গল্পের নাম: ছোট্ট পায়রার বড় সাহস

একটি ছোট্ট পায়রা ছিল, নাম তার “সাদা"। সে ছিল খুব দুর্বল ও ভীতু। আকাশে উড়তে গেলেই ভয় পেত—"যদি পড়ে যাই? যদি ঝড় আসে?"—এই ভাবনায় সে গাছের ডালে বসেই দিন কাটাতো।

একদিন আকাশে ঘন কালো মেঘ জমলো। অন্য সব পাখি উড়ে নিরাপদ জায়গায় চলে গেল, কিন্তু সাদা তখনো গাছে। হঠাৎ এক তীব্র ঝড় শুরু হলো। গাছ দুলতে লাগলো, ডাল ভেঙে পড়তে লাগলো।

সাদা বুঝতে পারলো, আর দেরি করলে প্রাণ যাবে। সাহস করে ডানা মেললো। প্রথমে একটু কেঁপে উঠলো, কিন্তু ধীরে ধীরে সে উড়তে শুরু করলো—ঝড়ের মধ্যেই! বাতাসের বিপরীতে লড়াই করে সে উড়ে চললো, যতক্ষণ না সে এক নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে গেল।

সেদিনের পর থেকে সাদা আর ভয় পায় না। সে জানে, সাহস থাকলে দুর্বল পাখিও ঝড়ের মুখে উড়তে পারে।

জীবন কাহিনী: অন্ধ ছেলেটির আলো

নাম তার হাসিব। জন্ম থেকেই চোখে আলো নেই—সে একজন অন্ধ শিশু। গ্রামের মানুষ বলত, “ও তো কিছুই করতে পারবে না।” কেউ কেউ দুঃখ করে বলত, “বেচারার জীবন তো অন্ধকার।”

কিন্তু হাসিব ছিল আলাদা। তার চোখে আলো না থাকলেও মনের ভিতরে ছিল স্বপ্ন, সাহস আর আল্লাহর উপর দৃঢ় ভরসা। সে মায়ের কাছ থেকে কুরআন শেখে, হাত দিয়ে অনুভব করে হরফ, কান দিয়ে শোনে সূরা। ধীরে ধীরে সে হিফজ করে ফেলে পুরো কুরআন।

গ্রামের মসজিদে একদিন কুরআন প্রতিযোগিতা হলো। হাসিবও অংশ নেয়। অনেকে হেসেছিল—"ও তো দেখতেই পায় না!"—কিন্তু প্রতিযোগিতায় হাসিব সবাইকে অবাক করে দিয়ে প্রথম হয়ে যায়।

পরবর্তীতে সে এক ইসলামি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়, ভালো ফলাফল করে আলেম হয়, এবং অন্ধ শিশুদের জন্য একটি বিশেষ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে অন্ধ শিশুরা বিনামূল্যে শিক্ষা পায়, কুরআন শেখে।

গল্প: "আশার আলো"

ছোট্ট একটি গ্রামে থাকত রাহিম নামের এক দরিদ্র ছেলে। বাবা-মা নেই, আত্মীয়স্বজনও কেউ খোঁজ নিত না। গ্রামের মসজিদের ইমামের সহায়তায় কোনো রকমে বেঁচে থাকত সে।

রাহিমের ইচ্ছা ছিল সে বড় হয়ে একজন হাফেজে কোরআন হবে। কিন্তু পেটে খাবার না থাকলে মনোযোগ কোথায়! তবুও সে হাল ছাড়ত না। প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে ইমামের কাছে এক রুকু করে মুখস্থ করত।

একদিন গ্রামের এক বড়লোক রাহিমকে দেখে বলল,
— “এই গরীবের ছেলেটা হাফেজ হবে? অসম্ভব!”

রাহিম কিছু বলল না। শুধু মনে মনে বলল,
— “আমি পারব, কারণ আমার সঙ্গে আছে আল্লাহর সাহায্য।”

দিন, সপ্তাহ, মাস করে কেটে গেল। কয়েক বছর পর রাহিম পুরো কোরআন মুখস্থ করে ফেলল। গ্রামের মানুষ তখন তাকে “হাফেজ সাহেব” বলে সম্বোধন করত। সেই বড়লোক এসে একদিন তার পায়ে হাত দিয়ে বলল,
— “মাফ করিস বাবা, তুই প্রমাণ করে দিয়েছিস, ইচ্ছা আর সাহস থাকলে সব সম্ভব।”

রাহিম তখন মুচকি হেসে বলল,
— “আল্লাহর উপর ভরসা ছিল, আর সে-ই তো যথেষ্ট।”

"জীবন একটি পরীক্ষা, প্রতিটি কষ্ট একটি প্রশ্ন, আর ধৈর্য ও বিশ্বাস সেই প্রশ্নের উত্তরের নাম। মানুষ যখন হার মানে, তখন সে নিজের সীমাবদ্ধতা নয়, নিজের সাহসকেই অস্বীকার করে। তাই কষ্ট যতই হোক, বিশ্বাস রেখো—আল্লাহ সব কিছু দেখছেন, শুনছেন এবং তিনি কখনো তাঁর বান্দার ধৈর্য বৃথা যেতে দেন না। সময় মতো তিনি উত্তম প্রতিদান দেন, যেটা হয়ত তুমি এখন বুঝতে পারছো না, কিন্তু একদিন ঠিকই বুঝবে—তোমার প্রতিটি অশ্রু ছিলো তোমার ভবিষ্যতের ফুল ফোটানোর পানির মতো।"

“পিছনে ফিরে তাকানো মানে সবসময় হারা নয়—মাঝে মাঝে এটা নিজেকে শক্ত করে সামনে এগোনোর প্রস্তুতি।”