বছর পাঁচেক আগে চট্টগ্রামের এক পাহাড়ি গ্রামের ছোট্ট স্কুলে চাকরি নিই। শহরের কোলাহল থেকে দূরে, নীরব, শান্ত একটা জায়গা। শুরুতে একটু অস্বস্তি লাগলেও ধীরে ধীরে সেই নির্জনতাই বড় আপন হয়ে উঠেছিল।
ওই স্কুলেই পড়ত সুমনা, ক্লাস ফাইভের মেয়েটা। মুখে সবসময় হাসি, কিন্তু চোখে একটা চিরন্তন প্রশ্নের ছায়া। পড়াশোনায় খুব ভালো না, তবে যে যতটা পারে চেষ্টা করে—সেটা সে করত নিঃসন্দেহে। প্রতিদিন ক্লাস শেষে এসে জিজ্ঞেস করত, “স্যার, আপনি কি আবার কাল আসবেন?” আমি হেসে মাথা নেড়ে দিতাম।
একদিন ক্লাসে ঢুকে দেখি, সুমনা নেই। জানতে পারলাম তার বাবা পাহাড়ি পথে কাঠ কাটতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। পরিবারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। সুমনার স্কুল ছাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মনটা ভার হয়ে গেল। কিন্তু কিছু করার ছিল না তখন।
তার দু’সপ্তাহ পর হঠাৎ একদিন ক্লাসে টেবিলের উপর একটা ভাঁজ করা কাগজ পেলাম। খুলে দেখি—
“স্যার, আমি পড়তে চাই। কিন্তু বাড়িতে বলেছে কাজ করতে হবে। তাও আমি পড়ব। রাতে চুপিচুপি বই খুলব। আপনি কি রোজ ওই রাস্তায় হাঁটেন? আমি জানি না কেন, আপনাকে দেখলে সাহস পাই। দোয়া করবেন—সুমনা।”
চোখ ভিজে গেল।
আমি কিছুদিনের মধ্যেই শহরে ফিরে যাই, তবে সেই চিঠিটা আজও আমার ডেস্কে পড়ে আছে। এখনো যখন কঠিন সময়ে পড়ি, পড়ে নিই সুমনার সেই লেখা। ছোট্ট এক শিশুর অদম্য ইচ্ছা—আমার বড় অনুপ্রেরণা হয়ে আছে