মধ্যযুগ আদি-মধ্যযুগ সাধারণভাবে খ্রিস্টীয় ১৩শ-১৪শ শতক পর্যন্ত কাল বাংলা সাহিত্যের আদি-মধ্যযুগ বা চৈতন্যপূর্ব যুগ বলে চিহ্নিত। এ সময়ের বাংলা সাহিত্য তিনটি প্রধান ধারায় বিকশিত হয়েছে: বৈষ্ণব সাহিত্য, মঙ্গল সাহিত্য এবং অনুবাদ সাহিত্য। বড়ু চন্ডীদাস (১৪শ শতক) এ সময়ের প্রথম উল্লেখযোগ্য কবি, যিনি রাধাকৃষ্ণের প্রণয়বিষয়ক নাটগীতিকাব্য রচনা করেন। তাঁর আগে কবি জয়দেব সংস্কৃত ভাষায় রাধা-কৃষ্ণের প্রেমমূলক যে গীতিসাহিত্যের প্রবর্তন করেন, চন্ডীদাস সেই ধারাকেই বিকশিত করে তোলেন।
চৈতন্যদেবের আগে-পরে রচিত সহস্রাধিক বৈষ্ণব পদের ভণিতায় একাধিক চন্ডীদাসের নাম পাওয়া যায় আদি চন্ডীদাস, কবি চন্ডীদাস, দ্বিজ চন্ডীদাস ও দীন চন্ডীদাস। এঁরা এক না পরস্পর ভিন্ন তা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে বিতর্ক আছে, যা ‘চন্ডীদাস সমস্যা’ নামে পরিচিত। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভের সম্পাদনায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন নামে যে পুথিটি প্রকাশিত হয়, তার ভণিতায় বড়ু চন্ডীদাসের নাম পাওয়া যায়। সম্ভবত ইনিই আদি চন্ডীদাস, যাঁর কাব্যের রচনাকাল ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ বলে ধরা যায়। মালাধর বসু সংস্কৃত শ্রীমদ্ভাগবত অবলম্বনে পয়ার ছন্দে কৃষ্ণলীলা বিষয়ক উপাখ্যান শ্রীকৃষ্ণবিজয় রচনা করেন ১৪৮০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। এই কাব্যের জন্য গৌড়েশ্বর তাঁকে ‘গুণরাজ খাঁ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এটি ‘মঙ্গল’ বা ‘বিজয়’ জাতীয় পাঁচালি বা আখ্যানকাব্য হিসেবে পরিচিত; তাই এর অন্য নাম গোবিন্দমঙ্গল বা গোবিন্দবিজয়। এই পাঁচালিকাব্য বাংলার অনুবাদ শাখারও একটি প্রাচীনতম নিদর্শন বলে অনেকে মনে করেন।
Aysha570
Delete Comment
Are you sure that you want to delete this comment ?