ঈশ্বরগুপ্তের কবিতায় সে সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা প্রকাশ পায়। উনিশ শতকের নতুন সাহিত্য ছিল নাগরিকজনদের জন্য লেখা এবং সাহিত্যিকরা ছিলেন নাগরিক সংস্কৃতিপুষ্ট; তাই তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও ছিল প্রসারিত। ঈশ্বরগুপ্তের মধ্যে প্রথম সেই লক্ষণ দেখা যায় ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রকাশিত তাঁর সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায়। তখনকার কলকাতায় নতুন সাহিত্য ও জীবনধারা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এর অবদান ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এক সময় তা বাংলা সাহিত্যের দিকনির্দেশ ও নীতিনির্ধারণ করেছে। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, মনোমোহন বসু, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখকরা ঈশ্বরগুপ্তের নিকট বিশেষভাবে ঋণী ছিলেন।
১৮৫৮ সাল বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। এ সময় যুগসন্ধির কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের মৃত্যু হয়, প্রথম বাংলা উপন্যাস আলালের ঘরের দুলাল প্রকাশিত হয় এবং বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তের (১৮২৪-১৮৭৩) আত্মপ্রকাশ ঘটে। মধুসূদন শর্মিষ্ঠা নাটক রচনার মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হন। একই সঙ্গে বাংলা কাব্যেও তিনি বিপ্লব ঘটান। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন তাঁর অক্ষয় কীর্তি। এ ছন্দে রচিত তাঁর মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১) বাংলা সাহিত্যে এক অনুপম সৃষ্টি এবং মধুসূদনেরও শ্রেষ্ঠ রচনা। এর বিষয় ও ভাষা প্রাচ্যদেশীয় হলেও ভাব ও রচনারীতি পাশ্চাত্যের। মধুসূদনে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সার্থক মিলন ঘটেছে।