শিরোনাম: “ফিরে আসা”
রিয়াদ শহরে থাকত। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ভালো চাকরি করছিল ঢাকায়, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তবে তার হৃদয়ের এক কোণে সবসময় একটি টান ছিল—তার পিতা, আব্দুল গফুর মিয়া, একজন বয়স্ক কৃষক, যিনি এখনও হাড়ভাঙা খাটুনি করে নিজের জমিতে চাষ করতেন।
রিয়াদ ছোটবেলায় বাবাকে দেখেছে ভোরে মাঠে যেতে, সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরতে। তখন বাবাকে মনে হতো কঠিন এক মানুষ, যিনি শুধু কাজ করেন, কিন্তু কিছুই বলেন না। বড় হয়ে রিয়াদ বুঝেছে—বাবার নীরবতা ছিল কষ্ট আর দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ।
একদিন খবর এল, গফুর মিয়া হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রিয়াদ ছুটে গেল গ্রামে। ডাক্তার বলল, গফুর মিয়ার হার্ট দুর্বল, বিশ্রাম দরকার।
রিয়াদ বাবাকে বলল, “আপনি বিশ্রাম নিন, আমি সব সামলাব।”
বাবা অবাক হয়ে বললেন, “তুই তো শহরের মানুষ, মাটির গন্ধ চাস না, এই কাদা-মাটির কাজ তোর জন্য না।”
রিয়াদ ধীরে বলে, “আপনার মতো করে পারব না, কিন্তু আমি শিখতে চাই।”
প্রথম ক’দিন খুব কষ্ট হয় রিয়াদের। সকালবেলা মাঠে কাজ করা, গরুকে খাওয়ানো, পোকা দমন করা—সবকিছুই কঠিন। কিন্তু একসময় সে কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নেয়, ইউটিউব দেখে শেখে কীভাবে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে সহজে চাষ করা যায়।
সে তার পিতার জমিতে নতুনভাবে সবজির চাষ শুরু করে। ধান, পাটের পাশাপাশি চালু করে মৌসুমি ফলের উৎপাদনও। ধীরে ধীরে তার ফলন বাড়ে, আয় বাড়ে। গ্রামের মানুষ অবাক হয়—ছেলের শহর থেকে ফিরে আসা কেবল পিতার অসুখের জন্য নয়, ভালোবাসা ও দায়িত্বের জন্যও।
একদিন গফুর মিয়া ছায়ায় বসে তার ছেলেকে জমিতে কাজ করতে দেখে মৃদু হেসে বলেন, “তুই তো আসলে আমাকেও ছাড়িয়ে গেছিস।”
রিয়াদ তখন বলে, “আপনি বীজ বপন করেছেন, আমি শুধু আগাছা তুলেছি।”
সেই গ্রামে আজ অনেক তরুণ শহরের চাকরি ছেড়ে কৃষিতে ফিরে এসেছে। কারণ তারা দেখেছে—মাটি কখনো ঋণী রাখে না, সে পরিশ্রমের ফল ফেরায়, শুধু সময় নেয় কিছুটা।
MD Nafis islan
Ta bort kommentar
Är du säker på att du vill ta bort den här kommentaren?