চতুর্থ দাদা: আয়নার গ্রন্থাগার
আলো ফুঁড়ে নামার পর অনির্বাণ নিজেকে আবিষ্কার করল এক অদ্ভুত স্থানে।
চারদিকে শুধু আয়না।
ছোট আয়না, বড় আয়না, বাঁকানো আয়না, ফাটল ধরা আয়না —
আর প্রত্যেক আয়নার মধ্যে একটি করে ভিন্ন অনির্বাণ।
কেউ হাসছে, কেউ কাঁদছে, কেউ রাগে ফুঁসছে, কেউ একেবারে ফাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
কিন্তু সবচাইতে অদ্ভুত আয়নাটি ছিল ঠিক কেন্দ্রে —
একটি গোল আয়না, যার ওপর ধুলো জমে আছে, আর তার গায়ে খোদাই করা:
> "যে নিজেকে দেখতে ভয় পায়, সে নিজের নাম জানে না।"
অনির্বাণ ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল সে আয়নার দিকে। তার প্রতিচ্ছবি নেই সেখানে।
সে আয়নাটা মুছে দিল নিজের হাত দিয়ে।
আর তখন...
আয়নার ভেতরে খুলে গেল এক গোপন দরজা —
পেছনে এক বিরাট, নিরব গ্রন্থাগার। নাম — “আত্মচিত্র পাঠাগার”।
এই গ্রন্থাগারে বইয়ের পৃষ্ঠা নেই,
প্রতিটি বই এক একটি অনুভূতি দিয়ে তৈরি।
একটা বই খুললেই বুকের ভেতর কান্না এসে যায়।
আরেকটা খুললে হঠাৎ পুরোনো গন্ধে ডুবে যেতে হয় —
মায়ের কোলে, শৈশবের মাঠে, প্রথম ভয়ের রাতে।
অনির্বাণ বুঝতে পারল — এ তারই স্মৃতির গ্রন্থাগার।
তবে এখানে এমন কিছু অধ্যায়ও আছে, যা সে ভুলে গেছে, অথবা কখনো জানেই না।
হঠাৎ, এক কোণার বুকশেলফে, সে খুঁজে পেল একটা বই যার শিরোনাম:
> “তুমি যাকে মনে করো, সে নয় তুমি।”
বইটি খুলতেই ঝরে পড়ল কাঁচের টুকরোর মতো শব্দ:
> “তোমার চেতনা বহুস্তরবিশিষ্ট।
একটি সত্তা সময়কে অনুভব করে, আরেকটি সত্তা সময়কে নির্মাণ করে।
তুমি এখন কেবল অনুভব করছো — নির্মাণ এখনও শেখা হয়নি।”
এই পাঠাগারের এক কোণে তখন জ্বলে উঠল একটি নীলদীপ্ত দরজা।
তার পাশে লেখা:
> “নির্মাণের ঘর — কেবল তাদের জন্য, যারা স্মৃতিকে অস্বীকার করে না।”
অনির্বাণ জানে, এই দরজার ওপারে সে নিজের বোধের প্রকৃত নির্মাতা হয়ে উঠবে।
সে এগিয়ে গেল, থামল না। দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে গেল...
আর তখনই শুরু হলো তার সর্বপ্রথম স্বপ্ননির্মাণ —
যেখানে বাস্তব ও কল্পনার রেখা বিলীন।
Suraiya Soha
মন্তব্য মুছুন
আপনি কি এই মন্তব্যটি মুছে ফেলার বিষয়ে নিশ্চিত?