নিভৃত নক্ষত্রের নিচে
(একটি মহাকাব্যধর্মী কবিতা)
১. শুরু—আলো আর অন্ধকার
নিভৃত নক্ষত্রের নিচে একদিন,
জন্ম নিল এক বিন্দু শব্দহীন,
আলো ছিলো না, ছিলো না ছায়া,
ছিলো না সময়, ছিলো না মায়া।
তবু কোথা থেকে যেন এক ঢেউ এল,
নিস্তব্ধতা ভেঙে বলে উঠল—"চল!"
সেই থেকেই সূচনা, সৃষ্টি ও ধ্বংস,
চলতে লাগল নিঃশব্দ প্রতিজ্ঞা অনর্গল।
২. নদী ও নাবিক
এক নদী কেটে চলে বহুদূর পথ,
তার বুক জুড়ে জলের গান, চাতকের আর্ত স্বর।
সেই নদীর কিনারায় জন্ম এক নাবিকের,
চোখে ছিল দিগন্ত, আর বুকে আগুনের স্বর।
সে জানত না কোথায় যাবেনা সে,
শুধু জানত, দাঁড়িয়ে থাকা মানেই মরে যাওয়া।
তার হাতে ছিলো পাল, আর আশায় জোয়ার,
সেই তো শুরু নাবিকের প্রেম-পারাবার।
৩. প্রেম—দূরদেশের জোনাকি
নাবিকের হঠাৎ দেখা এক জোনাকির আলোয়,
রাতের গভীরতায় তার চোখে উঠল ঢেউ।
সে জোনাকি ছিল দূরদেশি, বাতাসের বর্ণে গাঁথা,
তার হাসিতে ছিল গোধূলির স্নিগ্ধতা।
“তুমি কে?”—নাবিক জিজ্ঞেস করে চুপে চুপে,
সে হাসে, বলে, “আমি আছি তোমার প্রতিটি নিরালায়,
যখন তুমি একা, আর চাঁদ মুছে যায়,
তখন আমি জ্বলি তোমার হৃদয়-ছায়ায়।”
৪. সময়ের কাহিনি
সময় বয়ে চলে নদীর মতোই,
নাবিক আর জোনাকি একে একে জড়িয়ে পড়ে গল্পে।
কিন্তু সময় কারো নয়, সে তো নিষ্ঠুর,
সে শুধু কেটে চলে, রেখে যায় ক্ষত-বিস্তার।
একদিন সেই জোনাকি হারিয়ে যায় নিঃশব্দে,
নাবিক দেখে আকাশ, তবু চাঁদ উধাও,
সে খোঁজে আলো, কিন্তু পায় কেবল ছায়া,
তবু চলে—কারণ জোনাকির কথা: “চল!”
৫. আত্মজিজ্ঞাসা ও মুক্তি
নাবিক থামে না, তার পথ নেই নির্দিষ্ট,
সে খুঁজতে থাকে নিজেকে প্রতিটি ঢেউয়ের পৃষ্ঠে।
সে বোঝে, প্রেম হারায় না, রূপ বদলায় কেবল,
স্মৃতি হয়ে বয়ে চলে নিরবধি ছন্দে।
তার হাতের রেখায় লেখা হয়—"অন্তহীন",
সে জানে, জীবনের মানে হলো খুঁজে যাওয়া।
না পাওয়ার মধ্যেই হয়তো লুকানো আছে পেয়েছি,
আর সেই জানাতেই জন্ম নেয় মুক্তি।
৬. সমাপ্তি—আলোয় ফিরে আসা
অনেক বছর পরে, অনেক ঢেউয়ের গল্প শেষে,
নাবিক ফিরে আসে নিজের নদীর ঘাটে।
সে দেখে, একটি শিশু নদীর ধারে দাঁড়িয়ে,
চোখে তার সেই একই আলো—অভ্যুদয়ের।
নাবিক হাসে, বুঝে যায়, চক্র পূর্ণ হলো,
জীবন ফিরে আসে নিজেই নিজের ছায়ায়।
নক্ষত্রের নিচে সে বলে, "আমি এসেছিলাম যেতে,
তবু রয়ে গেলাম ছুঁয়ে যেতে তোমাদের প্রাতে।"
Nirobkhan
Slet kommentar
Er du sikker på, at du vil slette denne kommentar?