9 C ·Traduzir

খুপরি বাড়ি আর জেদি জমিদার

অনেক আগের কথা। এক গ্রামে ছিল এক বড়লোক জমিদার, নাম তার গাজী সাহেব। তার ছিল এক অদ্ভুত শখ—সে চায়, গ্রামের সব ঘর তার দেওয়া নিয়মে হবে। কারো ঘরের দরজা বড় হবে না, দেয়ালে রঙ চলবে না, আর কারো ছাদ বাঁকানো হলে তো সর্বনাশ!

গ্রামের লোকজন মুখ বুজে সব মানতো, কারণ জমিদারের রোষ মানে জরিমানা, কখনো আবার বাড়ি ভাঙা।

কিন্তু একদিন সেই গ্রামে এলো এক গরিব কাঠুরে, নাম তার মাজেদ। জমি কিনে ছোট্ট একটা খুপরি ঘর বানাল, ছাদ বাঁকানো, দরজা ট্যারা, জানালা হেলে।

জমিদার রেগে আগুন! খবর পাঠালো—“ঘর ভাঙো! এই বাড়ি আমার নিয়ম ভাঙে!”

মাজেদ মাথা নোয়াল না। বললো, “এই ঘরে আমার ঘুম হয়, বৃষ্টি পড়লে গান গায় ছাদ, রোদের আলো ঢোকে হেলে জানালা দিয়ে। নিয়ম যদি মানুষের জন্য হয়, তবে আমার খুপরি ঘর তার চেয়ে ভালো কোনো নিয়ম মানে না।”

জমিদার গোঁ ধরে থাকলো, তবে গ্রামে গুঞ্জন শুরু হলো। একদিন, গ্রামের এক শিক্ষক এসে বললেন, “গাজী সাহেব, আপনি নিয়ম তৈরি করেছেন ঠিক, কিন্তু যদি সে নিয়ম মানুষের শান্তি না আনে, তবে তা কি সত্যিই নিয়ম?”

জমিদার চুপ হয়ে গেলো। রাতে সে নিজেই গোপনে খুপরি বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে রইল। ভেতর থেকে শোনা গেলো মাজেদের ছেলের হাসি, স্ত্রীর গান, আর সেই বাঁকানো ছাদে বৃষ্টির টুপটাপ।

পরদিন জমিদার ঘোষণা করলো, “প্রত্যেক ঘর নিজের মতো হবে। শান্তি যেখানে, সেখানেই সত্য।”

মাজেদের খুপরি বাড়ি থাকলো অক্ষত। আর সেই দিন থেকে, গ্রামের মানুষ বুঝলো—ঘর যেমনই হোক, মনটা থাকলে বাড়ি হয় আপন।

এই কিস্সা শেখায়—শাসন নয়, সহানুভূতি দিয়ে গড়ে উঠে সত্যিকারের সমাজ।

#sifat10