9 w ·Translate

শেষ ভাড়া

সেলিম ভাই পেশায় একজন রিকশাচালক। বুড়িগঙ্গার পাড়ে ছোট্ট একটা টিনের ঘরে থাকেন স্ত্রী আর ছোট মেয়েকে নিয়ে। সারা দিন শহরের গলি-গলি ঘুরে রিকশা চালান, রাতে ফিরে ক্লান্ত শরীরটা মাটিতে বিছিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।

দিন শেষে আয়টা কখনো হয় ৩০০ টাকা, কখনো ১৫০। তার মধ্যেও মেয়ের জন্য দু’টা বিস্কুট আর স্ত্রীর জন্য একটা ছেঁড়া শাড়ির স্বপ্ন বুকে লালন করেন।

একদিন বিকেলে বসুন্ধরার সামনে এক তরুণী দাঁড়িয়ে। চোখে জল, হাতে ব্যাগ। সেলিম ভাই কাছে গিয়ে বলেন, “আপা, কোথায় যাবেন?”
মেয়েটি বলে, “আপনি কি আজ আমাকে কোথাও না নিয়েই একটু ঘুরিয়ে আনবেন?”
সেলিম ভাই অবাক। “মানে?”

মেয়েটি কাঁপা গলায় বলে, “আজ আমার জন্মদিন। কাউকে বলতে পারিনি। কাউকে চাইও না। শুধু চেয়েছি কেউ একটু সময় দিক। আমি শুধু বসে থাকতে চাই—নীরবে।”

সেলিম ভাই কিছু না বলে মাথা নাড়েন। মেয়েটা রিকশায় বসে, আর তারা ঘুরে বেড়ায়। ধানমণ্ডি লেক, নীলক্ষেত, রমনা—সন্ধ্যার বাতিতে আলোকিত শহরের বুক চিরে চলে রিকশাটা। কেউ কিছু বলে না। কেবল মেয়েটার চোখে-মুখে বিষাদের এক প্রশান্তি।

রাত ৯টা বাজে। মেয়েটি নামতে চায়। পকেট থেকে ২০০ টাকা বের করে দেয়।
সেলিম ভাই হাত তোলেন, “না আপা, আজ এই ভাড়াটা আমি দিচ্ছি। আপনাদের মতো মানুষই তো আমাদের মতো গরিবদের মনটা মানুষ করে তোলে। আপনার জন্মদিনটা অন্তত একটা উপহারের মতো থাকুক।”

মেয়েটি কিছু বলে না। কেবল দীর্ঘসময় সেলিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর খুব আস্তে বলে, “আপনি জানেন না, আমি আজ নিজের প্রাণটা নিতে চেয়েছিলাম। আপনি যদি না আসতেন... তাহলে আমি থাকতাম না।”

রিকশা ধীরে ধীরে চলে যায় অন্ধকার রাস্তায়। সেলিম ভাই পিছনে তাকিয়ে দেখেন—মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে। মাথা নিচু, চোখে জল।
তিনি রিকশার ঘন্টা বাজান—টিং টিং। যেন বলছেন—“তুমি একা নও।”


#sifat10