আবিরের জীবনটা ঘড়ির কাঁটার মতো চলত—একঘেয়ে, তবুও নির্ভুল। সে একটি ছোট লাইব্রেরিতে কাজ করত, যেখানে বইয়ের পাতার গন্ধ আর ফিসফিস শব্দই ছিল তার সঙ্গী। একদিন, একটা পুরোনো ডেস্কে ঝাড়ামোছার সময় সে একটা চামড়ার বাঁধাই করা ডায়েরি খুঁজে পেল। ডায়েরিটা হাতে নিতেই একটা ঠান্ডা অনুভূতি তার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেল।
ডায়েরিটা একটা সিরিয়াল কিলারের স্বীকারোক্তি ছিল। সে বিশদভাবে বর্ণনা করেছে কীভাবে সে তার শিকারদের খুঁজে বের করত, কীভাবে তাদের উপর নজর রাখত, এবং চূড়ান্ত মুহূর্তে তাদের জীবন কেড়ে নিত। শেষ পাতাটায় তারিখ দেওয়া ছিল, আজকের থেকে মাত্র দু'সপ্তাহ আগের। কিপটে হাতের লেখায় লেখা ছিল: "নিখুঁত কাজ, কিন্তু এর একটা ধারাবাহিকতা থাকা দরকার। পরবর্তী শিকার প্রস্তুত।"
আবির প্রথমে ডায়েরিটাকে ফালতু একটা কাল্পনিক গল্প ভেবে উড়িয়ে দিতে চাইল। কিন্তু পরের দিন সকালে, সে খবরে দেখল ঠিক সেই ধরনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার বর্ণনা ডায়েরিতে দেওয়া আছে। শিকারের নাম, কাজের ধরণ—সবকিছু হুবহু মিলে যাচ্ছে। তার সন্দেহ, ভয় আর আতঙ্ককে ছাপিয়ে উঠল।
রাতে আবির ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলো আবার উল্টালো। সে দেখল, খুনি তার পরবর্তী শিকারের ইঙ্গিত দিয়েছে—একটি ছোট, ঘন চুলওয়ালা মানুষ, যিনি প্রায়ই সন্ধ্যা ৬টায় পার্কে কফি খান। আবির জানত, তাকে কিছু করতে হবে। পুলিশকে বললেও তারা তাকে হয়তো পাগল ভাববে বা পাত্তা দেবে না। প্রমাণ বলতে তো শুধু এই ডায়েরি, যা যে কেউ কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দিতে পারে।
আবির অস্থির হয়ে ডায়েরির মধ্যে একটি ছোট ভাঁজ করা কাগজ দেখতে পেল। সেটাতে শুধু একটা ঠিকানা লেখা ছিল—তার লাইব্রেরি থেকে বেশি দূরে নয়। সে জানত, এই মুহূর্তে পুলিশ বা অন্য কারো অপেক্ষা করা অর্থহীন। তাকে নিজেই ওই ঠিকানায় যেতে হবে। বাইরে তখন রাত গভীর, চারদিক নিস্তব্ধ, আর আবিরের হাতে একটি ডায়েরি, যা ভয়ংকর এক সত্য বহন করছে। সে ঘর থেকে বের হলো, তার হৃদস্পন্দন দ্রুত ধাবমান ট্রেনের মতো শব্দ করছিল।
#-"অন্ধকারের ছায়া"
সূচনা পর্ব