জুতার বাক্স আর রাজকুমারের জেদ
এক রাজ্যে ছিল এক অদ্ভুত রাজকুমার, নাম তার আদিল। রাজ্যের সব কিছু ছিল তার পছন্দমতো, কিন্তু তার ছিল এক অদ্ভুত জেদ—সে কারো তৈরি করা জুতা পায়ে দিত না। বলত, “আমার জন্য এমন জুতা চাই, যা কখনো ছিঁড়বে না, আর মাটিতে ধুলা লাগবে না।”
রাজা-রানী বিরক্ত হয়ে গেলেন। রাজ্যের সেরা মোচিরা আসতে লাগল, রাজকুমারের পা মেপে জুতা বানালো, কিন্তু সে একটাও পছন্দ করলো না। বলল, “এগুলো খুব সাধারণ!”
একদিন দরবারে হাজির হলো এক বয়স্ক মোচি, তার হাতে একটা পুরনো জুতার বাক্স। রাজকুমার কটমট করে তাকাল। মোচি নম্র গলায় বললো, “মহারাজ, জুতা তো সবাই বানায়। কিন্তু আপনি যদি সত্যি এমন জুতা চান, যা কখনো ছিঁড়বে না আর মাটি লাগবে না, তাহলে আপনাকে প্রথমে একটি কাজ করতে হবে।”
রাজকুমার অবাক, “কী কাজ?”
মোচি বললো, “আপনাকে পুরো রাজ্যে ঘুরে ঘুরে হাঁটতে হবে খালি পায়ে, যতক্ষণ না আপনি এমন একটি পথ খুঁজে পান যেখানে ধুলা নেই, কাঁকর নেই, আর হোঁচট নেই। তারপর আমি আপনার জন্য জুতা বানাবো।”
রাজকুমার জেদ ধরে বেরিয়ে পড়লো। এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে, জঙ্গল, পাহাড়—সে হাঁটতেই থাকলো। পায়ে কাঁটা ফুটলো, রক্ত পড়লো, পা ফুলে উঠলো। অবশেষে এক বৃদ্ধ তাকে বললো, “প্রভু, আপনি যদি চায়েন মাটিতে ধুলা না লাগুক, তাহলে আপনি পুরো রাজ্য নয়, শুধু আপনার পায়ের নিচে চামড়া বিছান।”
রাজকুমার বুঝে গেল—জুতা তো আসলে নিজের পায়ের সুরক্ষা, বাইরে বদলানো নয়, নিজের দৃষ্টিভঙ্গিই আসল।
সে ফিরে এসে মোচিকে বললো, “তুমি জিতে গেছো। এখন আমি জানি, জেদ নয়, বোধই বড়।”
মোচি হেসে সেই পুরনো বাক্স থেকে একজোড়া সাধারণ চামড়ার জুতা বের করলো—আর রাজকুমার আনন্দে পায়ে গলিয়ে নিল।
এই কিস্সা শেখায়—জগৎ বদলাতে চাইলে আগে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাও।
#sifat10