লোকগাথা আঠারো শতকের অন্যতম সাহিত্যধারা। এর প্রধান বিষয় প্রণয়কাহিনী। অধিকাংশ লোকগাথাই ছিল অলিখিত, লোকমুখে প্রচলিত; ফলে সেগুলির ভাব, ভাষা ও উপমায় প্রক্ষেপণ ঘটেছে উনিশ শতক পর্যন্ত গাথাগুলির প্রায় সবটিতেই নারীর ভূমিকা প্রধান। এ ধারার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মৈমনসিংহ-গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ-গীতিকা। গীতিকাগুলির কালনির্ণয় দুরূহ। প্রথমটি দীনেশচন্দ্র সেন (১৮৬৬-১৯৩৯) ও দ্বিতীয়টি চন্দ্রকুমার দে ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে প্রকাশ করেন। এগুলিতে পল্লীর লোকজীবন চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে।
অবক্ষয়িত সমাজ-মানসের বিস্রস্ত রুচির প্রকাশ ঘটে পাঁচালি, যাত্রা, তরজা, কবিগান ইত্যাদিতে। বাংলায় পাঁচালি গানের প্রচলন ছিল বহু আগে থেকেই। যাত্রার উদ্ভব হয় দেবদেবীদের বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে এবং কৃষ্ণলীলা ছিল এর মূল বিষয়; পরে অবশ্য বিদ্যাসুন্দর কাহিনীও এর সঙ্গে যুক্ত হয়। তরজার প্রচলন হয় চৈতন্যদেবের সময় থেকে এবং অবক্ষয়কালে তা হয়ে যায় উত্তর-প্রত্যুত্তর ঢঙের ছড়াগান। এ থেকে আবার আসে কবিগান, যা দুটি পক্ষের মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়। এরই চরম রূপ হচ্ছে খেড় বা খেউড়।
যুগ-পরবির্তন সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গে জারি গান, সারি গান ইত্যাদি লোকগীতির ধারা সচল থাকে; কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে নাগরিক সংস্কৃতির প্রভাবে পাঁচালি-কীর্তন ঢঙ বদলে আখড়াই ও পরে হাফ-আখড়াইতে পরিণত হয়। এই বিস্রস্ত ধারার মধ্য দিয়েই চলে আসে যুগান্তর।
Suraiya Soha
Ta bort kommentar
Är du säker på att du vill ta bort den här kommentaren?