⛔"শেষ রিংটোন"⛔কি রহস্য লুকিয়ে টেলিফোনে
✍️ Mehdi Hasan Shohag
স্থান: কাল্পনিক গ্রাম – চাঁনপুর
চাঁনপুর—a ছোট, নিরিবিলি গ্রাম। এখানে সময় যেন থেমে আছে। আধুনিকতা তেমন আসেনি। মানুষজন সহজ-সরল, দিনমজুরি করে চলে। কিন্তু হঠাৎ করেই গ্রামে শুরু হয় এক রহস্যজনক ভয়াবহতা।
প্রথম মৃত্যু হয় বৃদ্ধ হাকিম সাহেবের। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তিনি হাতে পান একটি পুরনো বাটন ফোন। কারো রেখে যাওয়া, অচেনা ফোন। তিনি কৌতূহলে চাপ দেন পাওয়ার বাটন। ফোন বেজে ওঠে—
ট্রিং... ট্রিং...
স্ক্রিনে ভেসে ওঠে—“Unknown Caller”
তিনি কলটি রিসিভ করার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। মুখে ঠান্ডা এক হাসি, চোখ খোলা—ভয়াবহ এক ঘুম।
পরবর্তী এক সপ্তাহে আরও তিনজন মারা যায়—সবাই একেকজন করে সেই ফোনটি হাতে পেয়েছে, এবং সকলেই কল রিসিভ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু বরন করেছে।
তদন্তে আসে চাঁনপুর থানার নতুন ওসি—রফিকুল ইসলাম। তিনি এসব “ভৌতিক” ব্যাপারে বিশ্বাস করেন না। বলেন, “ফোনে মানুষ মরে না। নিশ্চয় বিষক্রিয়া কিংবা হার্ট অ্যাটাক।”
কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাক্তারি রিপোর্টে সবাইকে সম্পূর্ণ সুস্থ পাওয়া গেছে। যেন কারো ছায়া এসে তাদের প্রাণটা টেনে নিয়েছে!গ্রামের প্রাচীন লাইব্রেরির এক বইপড়ুয়া যুবক রিদয় পুরনো রেকর্ড ঘেঁটে বের করে ১৭ বছর আগের এক ঘটনা। সে বছর চাঁনপুরে এসেছিল এক শহুরে মেয়ে, নাম মায়া। তার চুল ছিল রক্তের মতো লালাভ, চোখে ছিল গভীর বিষণ্ণতা।
মায়া প্রেমে পড়েছিল গ্রামেরই এক যুবকের, জামিলের। কিন্তু জামিল তাকে প্রতারণা করে অন্যত্র বিয়ে করে। সেই রাতে মায়া বিষ খায় এবং শেষ মুহূর্তে বারবার ফোন দেয় জামিলকে—সে ধরেনি।
মায়ার দেহ উদ্ধার হয় তার ভাড়া বাসা থেকে। পাশে পড়ে ছিল তার মোবাইল ফোন।
মৃত্যুর আগ মুহূর্তে সে একটি ভয়ংকর অভিশাপ দিয়েছিল
“যে ভালোবাসায় প্রতারণা করে, তার জন্য আমি ফিরবো... টেলিফোনের তারে...”
তখনকার সেই ফোন হঠাৎ এক রাতে হারিয়ে যায়। তখন কেউ জানত না, সেটাই একদিন "মৃত্যুর বাহক" হয়ে ফিরে আসবে।
রফিকুল ফোনটি জব্দ করে থানায় রাখে। সে ভাবে, যেহেতু ফোন হাতে থাকলেই মৃত্যু হয়, তাই এখন আর কিছু হবে না।
কিন্তু সেদিন রাতেই... থানায় নিভে যায় লাইট, বাতাস হিম হয়ে যায়, আর শুরু হয় সেই শব্দ—
“ট্রিং... ট্রিং...”
রফিকুল ফোনের দিকে তাকিয়ে বোঝে, স্ক্রিনে তার নিজের নাম—
“Rafiqul Islam”
ভয়ে সে ফোন ফেলে দেয়। কল রিসিভ করেনি সে।
পরদিন সকালেও সে জীবিত, কিন্তু তার চুল পেকে গেছে এক রাতে, মুখে যন্ত্রণা আর আতঙ্কের ছাপ—সে আর কথা বলে না।
গ্রামে দোলা নামে এক তরুণী, যে মায়ার সম্পর্কে কিছু জানে। সে বিশ্বাস করে, মায়ার আত্মা এখনো প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছে। দোলা ফোনটিকে ধরে নেয় এবং চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়:
"তুমি যদি সত্যি মায়া হও, তবে আমাকে কথা বলো!"
ফোন বেজে ওঠে, সে রিসিভ করে। এক কোমল অথচ ভৌতিক কণ্ঠে মায়া বলে—
"আমি কারো শত্রু নই... শুধু চাই, কেউ যেন আর প্রতারণা না করে। প্রেম শুধু কথা না, সেটা প্রতিশ্রুতি। আমি সেই প্রতিশ্রুতির ছিন্ন দেহ।"
দোলা বলে, “মায়া, আমি তোমার কষ্ট বুঝি। কিন্তু প্রতিশোধে শান্তি নেই। তুমি ফিরে যাও।”
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস আসে ফোন থেকে... তারপর ফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে—
“CALL ENDED”
ফোনটা ফেটে চৌচির হয়ে যায়। আর সেই রাত থেকে চাঁনপুরে আর কেউ মরে না অজানা কারণে।
তিন মাস পর শহরের এক পুরনো মার্কেটে এক হকার বিক্রি করছে এক মোবাইল ফোন—পুরনো নকিয়া সেট।
কেউ জিজ্ঞেস করলে সে হেসে বলে,
"এই ফোনের একটা রহস্য আছে ভাই... রিং বাজলে, জীবন থেমে যায়..."
"শেষ রিংটোন" বাজে না এখন আর চাঁনপুরে। কিন্তু তার প্রতিধ্বনি এখনো ঘুরে বেড়ায় বাতাসে, কোনো এক অজানা ফোনকলের অপেক্ষায়...
