বাংলা গদ্যে রামমোহনের বিশিষ্টতা এই যে, তিনি পাঠ্যপুস্তকের বাইরে গদ্য ব্যবহারের পথ উন্মুক্ত করেন। এ সময় তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, রাধাকান্ত দেব, রামকমল সেন, কাশীনাথ তর্কপঞ্চানন, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৭৮৭-১৮৪৮) প্রমুখ এবং প্রধানত শ্রীরামপুরের মিশনারি পাদ্রিরা। ভবানীচরণের গদ্যরচনায় বাংলা কথ্যরীতির প্রথম সূচনা হয় এবং তাঁর সামাজিক নকশা জাতীয় রচনা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করে। রামমোহনের স্বপক্ষে ছিলেন রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশ, দ্বারকানাথ ঠাকুর (১৭৯৪-১৮৪৬), প্রসন্নকুমার ঠাকুর, তারাচাঁদ চক্রবর্তী (১৮০৬-১৮৫৭), চন্দ্রশেখর দেব, গৌরীকান্ত ভট্টাচার্য (জ্ঞানাঞ্জন), গৌরমোহন বিদ্যালঙ্কার (স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক), কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮১৩-১৮৮৫) প্রমুখ। এ সময় বাংলা গদ্য ব্যবহারের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ছিল সাময়িক পত্র ও সংবাদপত্র। এছাড়া পক্ষ-প্রতিপক্ষের প্রচারণামূলক এক ধরনের রচনার প্রচলন হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে ‘দ্বৈরথ দ্বন্দ্ব’ (Polemics) নামে পরিচিত হয়।
ওই সময়কার অন্যান্য গদ্য রচয়িতার মধ্যে প্রথমেই উল্লেখযোগ্য প্যারীচাঁদ মিত্র (১৮১৪-১৮৮৩)। তিনি প্রথম বাংলা উপন্যাস এবং কথ্য ভাষার ব্যবহারে গদ্য রচনার জন্য বিখ্যাত হলেও নানা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করেও খ্যাতি অর্জন করেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮১৭-১৯০৫) গদ্য কবিত্বময়, স্নিগ্ধ ও অন্তরঙ্গ। অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৮৬) বাংলা গদ্যকে যুক্তি ও বিজ্ঞানচর্চার উপযোগী করে তোলেন। তাঁর রচনায় বাহ্য প্রকৃতির সঙ্গে মানব প্রকৃতির সম্বন্ধবিচার স্থান পেয়েছে। তাঁর সর্বাধিক পরিচিত গ্রন্থ হচ্ছে কিশোর শিক্ষার্থীদের জন্য রচিত চারুপাঠ।
Suraiya Soha
댓글 삭제
이 댓글을 삭제하시겠습니까?