---
গল্প: ধূপ-ছায়ার মেলবন্ধন
নতুন সকালে গ্রামের মাটি থেকে উঠে আসা সূর্যের আলো খোলা আকাশে ঝলমল করতে লাগল। গ্রামটা যেন সারা রাতের অন্ধকার কেটে নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। চন্দন মিয়া তার ছোট্ট ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকল, সামনে ছড়িয়ে থাকা সবুজ ধানক্ষেত আর দূরে গগনচুম্বী আকাশের নিচে গড়ানো পাহাড়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে।
চন্দন মিয়া ছোটবেলা থেকেই গ্রাম্য জীবনের মাধুর্য ভালোবাসত। ধানক্ষেতের মাঝে পা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে তার মনে হতো, পৃথিবীর সব সুখ যেন তার নিজের। তার বাবার সারা দিনের পরিশ্রম আর মায়ের স্নেহময় নজরদারি চন্দনের জীবনকে মসৃণ করে তুলত।
গ্রামের স্কুলে পড়ার সুবাদে চন্দন শহরের জীবন সম্পর্কে কিছুটা জানত, কিন্তু তার হৃদয় সবসময়ই গ্রামীণ শান্তির পক্ষে দোলাচলে। সে স্বপ্ন দেখত একটা জীবন যেখানে থাকবে শান্তি, ভালোবাসা আর পরিবারের সান্নিধ্য।
একদিন দুপুরের খাবারের সময়, গ্রামের পুরনো রাস্তার পাশে বসে চন্দন ও তার ছোট বোন লীলা গল্প করছিল। লীলা বলল, “দাদা, শহরে যে স্কুলগুলো আছে, সেখানে কী অনেক ভালো বই থাকে? ওরা কি শহরের বাইরে গ্রামের ছেলেমেয়েদের মতো মাঠে দৌড়াতে পারে?”
চন্দন হেসে বলল, “শহর আর গ্রাম দুই ভিন্ন জগত, লীলা। কিন্তু আমার বিশ্বাস, ভালো বই আর প্রকৃতির মাঝে মিশে গেলে জীবনের আসল শিক্ষা মেলে।”
কিন্তু দিনের শেষে, চন্দন জানতে পারল, গ্রামের পাশের নদী ধরে একটা নতুন শিল্প কারখানা হচ্ছে। গ্রামবাসীরা এতে ভালো চাকরি পাবে বলে উচ্ছ্বসিত, কিন্তু চন্দনের মনে একটা সন্দেহ কাজ করল — এই পরিবর্তন কি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ? তার চেনা নদী, পাখি আর সেই শান্তিপূর্ণ বায়ু কি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
পরের দিন সকালে, চন্দন গ্রামের কিছু বড়দের সঙ্গে বসে এই বিষয়ে আলোচনা করল। অনেকেই বলল, “আমাদের জন্য ভালো সুযোগ। এখন আর শুধু কৃষিকাজ নয়, নতুন কাজের দরজা খুলবে।”
কিন্তু চন্দন জানত, প্রকৃতির যত্ন না নিলে আগামী দিনে গ্রামের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সে সিদ্ধান্ত নিল গ্রামের তরুণদের সঙ্গে মিলে একটা পরিবেশ সচেতন কমিটি গঠন করবে, যারা নতুন পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করবে।
দিনগুলি কেটেছিল চিন্তা আর কাজের মাঝে। চন্দন আর তার বন্ধুরা নদীর পাড়ে বৃক্ষরোপণ করত, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করত আর নতুন কারখানার কাজের পরিবেশ দূষণ কমানোর উপায় নিয়ে শহরের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করত।
একদিন সন্ধ্যায়, গ্রামের মাঠে এক ছোট আয়োজনে চন্দন বলল, “আমাদের গ্রাম শুধু সমৃদ্ধিই নয়, প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন বজায় রাখাও আবশ্যক। কারণ প্রকৃতি আমাদের মা, আর আমরা তার সন্তান।”
সবাই তার কথায় অভিভূত হয়ে গিয়েছিল। ছোট থেকে বড়, সবাই একসাথে কাজ করতে শুরু করল।
বছর কয়েকের মধ্যে গ্রামটি বদলে গেল—নতুন রাস্তা, শিল্প কারখানা, আর সঙ্গে alongside পরিপাটি সবুজ পার্ক। প্রকৃতি আর আধুনিকতার এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটে গেল এই ছোট গ্রামে।
চন্দন বুঝতে পারল, জীবন মানে শুধু আধুনিকতা নয়, সংস্কৃতি ও প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসাও। সেই ভালোবাসাই তৈরি করে জীবনের সত্যিকারের মূল্য।
---
শেষ।