গদ্যরচনার যুগ উনিশ শতকের পূর্বে বাংলায় যেসব গদ্য রচিত হয়েছিল তা সাহিত্যপদবাচ্য নয়। সতেরো শতকের শেষভাগে দোম আন্তোনিও ছিলেন প্রথম বাঙালি লেখক এবং তাঁর রচিত ব্রাহ্মণ-রোমান-ক্যাথলিক-সংবাদ প্রথম মুদ্রিত বাংলা গ্রন্থ। পরে পর্তুগিজ পাদ্রি মানোএল-দ্য আস্সুম্পসাঁও সংকলিত কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ এবং বাঙ্গলা ব্যাকরণ ও বাঙ্গলা-পর্তুগীজ শব্দকোষ ১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের লিসবন শহর থেকে রোমান অক্ষরে মুদ্রিত হয়। রাষ্ট্রক্ষমতা লাভের পর ইংরেজ শাসকবর্গ দেশীয় ভাষা রপ্তকরণের আবশ্যকতা উপলব্ধি করেন। ইতোমধ্যে এদেশে মুদ্রণব্যবস্থা প্রচলিত হলে ইংরেজদের বাংলা শেখাবার উদ্দেশ্যে নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে রচনা করেন A Grammar of the Bengal Language। গ্রন্থটি ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে হুগলি প্রেস থেকে মুদ্রিত হয় এবং এতে দৃষ্টান্তস্বরূপ উদাহরণ ও উদ্ধৃতিতে বাংলা হরফ ব্যবহূত হয়। এর কাছাকাছি সময়ে খ্রিস্টান পাদ্রিগণ বাংলা গদ্যে আরও কিছু পুস্তক রচনা করেন, যার সবগুলিরই উদ্দেশ্য ছিল ধর্মপ্রচার। এক কথায় বলা যায় যে, শাসনকার্য পরিচালনা ও ধর্মপ্রচারের প্রয়োজনেই আঠারো শতকে বাংলা গদ্যচর্চার প্রসার ঘটে; তাই তাতে সাহিত্য সৃষ্টি হয়নি। রাজকার্য পরিচালনায় আইনগ্রন্থের বাংলা অনুবাদই প্রথম প্রয়োজন হয়, তাই এ সময়ে কিছু আইন গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশিত হয়। এ ক্ষেত্রে ১৭৭৮ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হ্যালহেডের পরে উল্লেখযোগ্য হলেন ফরস্টার। তিনি কর্নওয়ালীসী কোড (১৭৯৩) ও শব্দকোষ (১৭৯৯) বাংলায় অনুবাদ করেন। এ দুটি মৌলিক রচনা না হলেও এ থেকে বাংলা গদ্যের প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা জন্মে। উনিশ শতকে এই গদ্য-প্রচেষ্টা আরও বেগবান ও সমৃদ্ধ হতে থাকে।
Suraiya Soha
Ta bort kommentar
Är du säker på att du vill ta bort den här kommentaren?