9 w ·Tradurre

চিঠি

রুহুল হোসেন একসময় ছিলেন ডাকপিয়ন। তিন দশক ধরে গ্রামে গ্রামে হেঁটে চিঠি বিলি করেছেন। এখন বয়স হয়েছে, হাঁটতে কষ্ট হয়, চোখও ঝাপসা। চাকরি নেই, কিন্তু অভ্যাস যায় না—প্রতিদিন সকালে তিনি উঠে পুরনো ব্যাগটা ঘাড়ে নিয়ে দরজার পাশে বসেন, যেন আজও কেউ ডাকবে—"চাচা, আমার চিঠি আইছে?"

একদিন দুপুরে গ্রামের এক ছেলে, নাম রাকিব, শহর থেকে বেড়াতে এসেছে। সে মোবাইল, ই-মেইল, চ্যাটেই অভ্যস্ত। ডাকঘর তার কাছে একরকম জাদুঘরের মতো। রাকিব যখন দেখে রুহুল চাচা চিঠির ব্যাগ নিয়ে বসে আছেন, সে মজা করে বলে, “চাচা, এখন তো কেউ চিঠি লেখে না। এই ব্যাগটা নিয়ে কী করেন?”
রুহুল চাচা হাসেন, “এই ব্যাগে সময় থাকে বাবা। অনেক কান্না, ভালোবাসা, আশার গল্প... সব জমা থাকে এইখানে।”

রাকিব অবাক হয়ে চুপ করে যায়। বিকেলে তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়। সে রাতে একটা চিঠি লেখে—
“প্রিয় রুহুল চাচা,
আপনার গল্প শুনে মনে হলো, চিঠি লেখা আসলে হারিয়ে যাওয়া এক রকম মায়া। আমি আবার সেই মায়ার ছোঁয়া পেতে চাই।
ভালোবাসা নিও। — রাকিব।”

পরদিন সকালে রাকিব চিঠিটা লাল খামে ভরে, চুপিচুপি রুহুল চাচার দরজার নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দেয়।
রুহুল চাচা চিঠিটা দেখে কাঁপা হাতে খামটা ছিঁড়ে পড়েন। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝরে। বহু বছর পর কেউ তাকে চিঠি পাঠালো।

তিনি সেই চিঠি বুকের কাছে চেপে ধরেন। পরদিন সকালে, গ্রামের একমাত্র চায়ের দোকানে গিয়ে গর্ব করে বলেন, “কাল আবার চিঠি আইছিল আমার নামে! এখনো মানুষ মনে রাখে আমায়!”

চায়ের দোকানের লোকজন অবাক হয়ে চুপ করে যায়। কেউ কিছু বলে না, কিন্তু তাদের চোখে একটা হাসি খেলে যায়—একজন বৃদ্ধ ডাকপিয়নের খুশির দাম হয় না।

#sifat10