9 में ·अनुवाद करना

ভাঙা ঘড়ি

মফস্বল শহরের একটা নির্জন রাস্তার পাশে একটা ছোট দোকান। সেখানে পুরনো ঘড়ি বিক্রি হয়, আর তাদের মেরামতও করা হয়। দোকানের মালিক মিঞা সাহেব, বয়স সত্তরের কাছাকাছি। ছোট্ট এই ঘড়ির দোকানটাই তার জীবন।

প্রতিদিন বিকেলে তিনি নিজের কাঠের চেয়ারে বসেন, আর পুরনো ঘড়িগুলোর মধ্যে চোখ বুলিয়ে যান। কোনটা চলেনা, কোনটার কাঁটা থেমে আছে বহু বছর ধরে, কিন্তু তবুও তিনি সেগুলো সাজিয়ে রাখেন যেন এরা তার আপনজন।

একদিন দুপুরবেলা এক যুবক দোকানে ঢোকে। চোখে সানগ্লাস, কানে হেডফোন, হাতে স্মার্টফোন। চারপাশে তাকিয়ে বলে, “এইসব ঘড়ি বিক্রি করেন? এগুলো তো এখন কেউ নেয় না!”
মিঞা সাহেব হেসে বলেন, “এই ঘড়িগুলো সময়ের চেয়ে বড় কিছু মনে রাখে।”

ছেলেটি হেসে উঠে, “সময় মানেই তো এগিয়ে চলা! আপনার ঘড়িগুলো তো থেমে আছে।”
মিঞা সাহেব আলনা থেকে একটা ছোট্ট গোল ঘড়ি নামান। কাঁচে ধুলো জমা, কাঁটা নড়ছে না। তিনি বলেন, “এই ঘড়িটা আমার স্ত্রীর দেওয়া। বিয়ের দিন উপহার পেয়েছিলাম। ওর মৃত্যুর দিনও এটা হাতে ছিল আমার। সময় থেমে গেলেও স্মৃতি থামে না বাবা।”

ছেলেটি একটু থেমে যায়। এমন গভীর কথা তার কানে খুব একটা পড়ে না। তবু সে মৃদু কৌতূহলে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি এখনো সময় দেখেন এটা দেখে?”
“না, সময় তো এখন ফোনেই দেখা যায়। কিন্তু এই ঘড়িটা আমাকে বলে—ও আমাকে কখন ভালোবেসেছিল, কখন প্রথম চুমু খেয়েছিল, কখন একসাথে হাত ধরে হাঁটতাম। এই থেমে যাওয়া কাঁটা আমার কাছে জীবনের সবচেয়ে চলমান সময়।”

বলে ঘড়িটা বুকের কাছে চেপে ধরেন তিনি। চোখের কোণে একটু জল ঝলমল করে।

ছেলেটি আর কিছু না বলে দোকান থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুদূর গিয়ে হেডফোনটা খুলে, ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। তার মনেও কেমন যেন একটা নীরব বাজনা বেজে ওঠে—ভাঙা ঘড়ির শব্দে।


#sifat10