রাত তখন সাড়ে এগারোটা। অরণ্যপুর গ্রাম ঘুমিয়ে পড়েছে অনেক আগেই। শুধু একটা কুয়াশা ঘেরা পথের ধারে দাঁড়িয়ে আছে ইমরান। তার চোখে ঘুম নেই, মুখে অদ্ভুত রকমের উত্তেজনা আর এক ধরনের চাপা ভয়।
এই গ্রামের পুরনো একটি বাড়ি তাদের পৈতৃক সম্পত্তি, অনেক বছর বন্ধ ছিল। এবার ফিরে এসে ঘরটা একটু গোছাতে চেয়েছিল সে। কিন্তু ঘরে ঢোকার পর থেকেই যেন কেমন অস্বস্তি হতে থাকে—দেয়ালের ফাঁক দিয়ে শীতল বাতাস, জানালার কাঁচে অদ্ভুত ছায়া, আর মাঝরাতে কার যেন ফিসফিসানি...
প্রথম রাতে ঘুমাতে গিয়ে সে স্পষ্ট শুনেছিল একটি মেয়ের কণ্ঠ:
“ফিরেছো অবশেষে… আমি অপেক্ষায় ছিলাম...”
ইমরান হঠাৎ উঠে বসে দেখে, ঘরে কেউ নেই। কিন্তু জানালার পর্দা তখনও দুলছে, অথচ সব জানালা সে বন্ধ করেই ঘুমিয়েছিল। প্রথমে ভেবেছিল দুঃস্বপ্ন, কিন্তু পরের রাতগুলোতে ঘটনা আরও ভয়াবহ হতে থাকে।
এক রাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এক মেয়েকে দেখতে পেল—সাদা জামা, লম্বা চুল, চোখে অপার্থিব এক আলো। মেয়েটি ধীরে ধীরে ঘরে ঢুকে বলে,
“আমি লায়লা। আমি মানুষ নই, আমি জ্বীন। বহু বছর ধরে এই ঘরে আটকে আছি... কারণ ভালোবাসা পেয়েছিলাম তোমার পূর্বপুরুষের। সে প্রতারণা করেছিল। তাই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, তার রক্ত থেকে একজনকে নিজের করে নিব।”
ইমরান ভয়ে পেছনে সরতে যায়, কিন্তু তার শরীর যেন স্থির হয়ে যায়। সে কাঁপতে কাঁপতে বলে,
— “তুমি কী চাও আমার থেকে?”
লায়লা ধীরে ধীরে ইমরানের খুব কাছে এসে বলে,
“তুমি আমার হবে। একটি রাত… কেবল একটি রাত যদি তুমি আমাকে দাও, তাহলে আমি তোমাকে চিরদিনের জন্য ভালোবাসবো। কিন্তু যদি অস্বীকার করো, তুমি যেমন আছো, আর থাকবে না। হারাবে সবকিছু… এমনকি নিজেকেও।”
ইমরান বুঝতে পারে সে কোনও দুঃস্বপ্নে নেই। সে সত্যিই এক জ্বীনের কবলে পড়েছে। ভয়ে হলেও, এক অদ্ভুত মোহে সে সম্মতি জানায়। সেই রাতেই ঘরের বাতিগুলো নিভে যায়, বাতাস ভারি হয়ে ওঠে, আর লায়লা তার সমস্ত অলৌকিক রূপে ধরা দেয়—না একেবারে ভয়ংকর, না পুরোপুরি সুন্দর—এক অদ্ভুত আবেশী শক্তি।
রাত গভীর হতে হতে ইমরান হারিয়ে যায় সেই সহবাসের রহস্যময় মুহূর্তে। সে যেন বাস্তব থেকে অনেক দূরে এক জগতে প্রবেশ করে—যেখানে শরীর আছে, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ নেই। লায়লার চোখে চোখ রেখে ইমরান টের পায়, সে আর আগের মতো নেই।
ভোর হলে ইমরান নিজেকে দেখে আয়নায়—চোখের পাতা কালো, চামড়া কিছুটা ফ্যাকাসে, আর গলায় আঁচড়ের দাগ। লায়লা আর নেই, কিন্তু বাতাসে এখনও তার গন্ধ রয়ে গেছে।
হঠাৎ আয়নার পেছনে সেই কণ্ঠস্বর আবার:
“তুমি এখন আমার… দিনের আলোয় তুমি মানুষ, আর রাতের আঁধারে তুমি আমার পুরুষ। আমাদের বন্ধন কখনও ছিন্ন হবে না…”
শেষ না এখনি না সবে তো শুরু..
তারপর থেকেই প্রতিদিন রাত নামার সাথে সাথে ইমরান বদলে যেতে থাকে। গ্রামের লোকজন বলে, ইমরানের ঘরে রাতভর আলো জ্বলে, আবার নিভে যায়। কেউ কেউ বলে, মাঝরাতে সে কারও সাথে কথা বলে, হাসে, কাঁদে, আর কারও নাম ধরে ডাকে…
লায়লা।
To Be Continue......Mehedi Hasan Shohag
Copyright Disclaimer:
This story is an original fictional work created and published exclusively by the Facebook page "সেরা ভূতের সত্য গল্প" (Sera Bhuter Sotto Golpo), authored by Mehedi Hasan Sohag. All rights, including the rights of reproduction, adaptation, distribution, and public performance, are reserved. No part of this content may be copied, reproduced, translated, or used in any form without express written permission from the author or the page administrator. Unauthorized use or duplication of this material is strictly prohibited and may result in legal action.