দ্বিতীয় দাদা: ছায়ার সরণি
চিঠিটি পড়ার পর অনির্বাণ ঘরে ফিরে এল, কিন্তু সে ঘুমাতে পারল না। ভোরের আলো ফুটে উঠল ঠিকই, কিন্তু তার চোখে ছিল রাতের ছায়া। কে এই বার্তা পাঠালো? কোথা থেকে এল সেই কণ্ঠ?
সারাদিন সে গুম হয়ে থাকল। তার স্কুলের বন্ধুরা হাসল, খেলা করল, কিন্তু অনির্বাণ কেবল দূরে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল। মনে হচ্ছিল, তার চারপাশের জগৎটা যেন পাতলা হয়ে যাচ্ছে, ভেতর দিয়ে দেখা যাচ্ছে অন্য কিছু।
রাতে, ঠিক বারোটায়, সে আবার গেল সেই আমগাছের কাছে। এবার সে জানে — কিছু অপেক্ষা করছে।
এবার বাতাস ছিল আরও ভারী। দূরের শিয়াল ডাকছিল। গাছের পাতা যেন ফিসফিস করছিল।
হঠাৎ, ঠিক আগের মতোই, কানে এল সেই খসখস শব্দ। আবার একটি চিঠি — এবার একটু লম্বা, একটু গভীর।
এইবার সে শুনল এক সম্পূর্ণ বার্তা, যেন কানে নয়, মনে ভাসছে:
> “তুমি যা ভাবো, তার বাইরেও তুমি আছো।
স্মৃতি নয়, ভবিষ্যতের রেখাও লেখা রয়েছে তোমার অস্তিত্বে।
কিন্তু একটিই শর্ত — তুমি জানতে চেয়েছো, তাই তোমাকে হাঁটতেই হবে।
শুরু করো ‘ছায়ার সরণি’ দিয়ে।
কাল রাতে পূর্ব জঙ্গলে, যেখানে তিনটি বটগাছ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে —
সেখানে তোমার অপেক্ষায় প্রথম দ্বার।”
অনির্বাণ থমকে গেল। পূর্ব জঙ্গল? সেই জঙ্গল তো কারও যাওয়ার জায়গা নয় — বহুদিন ধরে বলা হয় সেখানে নাকি “ছায়া” দেখা যায়, নিঃশব্দে চলাফেরা করে কেউ।
কিন্তু তার মনে ভয় ছিল না। বরং এক অদ্ভুত উত্তেজনা, এক খিদে কাজ করছিল — সে জানতে চায়, জানতেই হবে।
পরদিন বিকেলেই সে প্রস্তুত হলো। গলায় একটা ব্যাগ, ব্যাগে একটা টর্চ, একটু জল, আর কিছু খাবার।
সূর্য ডোবার ঠিক আগেই, সে রওনা দিল — পূর্ব জঙ্গলের দিকে।
তিনটি বটগাছ তার অপেক্ষায় ছিল।
আর বটগাছের নিচে ছিল একটি শূন্য জায়গা — যেন মাটি কেটে নেওয়া, অথচ কারও চোখে ধরা পড়ে না।
সেখানে দাঁড়াতেই হাওয়ার দোল পাল্টে গেল।
তখনই খুলে গেল প্রথম দ্বার — ছায়ার সরণি।
আর অনির্বাণ ঢুকে পড়ল এমন এক পথে, যেখান থেকে ফেরা মানেই হয়ত আর আগের নিজেকে ফিরে না পাওয়া।
Suraiya Soha
Tanggalin ang Komento
Sigurado ka bang gusto mong tanggalin ang komentong ito?