পঞ্চম দাদা: সময়ের শাসক
নীলদীপ্ত দরজার ভেতরে পা রাখার মুহূর্তেই অনির্বাণ এক বিচিত্র চাপে পড়ল —
না, তা ভয় নয়।
এ যেন এক অভ্যন্তরীণ বিস্ফোরণ, যেখানে প্রতিটি স্নায়ু আলাদা করে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
এই ঘরটি ছিল নির্মাণের ঘর —
সময় এখানে সোজা রেখায় চলে না, বরং জলের মতো বয়ে যায় অনির্বাণের অনুভবের গতিতে।
প্রথমেই সে দেখল একটা কাচের টেবিল, যার ওপরে একটা জ্যামিতিক মানচিত্র ঝুলছে।
এই মানচিত্রে সময় লেখা নেই ঘড়ির কাঁটায়, লেখা আছে ইচ্ছার রেখায়।
একটি রেখা তার শৈশবে গিয়ে মিশেছে — যেখানে সে একা দাঁড়িয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিল।
একটি রেখা ভবিষ্যতের দিকে চলে গেছে — যেখানে তার হাতে ধরা আছে আগুন।
হঠাৎ, বাতাসে ভেসে উঠল আরেকটি বার্তা —
এবার কোনো চিঠি নয়, কোনো কণ্ঠও নয় — এটি যেন তিনটি শব্দ মাত্র, কিন্তু তাতে ছিল অজস্র স্তর:
> **“তুমি নির্মাতা হলে, উত্তরাধিকারী হবে।
কিন্তু আগে নির্মাণ করো এক মুহূর্ত, যা আগে কখনো ঘটেনি।”
অনির্বাণের সামনে তখন ভেসে উঠল একটি ফাঁকা ঘর।
ঘরটি সাদা, অথচ তার মধ্যে কালো সব দাগ—
কিছু ব্যথা, কিছু অনুশোচনা, কিছু অসমাপ্ত আকাঙ্ক্ষা।
তার হাতে একটি তুলি ধরা —
এই তুলির আঁচড়ে গড়ে উঠবে এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত, যা কোথাও কোনোদিন ঘটেনি।
সে চোখ বন্ধ করল।
তার মনে এলো:
একটি গাছ — কিন্তু গাছের ডালে পাতা নয়, ভাষা ফোটে।
একটি নদী — কিন্তু জলের বদলে স্মৃতি বয়ে যায়।
একটি পাথর — যার ভেতর ঘুমিয়ে আছে একটি শব্দহীন গান।
সে তুলির প্রথম আঁচড় দিল।
ঘরটা বদলাতে লাগল —
সাদা দেয়ালে উঠে এলো এক দৃশ্য —
এক শিশু, এক বৃদ্ধ, আর এক যুবক — তিনটি বয়স একসাথে একটি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
এই ছিল তার নির্মিত মুহূর্ত —
একটি সময়, যেখানে অতীত, ভবিষ্যৎ আর বর্তমান একই সাথে মুখোমুখি।
ঠিক তখন, ঘরের ছাদ ভেঙে এক আলোর কুন্ডলী নেমে এল।
তার মাঝে একটি পদক্ষেপের ছাপ।
তার নিচে লেখা:
> “স্বপ্ন যদি নির্মাণ করো, তবে জাগরণ হবে সৃষ্টি।
এবার এগিয়ে চলো — সময়ের গুহায়।”
গুহা?
হ্যাঁ, সামনে খুলে গেল এক প্রাচীন শিলা-গঠিত পথ —
অন্ধকার, জ্যামিতিক, আর নিঃশব্দ।
এই গুহাই ছিল সময়ের অন্তঃস্থলে প্রবেশের পথ —
যেখানে সময় নিজেকে ছিন্ন করে, পুনর্গঠিত হয়।
অনির্বাণ আর পিছনে ফিরে তাকাল না।
সে জানে — এখন সে শুধু প্রশ্ন করে না, উত্তরও তৈরি করতে শিখেছে।
Suraiya Soha
Verwijder reactie
Weet je zeker dat je deze reactie wil verwijderen?