টতলার পুথি সিপাহি বিপ্লবের (১৮৫৭-৫৮) পরে যখন মুসলমানরা আধুনিক বাংলা সাহিত্য-চর্চায় এগিয়ে আসেন তখনও তাঁদের মধ্যে বিশুদ্ধ বাংলায় সাহিত্যচর্চার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। আধুনিক শিক্ষা ও জ্ঞানের বাইরে থেকে অতীত গৌরবের কথা নিয়ে তাঁরা পুরো শতাব্দী ধরেই রচনা করেন দোভাষী পুথি। উর্দু, ফারসি ও হিন্দি শব্দবহুল এসব পুথির ভাষা ছিল সাধু শ্রেণির। যুগপ্রভাবে স্বভাবতই এ ভাষা ওহাবী বা ফরায়েজী আন্দোলন-প্রেরণায় পুষ্ট ছিল এবং তাতে ধর্মীয় প্রভাবও ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণে। পরবর্তী পর্যায়ে ছাপাখানা ও পুস্তক ব্যবসার প্রসারের ফলে উনিশ শতকে এগুলি পরিচিত হয় বটতলার পুথি নামে। এ ধারার সাহিত্য তখন বিরাট জনগোষ্ঠীর সাহিত্য-পিপাসা মিটিয়েছে। সমগ্র বঙ্গদেশের মুসলমান জনসাধারণের মধ্যে সাংস্কৃতিক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য যেভাবে এ সাহিত্য রচিত ও চর্চিত হয়েছে, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সাহিত্যের ইতিহাসে তার নজির পাওয়া যায় না।
প্রধান বাঙালি মুসলমান লেখক উনিশ শতকে রাজনীতি সম্পর্কে বাংলার মধ্যবিত্ত শ্রেণির মুসলমানদের মনোভাবের পরিবর্তন ঘটার পর থেকে বাংলা সাহিত্যে বেশ কিছু প্রতিভাবান সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন: মীর মশাররফ হোসেন (১৮৪৭-১৯১২), মৌলবি মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন (১৮৩২-১৯০৭), দাদ আলী (১৮৫২-১৯৩৬), কায়কোবাদ (১৮৫৭-১৯৫১), শেখ আবদুর রহিম, রেয়াজউদ্দীন মাশহাদী, মোজাম্মেল হক, মুনশি মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদ (১৮৬২-১৯৩৩), মৌলবি মেয়রাজউদ্দীন আহমদ (১৮৫২-১৯২৯), মুনশি মোহাম্মদ জমিরউদ্দীন (১৮৭০-১৯৩০), আবদুল হামিদ খান ইউসুফজয়ী (১৮৪৫-১৯১৫), আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ (১৮৭১-১৯৫৩), নওশের আলী খান ইউসুফজয়ী (১৮৬৪-১৯২৪), মওলানা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (১৮৭৫-১৯৫০) প্রমুখ। মীর মশাররফ হোসেন ছিলেন আধুনিক যুগের মুসলমান বাংলা সাহিত্যিকদের অগ্রগণ্য। সমগ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসেও তিনি অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক। উপন্যাস, নাটক, প্রহসন, কাব্য, গীতিনাট্য, প্রবন্ধ-সাহিত্য, সমাজচিত্র প্রভৃতি বিষয়ে তিনি প্রায় ৩০টি গ্রন্থ রচনা করেন; তবে উপন্যাস ও কাহিনী জাতীয় রচনাতেই তাঁর অবদান সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর রচনার ব্যাপ্তি ও বৈচিত্র্য পরবর্তী যুগের বাঙালি মুসলমান সাহিত্যিকদের অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনা জুগিয়েছে। বিষাদ-সিন্ধু তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা।
Suraiya Soha
댓글 삭제
이 댓글을 삭제하시겠습니까?