পুরোনো ক্যামেরা
রাফি ছিল এক সময়ের দারুণ আলোকচিত্রী। হাতে ছিল একখানা পুরোনো ক্যামেরা—মিরর ভাঙা, লেন্সে আঁচড়, কিন্তু তবুও ছবিতে যাদু। শহরের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে সে ছবি তুলতো—অচেনা মানুষ, চায়ের দোকান, রোদে ঘুমানো ভিখারি, বৃষ্টিভেজা কাঁচ।
লোকজন বলত, “এ ক্যামেরায় ছবি না, গল্প ধরে রাখো তুমি!”
কিন্তু জীবন তো গল্পের মতো চলে না। একদিন রাফির মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতাল, ওষুধ, রিপোর্ট—সব কিছু সামলে ক্যামেরাটা তাকে বিক্রি করে দিতে হয়। সেই পুরোনো সঙ্গীটাকে হাতছাড়া করার সময় সে চোখ লুকিয়ে কাঁদে।
এরপর রাফি আর ছবি তোলে না। একটা ছোট ডেলিভারির চাকরি নেয়—বাইকে করে প্যাকেট পৌঁছায়, মাথায় হেলমেট, মুখে স্তব্ধতা।
একদিন সন্ধ্যায় একটা অর্ডার যায় গুলশানের এক ফ্ল্যাটে। দরজাটা খোলে এক বৃদ্ধ। চোখে মোটা চশমা, গলায় ক্যামেরা ঝুলছে। রাফির হাতে প্যাকেট তুলে দিতে গিয়ে চোখ পড়ে ক্যামেরার ওপর।
চমকে উঠে বলে, “এই ক্যামেরাটা তো...!”
বৃদ্ধ হেসে বলেন, “হ্যাঁ, এটা এক লোকের কাছ থেকে কিনেছিলাম কয়েক বছর আগে। দারুণ ছবি তুলতো ছেলেটা। ক্যামেরার ভেতর এখনো তার তোলা কিছু ছবি ছিল, আমি রেখে দিয়েছি।”
রাফি থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। “আপনি কি তার নাম জানেন?”
“না, তবে ক্যামেরার ভেতর একটাই চিঠি ছিল—‘আমার চোখ দিয়ে যদি কেউ কখনো জীবন দেখে, বুঝবে—দুঃখও সুন্দর হয়।’”
রাফির চোখে জল এসে যায়। সে কাঁপা কণ্ঠে বলে, “চাচা, সেই ছেলেটা আমি। আমি এই ক্যামেরাটার সঙ্গেই বাঁচতাম একসময়।”
বৃদ্ধ চুপ করে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে ক্যামেরাটা গলা থেকে খুলে রাফির হাতে দিয়ে বলেন, “জীবনের গল্প থামিয়ে রাখা ঠিক না বাবা। আবার শুরু করো।”
সেই রাতেই রাফি তার ছাদের ওপর বসে, পুরোনো ক্যামেরায় আকাশের ছবি তোলে। প্রথমবার দীর্ঘদিন পর তার মনে হয়—সে আবার বাঁচছে।
#sifat10