অধ্যায় ১: সেই দুপুরটা
পুরানো শহরের লাইব্রেরিটা ছিল একেবারে নিরিবিলি। বাইরে গাড়ির শব্দ, রাস্তার কোলাহল—সব থেমে যেতো যখন ভিতরে ঢোকা হতো। রিমি প্রায়ই আসত এখানে। আজও এসেছে, মনটা ভার। বাবার হঠাৎ অসুস্থতা, পড়াশোনার চাপ, বন্ধুরা যে যার মতো ব্যস্ত—সবকিছু একসাথে যেন ওকে ক্লান্ত করে তুলেছে।
হাত বাড়িয়ে ‘শেষ চিঠি’ নামের একটি বই নিতে গিয়ে পাশ থেকে আরেকজনও একই বইয়ের দিকে হাত বাড়াল।
— “ওটা আমি নেব ভেবেছিলাম।”
রিমি তাকিয়ে দেখল—একটা ছেলে, চোখে শান্ত দৃষ্টি, মুখে নরম হাসি।
— “আগে আমি ধরেছি,” রিমি মৃদু হেসে বলল।
ছেলেটা একটু হেসে বলল, “ঠিক আছে, আপনি নিন। তবে পড়া শেষ হলে ফিরিয়ে দিন, আমি অপেক্ষা করব।”
এই সামান্য কথোপকথন থেকেই শুরু। তার নাম সায়ন। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র, কবিতা লেখে, গান শোনে আর মানুষের চোখ দেখে মনের ভাষা বোঝে বলে দাবি করে।
অধ্যায় ২: শব্দের ফাঁদে
সেই দিন থেকে প্রতি সপ্তাহে দেখা হতে থাকল তাদের লাইব্রেরিতে। কখনো বই নিয়ে, কখনো গল্প নিয়ে, কখনো শুধু চুপচাপ বসে থাকার জন্য। রিমি আবিষ্কার করল, সায়নের চোখে কিছু আছে—যেটা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়।
একদিন সায়ন বলল,
— “তুমি জানো? মানুষ চেহারায় নয়, মায়ায় আটকে যায়।”
রিমি একটু থেমে বলল,
— “তাহলে তুমি আমার মায়ায় আটকে গেছো?”
সায়নের মুখে হালকা হাসি, কিন্তু চোখে একরাশ গম্ভীরতা।
— “হয়তো... অথবা আমি তোমার অভিমানে আটকে গেছি।”
সেই প্রথম রিমির চোখে জল এসেছিল—কোনো কারণ ছাড়াই। কেউ কি সত্যিই তার ভিতরের একাকীত্বটা বুঝে ফেলেছে?
অধ্যায় ৩: কাছের দূরত্ব
সময় গড়াল। তারা কাছাকাছি এলেও, মাঝখানে ছিল না বলা অনেক কিছু। সায়ন হঠাৎ করে কিছুদিন আসা বন্ধ করে দিল লাইব্রেরিতে। ফোন নম্বর ছিল না, সামাজিক মাধ্যমে ছিল না সে—যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।
রিমি প্রতিদিন যেত, বই নিত, বসে থাকত, তারপর ফিরে আসত। কারো সঙ্গে বিশেষ কথা বলত না।
তবে একদিন, একটা চিঠি পেল লাইব্রেরির বইয়ের ভিতর। হাতে লেখা—
> “রিমি,
আমি জানি, না বলে চলে যাওয়া অন্যায়। কিন্তু কিছু সম্পর্ককে সময়ের আগে নাম দেওয়া যায় না।
আমি চলে যাচ্ছি, কিন্তু রেখে যাচ্ছি আমার সবচেয়ে আপন অনুভূতিটা—তোমার জন্য।
—সায়ন”
রিমি বইটা বুকে চেপে ধরে বসে থাকল অনেকক্ষণ।
অধ্যায় ৪: ফিরে দেখা
দু’বছর কেটে গেছে। রিমি এখন একটি কলেজে পড়ায়, সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করেছে। জীবনে স্থিরতা এসেছে, কিন্তু কোথায় যেন কিছু অনুপস্থিত। প্রতিদিন লাইব্রেরির পাশ দিয়ে হেঁটে যায়, কিন্তু ঢোকে না।
একদিন বিকেলে হঠাৎ করেই ঢুকল লাইব্রেরিতে। পুরনো বইয়ের গন্ধ, চেনা চেয়ার, জানলার ধারে সেই টেবিল—সবকিছু ঠিক আগের মতো। আর ঠিক তখনই, টেবিলের অপর পাশে বসে থাকা ছেলেটি মাথা তুলে তাকাল—সায়ন!
এক মুহূর্তে থেমে গেল সময়।
— “রিমি!”
রিমি কোনো কথা বলল না। শুধু চুপচাপ বসে পড়ল, চোখে জল।
সায়ন বলল,
— “আমি ফিরেছি, কারণ এই শহরে তোমার মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া অসম্ভব।”
রিমি আস্তে বলল,
— “এত দেরি কেন করলে?”
সায়ন বলল,
— “ভালোবাসা শিখতে সময় লাগে। আমি শুধু তোমাকে নয়, নিজেকেও খুঁজছিলাম।”
রিমির উত্তর ছিল শুধু একটিই হাসি—যেটা হয়তো মনের গভীর থেকে উঠে এসেছিল।
শেষ অধ্যায়: মায়ার বাঁধন
এখনো তারা একসাথে বই পড়ে, চা খায়, হাঁটে। কোনো প্রেমের চটকদার গল্প নেই তাদের মাঝে, নেই নাটকীয়তা।
শুধু আছে—মায়া।
যে মায়া সৌন্দর্যের নয়, হৃদয়ের।
যে মায়া ভাল
Azim 10x
删除评论
您确定要删除此评论吗?
MD Jihad
删除评论
您确定要删除此评论吗?