মৃত্যুর দুয়ারে ত্যাগের মহিমা
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ মুমিন হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই ভালবাসবে যা সে নিজের জন্য ভালবাসে’ (বুখারী হা/১৩)। ইয়ারমুক যুদ্ধের বিশাল ময়দান। এক প্রান্তে ক্ষুদ্র মুসলিম সেনাদল আর অপর প্রান্তে রোমকদের বিশাল সৈন্যবাহিনী। উভয় দলই ভয়াবহ এক যুদ্ধের মুখোমুখি দণ্ডায়মান। যুদ্ধ শুরুর পূর্বমুহূর্তে আবূ ওবায়দাহ, মু’আয বিন জাবাল, আমর ইবনুল আছ, আবূ সুফিয়ান, আবু হুরায়রা প্রমুখ ছাহাবী সৈন্যদের উদ্দেশ্যে হৃদয়গ্রাহী উপদেশ দেন। আবূ ওবায়দাহ উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘হে আল্লাহ্র বান্দাগণ! তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদযুগলকে স্থির রাখবেন। হে মুসলিম সেনাবাহিনী। তোমরা ধৈর্যধারণ করো। কেননা ধৈর্য কুফরী থেকে বাঁচার, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের এবং লজ্জা নিবারণের উপায়। তোমরা তোমাদের যুদ্ধের সারি থেকে সরে দাঁড়াবে না। কাফেরদের দিকে এক ধাপ ও অগ্রসর হবে না এবং আগ বেড়ে তাদের সাথে যুদ্ধের সূচনাও করবে না। শত্রুদের দিকে বর্শা তাক করে থাকবে এবং বর্ম দিয়ে আত্মরক্ষা করবে। তোমাদেরকে যুদ্ধের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তোমরা মনে মনে আল্লাহ্র যিকির করতে থাকবে’।
যুদ্ধ শুরু হ’ল এবং প্রচণ্ড আকার ধারণ করল। যুদ্ধের সময় হুযায়ফা (রাঃ) আহতদের মধ্যে তার চাচাতো ভাইকে খুঁজতে শুরু করলেন। তার সাথে ছিল সামান্য পানি। হুযায়ফার চাচাতো ভাইয়ের শরীর দিয়ে অবিরত ধারায় রক্ত ঝরছিল। তার অবস্থা ছিল আশংকাজনক। হুযায়ফা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি পানি পান করবে? সে তার কথার কোন উত্তর দিতে সক্ষম না হয়ে হ্যা সূচক ইঙ্গিত করল। আহত ব্যক্তি হুযায়ফার কাছ থেকে পানি পান করার জন্য হাতে নিতেই তার পাশে এক সৈন্যকে পানি পানি বলে চিৎকার করতে শুনল। পিপাসার্ত ঐ সৈনিকের বুকফাটা আর্তনাদ শুনে তার পূর্বে তাকে পানি পান করানোর জন্য হুযায়ফাকে ইঙ্গিত দিলেন। হুযায়ফা তার নিকট গিয়ে বললেন, আপনি কি পানি পান করতে চান? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি পান করার জন্য পাত্র উপরে তুলে ধরতেই পানির জন্য অন্য একজন সৈন্যের চিৎকার শুনতে পেলেন। তিনি পানি পান না করে হুযায়ফা (রাঃ)-কে বললেন, তার দিকে দ্রুত ছুটে যাও এবং সে পানি পান করার পর কিছু অবশিষ্ট থাকলে আমাকে দিয়ো। হুযায়ফা আহত সৈন্যটির কাছে গিয়ে দেখলেন, সে মারা গেছে। অতঃপর দ্বিতীয় জনের কাছে ফিরে এসে দেখলেন, সেও মারা গেছে। অতঃপর চাচাতো ভাইয়ের কাছে ফিরে আসলে দেখেন তিনিও শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে জান্নাতবাসী হয়েছেন। পানির পাত্রটি তখনও হুযায়ফার হাতে। এতটুকু পানি । অথচ তা পান করার মত এখন আর কেউ বেঁচে নেই। যাদের পানির প্রয়োজন ছিল তারা আরেক জনের পানির পিপাসা মিটাবার জন্য এতই পাগলপরা ছিলেন যে, অবশেষে কেউ সে পানি পান করতে পারেননি। অথচ সবারই প্রাণ ছিল ওষ্ঠাগত (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৭/৮ ১১ প্রভৃতি দ্রঃ) ৷
শিক্ষা : মুমিন ব্যক্তি সর্বদা মানুষের জন্য অন্তঃপ্রাণ থাকে। সে নিজেকে কখনো পরের উপরে প্রাধান্য দেয় না। বরং সর্বদা অপরের কল্যাণকেই ধ্যান জ্ঞান করে। জীবনের চরম ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে পর্যন্ত সে তার কর্তব্য ভুলে যায় না। এমনকি পরার্থে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও সে সামান্যতম কুণ্ঠাবোধ করে না। সর্বদাই তাঁর হৃদয়কন্দরে গুঞ্জরিত হতে থাকে, ‘সকলের তরে আমরা সবে, প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’।
Tajrin Nesa
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?