মধ্য-মধ্যযুগ এ সময় চৈতন্যদেব বঙ্গদেশে এক নবভক্তি-ধারার প্রবর্তন করেন, যা ভাবচৈতন্যের ক্ষেত্রে রেনেসাঁর সূচনা করে। তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে বাংলায় একটি শক্তিশালী সাহিত্যিকগোষ্ঠী এবং এক বিরাট সাহিত্যধারার সৃষ্টি হয়। এ যুগেই বাংলায় জীবনচরিত লেখার প্রচলন হয় এবং প্রধানত চৈতন্যদেবের জীবনকে কেন্দ্র করে জীবনীগ্রন্থগুলি রচিত হয়। এ ধরনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো: বৃন্দাবনদাসের চৈতন্যভাগবত (১৫৭৩), জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল (১৬শ শতকের শেষভাগ), লোচনদাসের (১৫২৩-১৫৮৯) চৈতন্যমঙ্গল এবং কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত (১৬১৫)। এগুলি ছাড়া আরও কিছু উল্লেখ করার মতো চৈতন্য-সংশ্লিষ্ট জীবনীকাব্য হচ্ছে নরহরি চক্রবর্তীর ভক্তিরত্নাকর (চৈতন্যদেবের পার্ষদ-ভক্তদের জীবনী), নিত্যানন্দ দাসের প্রেমবিলাস (শ্রীনিবাস, নরোত্তম ও শ্যামানন্দের জীবনী এবং তাঁদের ধর্মমত প্রচারের কথা) ও ঈশান নাগরের অদ্বৈতপ্রকাশ (১৫৬৮-৬৯)। এগুলির মধ্যে চৈতন্যচরিতামৃতকে চৈতন্যদেবের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনীগ্রন্থ মনে করা হয়। পান্ডিত্যপূর্ণ এ গ্রন্থে একাধারে জীবনচরিত, দার্শনিক তত্ত্ব ও ভক্তিতত্ত্ব চমৎকারভাবে বিবৃত হয়েছে। জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল বেশকিছু ঐতিহাসিক তথ্যসমৃদ্ধ।