উনিশ শতক হচ্ছে বাঙালির নবজাগরণের যুগ। এ সময় বাঙালি-প্রতিভার সর্বতোমুখী বিকাশ ঘটে এবং জাতি হিসেবে বাঙালির অভ্যুদয়ের সর্ববিধ প্রচেষ্টারও সূত্রপাত ঘটে। এ যুগেই একটি শক্তিশালী সাহিত্যেরও সৃষ্টি হয়। এ সময়ের বাংলা সাহিত্যের প্রধান কয়েকটি বিশেষত্ব হচ্ছে: ক. শক্তিশালী গদ্য-সাহিত্যের সৃষ্টি ও তার অসাধারণ বিকাশ; খ. উনিশ শতকের প্রথম পঞ্চাশ বছরের গদ্য-সাহিত্যে সংস্কৃত পন্ডিতদের প্রভাব; গ. বিশ্বসাহিত্য ও বিশ্বের আধুনিক চিন্তাধারার সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের নিবিড় সংযোগ; ঘ. জ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক সাহিত্য সৃষ্টি; ঙ. সাময়িক সাহিত্য সৃষ্টি; চ. মান-বাংলা হিসেবে চলিত ভাষার সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ ও পরবর্তী ধারায় এর ক্রমবর্ধিষ্ণু প্রভাব; ছ. কাব্য-সাহিত্যের অসামান্য উন্নতি; জ. সর্বদেশীয়, সর্বকালীয় ও সর্বজাতীয় সার্বভৌম সাহিত্য সৃষ্টির আদর্শ এবং ঝ. জাতীয় জীবনে সাহিত্যের প্রভাব সর্বাধিক অনুভূত হওয়া এবং সাহিত্যই যে জাতীয় চরিত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানদন্ড এ সত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া।
উপর্যুক্ত সংঘটনগুলির প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে দেখা যাবে যে, ১৭৫৭ সালে বঙ্গদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা ইংরেজদের হস্তগত হলেও সাংস্কৃতিক জীবনে উনিশ শতকের পূর্বে ইংরেজি তথা পাশ্চাত্য প্রভাব অনুভূত হয়নি। প্রধানত ইংরেজদের শিক্ষা ও সাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় ঘটার মধ্য দিয়েই আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয় এবং বাঙালি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় ইউরোপীয় সংস্কৃতির নিকটবর্তী হয়। মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে যে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিবর্তন ঘটে, তাকে ঐতিহাসিকগণ ‘নবজাগৃতি’ বা ‘রেনেসাঁ’ নামে আখ্যায়িত করেন। এর ফলস্বরূপ উনিশ শতকের সাহিত্যে মানব-প্রাধান্য, গদ্য-সাহিত্যের উদ্ভব, সাময়িক পত্রের আবির্ভাব ইত্যাদি বৈচিত্র্যের সূত্রপাত হয়। এ সময় উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ প্রভৃতি বিচিত্র ধরনের গদ্য-সাহিত্য এবং ইংরেজির আদর্শে নাটক ও কাব্যসাহিত্য (মহাকাব্য-আখ্যায়িকা, সনেট, গীতিকবিতা) রচিত হতে থাকে; এমনকি ইউরোপীয় ধাঁচে নতুন নতুন রঙ্গমঞ্চও নির্মিত হতে থাকে।
Suraiya Soha
댓글 삭제
이 댓글을 삭제하시겠습니까?