আরাকান রাজসভার উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় যাঁরা কাব্যচর্চা করেন তাঁদের মধ্যে দৌলত কাজী (আনু. ১৬০০-১৬৩৮) প্রাচীনতম। তাঁর সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী প্রথম মানবীয় প্রণয়কাব্য। তিনি এ কাব্যের রচনা শুরু করেন, কিন্তু শেষ করে যেতে পারেননি; শেষ করেন আলাওল (আনু. ১৬০৭-১৬৮০)। এর মূল কাহিনী আওধী (গোহারি) ভাষায় উত্তর ভারতে প্রচলিত ছিল। কাব্যটি তিন খন্ডে বিভক্ত। এতে কবির অসাধারণ কবিত্বশক্তি ও সৌন্দর্যবোধ ফুটে উঠেছে। বৈষ্ণব পদাবলির ঢঙে তিনি নববর্ষার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা বাংলা ‘বারমাস্যার’ একঘেয়েমির ক্ষেত্রে এক অপূর্ব ব্যতিক্রম।
বাঙালি মুসলমান কবিদের মধ্যে আলাওল সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। তাঁর মতো বহুগ্রন্থ প্রণেতা ও পন্ডিত কবি মধ্যযুগে বিরল। তিনি আরাকানের প্রধানমন্ত্রী কোরেশী মাগন ঠাকুরের (আনু. ১৬০০-১৬৬০) আশ্রয়ে থেকে কাব্যচর্চা শুরু করেন। পরবর্তী জীবনেও তিনি বহু সভাসদের অনুগ্রহে কাব্যসাধনা করেন। এ যাবৎ তাঁর যে পাঁচটি কাব্য পাওয়া গেছে তন্মধ্যে পদ্মাবতী শ্রেষ্ঠ। এটি হিন্দি কবি মালিক মুহম্মদ জায়সীর পদুমাবত (১৬৫১) অবলম্বনে রচিত হলেও মৌলিকতার কারণে পাঠকনন্দিত। তাঁর অপর চারটি কাব্যও অনুবাদমূলক এবং সেগুলি হলো হপ্তপয়কর, তোহফা, সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল ও সিকান্দরনামা। এগুলি ছাড়া আলাওল কিছু পদাবলি ও গানও রচনা করেন। তাঁর কাব্যে মানবপ্রেম ও অধ্যাত্মপ্রেম দুয়েরই মিলন ঘটেছে।
Suraiya Soha
تبصرہ حذف کریں۔
کیا آپ واقعی اس تبصرہ کو حذف کرنا چاہتے ہیں؟