গল্প: অপেক্ষার রং
নন্দিনী আর আরিফ—একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো। প্রথম দিন ক্লাসেই দেখা হয়েছিল তাদের। নন্দিনী ছিল চুপচাপ, বইয়ের পাতায় ডুবে থাকা এক মেয়ে। আর আরিফ? সে ছিল পুরো উল্টো—হাসিখুশি, বন্ধুবান্ধব নিয়ে সবসময় ব্যস্ত।
প্রথম দিকে দু’জনের কথা তেমন হতো না। কিন্তু সময় গড়াতেই, লাইব্রেরির কোনা টেবিলটা তাদের প্রিয় স্থান হয়ে উঠল। নন্দিনীর চোখে গভীর কিছু ছিল, যা আরিফকে টানত। ধীরে ধীরে আরিফ বুঝে গেল, সে এই মেয়েটার জন্য কিছু একটা অনুভব করছে।
একদিন বইয়ের পৃষ্ঠায় গুঁজে রাখা একটা ছোট্ট চিরকুটে আরিফ লিখে দিল, “তোমার চোখে একটা গল্প আছে, আমি কি পড়তে পারি?”
নন্দিনী পড়ে হেসে ফেলেছিল। সেটাই ছিল তাদের প্রথম ‘হ্যাঁ’।
এরপর দিনের পর দিন কেটে গেল—একসাথে ক্যান্টিনে চা খাওয়া, হাঁটতে হাঁটতে বৃষ্টি ভেজা বিকেল, পরীক্ষার আগে একে অপরকে পড়ানো। আরিফ মাঝে মাঝে বলত, “তুমি না আমার পছন্দের অধ্যায়—বারবার পড়তে ইচ্ছা করে।”
তবে জীবনে সব গল্প একেবারে সোজা পথে চলে না।
শেষ বর্ষে হঠাৎ করে নন্দিনীর পরিবার তাকে জানাল, তার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে—একটা ভালো পরিবারে, বাবা-মায়ের পছন্দে। নন্দিনী কিছু বলল না। চোখে জল জমলেও মুখে না বলার সাহস হয়নি।
সেই রাতেই সে আরিফকে চিঠি লিখে জানাল—“আমার চলে যেতে হবে। আমি চেয়েও পারলাম না তোমার পাশে দাঁড়াতে। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অধ্যায়, কিন্তু আমি হয়তো তোমার শেষ পাতায় থাকবো না।”
আরিফ সেই চিঠি পড়ে কিছু বলল না। শুধু একটাই কথা মনে মনে বলল, “আমি অপেক্ষা করব... যত দিন লাগে।”
পাঁচ বছর কেটে গেছে। আরিফ এখন শহরের এক নামকরা স্থপতি। কিন্তু প্রতিদিন সন্ধ্যায় সে এখনো সেই পুরনো বইয়ের দোকানে যায়—যেখানে একদিন নন্দিনীর প্রিয় কবিতার বই কিনেছিল।
একদিন হঠাৎই বইয়ের দোকানে ঢুকল একটা চেনা মুখ—নন্দিনী।
চোখে একই গভীরতা, মুখে হালকা হাসি। আরিফ তাকিয়ে থাকে—নির্বাক।
নন্দিনী এগিয়ে এসে বলল, “তুমি কি এখনো অপেক্ষা করো?”
আরিফ কিছু না বলে একটা পুরনো চিঠি বের করল—যেটা নন্দিনী লিখেছিল পাঁচ বছর আগে।
“তুমি তো বলেছিলে, আমি তোমার শেষ পাতায় থাকবো না,” আরিফ বলল।
নন্দিনী মৃদু হাসল, “তবে কি এবার নতুন অধ্যায় শুরু করা যাবে?”
আরিফ চুপচাপ মাথা নাড়ল।
আর হ্যাঁ, সেই মুহূর্তে তাদের প্রেম যেন নতুন করে শুরু হলো—সময় পেরিয়ে, দূরত্ব পেরিয়ে, দুই হৃদয়ের টান অটুট থেকেছে।
---
শেষ।
আপনি চাইলে এই গল্পের অন্য পরিণতি বা ধারাও পেতে পারেন—বললেই আমি পরিবর্তন করে দিতে পারি।