9 di ·Menerjemahkan

খেলার পুতুল

নিশা ছোটবেলা থেকেই পুতুল খেলতে ভালোবাসতো। তবে তার পুতুলগুলো সবই ছেঁড়া-ফাটা, রাস্তার ধারে পাওয়া কিংবা পুরনো দোকান থেকে কেনা। মা কাজের বুয়া, বাবা কখনো ছিলই না। গরিব ঘরের মেয়ের পুতুল কেনার স্বপ্ন ছিল বিলাসিতা।

একদিন স্কুলের এক বন্ধুর জন্মদিনে নিশা যায়। উপহার কিনে দেয়ার সামর্থ্য ছিল না, তাই সে একটা পুরনো পুতুল পরিষ্কার করে কাগজে মুড়ে নিয়ে যায়। ওখানে গিয়ে দেখে—জাঁকজমক পার্টি, খেলনা-গিফট, কেক, বেলুনে ভরা রাজকীয় আয়োজন। কিন্তু হঠাৎ তার সেই পুতুল দেখে সবাই হাসতে শুরু করে—“এইটা কী? ভিখারির উপহার?”
নিশা অপমান সয়ে মুখ নিচু করে বেরিয়ে আসে। পুতুলটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় ডাস্টবিনে।

এরপর থেকে নিশা আর পুতুলে হাত দেয়নি। এমনকি নিজের স্বপ্ন, ভালোবাসাও একে একে ভেঙে ফেলতে শুরু করে।

বছর দশেক পর—নিশা এখন সফল এক খেলনা ডিজাইনার। নিজেই বানায় পুতুল, খেলনা, ছোটদের ঘরের সাজ। তার কোম্পানির নাম—“নিশার পুতুল”। এখনো দেশের নানা জায়গা থেকে চিঠি আসে—“আপনার বানানো খেলনা আমার মেয়েকে হাসিয়েছে”, “বছরের পর বছর পর একটা পুতুল তাকে কথা বলা শিখিয়েছে।”

একদিন তার কোম্পানিতে এক মহিলা চাকরির আবেদন নিয়ে আসে—চোখে চশমা, মুখে চিন্তার রেখা। নিশা ফাইল দেখে চিনতে পারে—এই সেই মেয়েটি, যার জন্মদিনে অপমান সয়ে পুতুলটা ফেলে দিয়েছিল সে।

মেয়েটি কাঁপা গলায় বলে, “আপনার বানানো খেলনাগুলো আমার মেয়ের খুব প্রিয়। আমি এখানে একটা ছোট কাজ চাই...”

নিশা একটু হেসে বলে, “আপনার মেয়ে নিশ্চয় অনেক পুতুল পায়?”
“হ্যাঁ,” মহিলা বলে, “কিন্তু ও বলে—এই পুতুলগুলোতে প্রাণ আছে। আগেরগুলো শুধু খেলনা ছিল।”

নিশা চুপ করে যায়। তারপর নিজের ডেস্ক থেকে একটা সুন্দর পুতুল তুলে বলে, “এটা ওর জন্য। বলবেন—এই পুতুল কিন্তু কারো ফেলে দেওয়া নয়। এটা জীবনের গল্প থেকে বানানো।”


#sifat10