাফে ছিল। একদিন হাফিজ সেখানে গিয়ে প্রথমবার কম্পিউটার দেখল। মনে হলো, যেন নতুন এক জগৎ খুলে গেল তার চোখের সামনে। সে জানল, এখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর জ্ঞান পাওয়া যায়। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহারের টাকাই তার কাছে ছিল অনেক বড়।

তবুও সে হাল ছাড়ল না। মালিকের কাছে গিয়ে বলল—
— “কাকু, আমি যদি আপনার দোকান পরিষ্কার করি, টেবিল মুছি, কিংবা খাতা সাজাই, তাহলে কি একটু কম্পিউটার ব্যবহার করতে দেবেন?”

কাকু হাসলেন, প্রথমে অবিশ্বাস করলেন, কিন্তু পরে ছেলেটির জেদ দেখে রাজি হয়ে গেলেন।

এভাবেই শুরু হলো হাফিজের নতুন যাত্রা। প্রতিদিন সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেটে পড়াশোনা করত। ইংরেজি শেখার চেষ্টা করত, গণিতের কঠিন সমস্যার সমাধান খুঁজত, বিজ্ঞানের ভিডিও দেখত। ধীরে ধীরে সে গ্রামে অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে উঠল।

সংগ্রাম

কিন্তু অভাব যেন পিছু ছাড়ল না। বাবার অসুস্থতা বেড়ে গেল। সংসারের দায়িত্ব অনেকটা এসে পড়ল হাফিজের কাঁধে। তখনও সে পড়াশোনা ছাড়ল না। দিনে খেতের কাজে বাবাকে সাহায্য করত, রাতে লণ্ঠনের আলোয় বই পড়ত।

বন্ধুরা তাকে মজা করে বলত—
— “হাফিজ, এত পড়াশোনা করে কী হবে? গ্রামে থেকে কৃষকই তো হতে হবে!”

কিন্তু সে শুধু হাসত আর বলত—
— “না, আমি একদিন মানুষের উপকার করব। আলোর পথ দেখাবো।”

বড় সুযোগ

একদিন জেলায় একটি প্রতিযোগিতা হলো—“প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী প্রতিযোগিতা।” হাফিজ নিজের হাতে তৈরি করা ছোট্ট সৌরচালিত বাতি নিয়ে অংশ নিল। এই বাতি সূর্যের আলোতে চার্জ হয়ে রাতে জ্বলে, যাতে বিদ্যুৎ না থাকলেও পড়াশোনা করা যায়।

প্রথমে অনেকে তার কাজকে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু বিচারকরা যখন দেখলেন, গ্রামের সাধারণ উপকরণ দিয়ে তৈরি এই আবিষ্কার আসলেই কার্যকর, তখন সবাই অবাক হয়ে গেল। হাফিজ প্রথম পুরস্কার পেল, আর জেলা শহরের একটি বড় স্কুলে পড়ার সুযোগ পেল বৃত্তিসহ।

শহরে যাত্রা

শহরে গিয়ে প্রথম দিকে হাফিজের খুব কষ্ট হলো। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, আর চারদিকে প্রতিযোগিতা। কিন্তু সে ভেঙে পড়ল না। দিনে ক্লাস করত, রাতে টিউশনি করত। তার স্বপ্ন আরও বড় হলো। সে চায় ইঞ্জিনিয়ার হতে, এমন কিছু তৈরি করতে যেটা মানুষের জীবন বদলে দেবে।

একসময় সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। সেখানেও কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে গেল। তার সৌরচালিত বাতির উন্নত সংস্করণ সে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজেক্ট হিসেবে তৈরি করল। সেটি দিয়ে শুধু বাতিই নয়, মোবাইল চার্জ দেওয়ার ব্যবস্থাও করল।

সাফল্যের আলো

কয়েক বছর পর হাফিজ তার আবিষ্কারের জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেল। সারা দেশের সংবাদপত্রে তার গল্প ছাপা হলো। টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার নেওয়া হলো। গ্রামে যারা একসময় তাকে তুচ্ছ করত, তারাই এখন গর্ব করে বলত—
— “হাফিজ আমাদের গ্রামের ছেলে।”

সবচেয়ে বেশি খুশি হলেন হাফিজের মা। তার চোখে আনন্দাশ্রু, আর ঠোঁটে শুধু একটি দোয়া—
— “আল্লাহ আমার ছেলেকে হেদায়াত দিক, মানুষের উপকারে লাগাক।”

শিক্ষণীয় কথা

হাফিজের গল্প আমাদের শেখায়—

দারিদ্র্য কখনো স্বপ্নকে থামাতে পারে না, যদি মনে জেদ থাকে।

ছোট ছোট সুযোগকে কাজে লাগাতে জানলে বড় সাফল্য আসে।

জ্ঞান অর্জনই জীবনের সত্যিকার আলো।


আজ হাফিজ কেবল নিজের গ্রাম নয়, গোটা দেশের জন্য এক অনুপ্রেরণা।

Like
Comment
Share
Md Sazzadur Rahman
Md Sazzadur Rahman
15 w ·Translate

স্বপ্নবাজ রাহিম

বাংলাদেশের এক ছোট্ট গ্রামে থাকত রাহিম নামের এক কিশোর। বয়স মাত্র বারো, কিন্তু চোখে মুখে ভবিষ্যৎ স্বপ্নের ঝিলিক। রাহিমের পরিবার গরিব। বাবা একজন দিনমজুর, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। প্রতিদিন সকালবেলা খালি পেটে বাবাকে মাঠে কাজে যেতে হয় আর মাকে যেতে হয় পাশের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করতে। রাহিম নিজে গ্রামের স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।

ছোটবেলা থেকেই রাহিম পড়াশোনায় ভীষণ মনোযোগী ছিল। বই পড়তে পড়তে সে ভাবত—"একদিন আমি অনেক বড় মানুষ হব, গ্রামের দুঃখ কষ্ট দূর করব, মা-বাবাকে সুখে রাখব।" কিন্তু বাস্তবতা ছিল বড় কঠিন। স্কুল থেকে ফিরে বন্ধুদের মতো মাঠে খেলতে পারত না সে। মাকে কাজে সাহায্য করতে হতো, কখনো বাজার থেকে জিনিস আনতে, কখনো ছোট বোনকে দেখাশোনা করতে।

তবুও বইয়ের প্রতি তার টান কখনো কমেনি। রাত গভীর হলে, যখন সবাই ঘুমিয়ে যেত, রাহিম কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে পড়তে বসত। আলো কম হলেও তার চোখের ভেতরে জ্বলতে থাকা স্বপ্নের আলো ছিল অনেক বেশি উজ্জ্বল।

শিক্ষকের স্নেহ

রাহিমের স্কুলে একজন শিক্ষক ছিলেন—রফিক স্যার। তিনি রাহিমকে খুব ভালোবাসতেন। কারণ রাহিম ক্লাসে সবসময় মনোযোগ দিয়ে পড়ত, প্রশ্ন করলে উত্তর দিত আর কখনো কখনো এমন প্রশ্ন করত যা স্যারকেও ভাবিয়ে তুলত। একদিন স্যার তাকে ডেকে বললেন,
—"রাহিম, তুমি খুব মেধাবী। পড়াশোনা চালিয়ে গেলে একদিন অনেক বড় হবে। কিন্তু জানি, তোমার পরিবার অভাবের মধ্যে আছে। যদি কখনো টাকার দরকার হয়, নির্দ্বিধায় আমাকে বলবে। আমি যতটুকু পারি সাহায্য করব।"

এই কথায় রাহিমের চোখ ভিজে উঠেছিল। সে ভেবেছিল, “আল্লাহ্‌, এই মানুষটাই হয়তো আমার জীবনে পথপ্রদর্শক হয়ে এসেছেন।”

স্বপ্ন ভাঙার শঙ্কা

একদিন হঠাৎ রাহিমের বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন। কাজ বন্ধ হয়ে গেল। সংসারের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেল। বাড়িতে খাবারের অভাব দেখা দিল। মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন,
—"রাহিম, হয়তো তোমাকে পড়াশোনা ছাড়তে হবে। কাজে নামতে হবে। না হলে সংসার চলবে না।"

রাহিম যেন আকাশ থেকে পড়ে গেল। তার বুকের ভেতরে হাহাকার উঠল। কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারল না। সেদিন রাতে কেরোসিনের কুপি জ্বালিয়ে সে অনেকক্ষণ কেঁদেছিল। ভাবছিল—"আমার স্বপ্ন কি তবে এখানেই শেষ?"

দৃঢ় সংকল্প

পরদিন স্কুলে গিয়ে রাহিম রফিক স্যারকে সব খুলে বলল। স্যার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,
—"শোনো রাহিম, জীবন মানেই লড়াই। তুমি হাল ছাড়বে না। আমি তোমাকে সাহায্য করব। তোমাকে আমি বৃত্তির ফর্ম পূরণ করিয়ে দেব। আর তুমি চাইলে টিউশনি করে কিছু আয় করতে পারবে। এতে পড়াশোনাও চলবে, সংসারের কিছুটা বোঝাও কমবে।"

রাহিমের চোখ জ্বলে উঠল। সে বুঝল—আশা হারানো মানে মৃত্যু। নতুন করে সে লড়াই শুরু করল। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াতে লাগল। অল্প কিছু টাকা আয় হলো, যা দিয়ে সংসারের টানাপোড়েন কিছুটা কমল।

পরিশ্রমের ফল

দিন মাস পেরিয়ে গেল। রাহিম অষ্টম শ্রেণিতে উঠল। স্কুলে পরীক্ষায় সে সবসময় প্রথম হতো। ধীরে ধীরে গ্রামের লোকজনও রাহিমকে চিনতে শুরু করল। সবাই বলত,
—"এই ছেলেটা একদিন বড় হবে, গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করবে।"

একদিন গ্রামে এক অনুষ্ঠান হলো। সেখানে জেলা শহর থেকে কিছু অতিথি এসেছিলেন। রাহিমকে মঞ্চে ডেকে নিয়ে তারা তার পড়াশোনার সাফল্যের কথা শুনলেন। অতিথিদের একজন ছিলেন কলেজের অধ্যাপক। তিনি রাহিমকে দেখে মুগ্ধ হয়ে বললেন,
—"এই ছেলেটার ভেতরে বিরাট সম্ভাবনা আছে। আমরা চাই তাকে শহরে পড়ার সুযোগ দিতে।"

সেদিন থেকেই রাহিমের জীবনে নতুন অধ্যায় শুরু হলো।

শহরে নতুন জীবন

শহরে গিয়ে প্রথমে রাহিম বেশ কষ্টে পড়ল। পরিবেশ নতুন, পড়াশোনার চাপও বেশি। তাছাড়া সংসারের জন্য টিউশনি করে টাকা পাঠাতে হতো। কিন্তু সে হাল ছাড়েনি। দিন রাত পরিশ্রম করে পড়াশোনায় মন দিল।

কলেজে পড়তে পড়তে সে নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিত—বক্তৃতা, প্রবন্ধ, কুইজ। সব জায়গাতেই সে সেরা হতো। শিক্ষকেরা তাকে ভালোবাসতেন, সহপাঠীরা সম্মান করত।

সাফল্যের সিঁড়ি

সময় গড়িয়ে গেল। রাহিম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। তার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কারণ সে দেখেছিল তার বাবা একদিন ওষুধের অভাবে কষ্ট পেয়েছিল। তাই সে ঠিক করল—"আমি এমন ডাক্তার হব, যে শুধু ধনী নয়, গরিব মানুষকেও সেবা দেবে।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে অনেক সংগ্রাম ছিল। কখনো খাওয়া হয়নি, কখনো রাত জেগে কাজ করেছে। কিন্তু মনোবল কখনো ভাঙেনি। অবশেষে ভর্তি পরীক্ষায় সেরা হয়ে মেডিকেলে সুযোগ পেল।

ফিরে আসা

বছরের পর বছর পরিশ্রমের পর রাহিম ডাক্তার হলো। সেদিন তার মা-বাবার চোখে আনন্দাশ্রু ছিল। তারা বললেন—"তুই আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছিস।"

ডাক্তার হয়ে রাহিম প্রথমেই গ্রামের দিকে ফিরল। সেখানে একটি ছোট হাসপাতাল গড়ে তুলল। গরিবদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিত। মানুষ তাকে দোয়া করত। রাহিম মনে মনে বলল—
"আজ আমি যা হয়েছি, সব আমার মায়ের ত্যাগ, বাবার কষ্ট আর শিক্ষকের দিকনির্দেশনার কারণে।"

গল্পের শিক্ষা

জীবনে যতই অভাব-অনটন আসুক, স্বপ্ন যদি দৃঢ় হয় আর পরিশ্রম যদি অবিরত থাকে, তবে কোনো বাধাই মানুষকে থামাতে পারে না। রাহিমের মতো একটি গরিব পরিবারের ছেলে-ও একদিন দেশের গর্ব হতে পারে।

Like
Comment
Share
Load more posts

Unfriend

Are you sure you want to unfriend?

Report this User

Edit Offer

Add tier








Select an image
Delete your tier
Are you sure you want to delete this tier?

Reviews

In order to sell your content and posts, start by creating a few packages. Monetization

Pay By Wallet

Payment Alert

You are about to purchase the items, do you want to proceed?

Request a Refund