প্রবন্ধ রচনার ধারা এ ধারার সূত্রপাত হয় ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের হাতে, কিন্তু পরিণতি লাভ হয় বঙ্কিমচন্দ্রের হাতে। ভাষা, সাহিত্য, সমাজ, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে গভীর মননশীল প্রবন্ধ রচনা করে বঙ্কিমচন্দ্র এ ধারাকে সমৃদ্ধ করেন। বিজ্ঞান রহস্য (১৮৭৫), বিবিধ সমালোচনা (১৮৭৬), কৃষ্ণচরিত্র (১৮৮৬) প্রভৃতি তাঁর এ জাতীয় রচনা। এ ধারায় পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন আরো অনেকে। বঙ্কিমের অগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্র লেখেন যাত্রা-সমালোচনা (১৮৭৫), বাল্যবিবাহ (১৮৮২) ইত্যাদি। দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর মননশীল প্রাবন্ধিক হিসেবে ছিলেন অনন্য, এমনকি তাঁর ভাষাতাত্ত্বিক প্রবন্ধও ছিল সে সময়ের জন্য অভাবিত। উনিশ শতকের শেষ দশকে বাংলা ভাষা বিশ্লেষণে যে একটি নতুন ধারার সূত্রপাত হয়, তিনি ছিলেন তার সূচনাকারী। অন্যান্য প্রাবন্ধিকের মধ্যে ছিলেন ধর্মীয় প্রবন্ধের লেখক ত্রৈলোক্যনাথ সান্যাল (১৮৪০-১৯১৬), বান্ধব পত্রিকার (১৮৭৪) সম্পাদক কালীপ্রসন্ন ঘোষ (১৮৪৩-১৯১০), রক্ষণশীল চন্দ্রনাথ বসু (১৮৪৪-১৯১০), বাংলা ভাষায় প্রত্নতত্ত্ব আলোচনার সূচনাকারী রামদাস সেন (১৮৪৫-১৮৮৭), ধর্মতাত্ত্বিক ও সমাজ-ঐতিহাসিক শিবনাথ শাস্ত্রী যিনি রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ (১৮৯৭) গ্রন্থের জন্য স্মরণীয়, সুলেখক পূর্ণচন্দ্র বসু, উদ্ভ্রান্ত প্রেমের লেখক চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় (১৮৪৯-১৯২২), পুরাতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক রজনীকান্ত গুপ্ত (১৮৪৯-১৯০০), স্বর্ণকুমারী দেবী, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখ।