9 में ·अनुवाद करना

হাফ প্যান্ট

রবিন তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে। ঢাকার উপকণ্ঠে ছোট্ট এক গ্রামে তার বাড়ি। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই, মা একাই রিকশা গ্যারেজে ঝিয়ের কাজ করেন। এক সেট স্কুল ড্রেসই সারা বছরের ভরসা। গায়ে পুরনো, ফাটা হাফ প্যান্ট, সেলাই করা জামা। স্কুলে ঢুকতেই হাসির রোল পড়ে যায়—“হাফ প্যান্ট ছিঁড়ে গেছে!”, “দেখো ভিখিরি!”
রবিন কিছু বলে না। সোজা বেঞ্চিতে গিয়ে বসে। ক্লাসে মন দেয়, কারণ সে জানে—এই পড়াশোনাই তার একমাত্র উপায় পালাবার।

বাড়িতে ফিরে মাকে পায় রান্না ঘরে। মা চুপচাপ বসে, চোখের কোণে জল। “তোর জন্য একটা প্যান্ট কিনতে পারলাম না রে রবিন...”
রবিন মাকে জড়িয়ে ধরে, “প্যান্ট দিয়ে কী হবে মা, আমি একদিন অনেক বড় হবো, তখন তোকে অনেক নতুন শাড়ি কিনে দেব!”

এরপর কেটে যায় বছর দশেক। রবিন এখন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার। পরিপাটি পোশাক, গাড়ি, অফিস। তবে মনটা এখনও সেই পুরনো গ্রামের ছেলেটাই।

একদিন অফিসে নতুন এক ইন্টার্ন যোগ দেয়—রাফি। গায়ে ঢিলেঢালা জামা, পুরনো ব্যাগ, মুখে সঙ্কোচ। সহকর্মীরা ফিসফিস করে, কেউ কেউ ঠাট্টাও করে।
রবিন পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, তার কাঁধে হাত রেখে বলে, “এই চেয়ারে বসো। এখানে কাউকে ছোট করে দেখা হয় না।”

রাফির চোখে জল আসে। কেউ জীবনে এই প্রথম তাকে গুরুত্ব দিল।
সেদিন বাসায় ফিরে রবিন আলমারি খুলে বের করলো সেই পুরনো হাফ প্যান্টটা। এখনো সযত্নে রাখা।
সে প্যান্টটা বুকের কাছে চেপে ধরে, আয়নায় তাকিয়ে নিজেকেই বলে—“আমি কথা রেখেছি মা।”


#sifat10