---
গল্প: “শেষ চিঠির ঠিকানা”
১
ছোট্ট এক গ্রাম—তিতাসপুর।
সেখানে থাকে একজন ডাকপিয়ন, নাম সাদু চাচা।
বয়স আশি ছুঁই ছুঁই, তবু প্রতিদিন নিয়ম করে সকাল ছয়টায় বের হন চিঠি বিলিতে।
গ্রামের মানুষ বলে—তিনি অলৌকিক।
কারণ তিনি এমন চিঠিও বিলি করেন,
যার প্রেরক মারা গেছে,
এবং যার ঠিকানা জানেই না কেউ।
২
একদিন গ্রামের এক বালক, রাহুল, সাদু চাচার পিছনে ছুটে গেল।
বলল, “চাচা, আপনি চিঠিগুলো কোথা থেকে পান?”
সাদু চাচা একটু হেসে বললেন—
> “রাহুল, কেউ যখন মরে যায়, তার মনের ভিতরে রয়ে যায় না বলা কথা।
সেগুলো ভেসে বেড়ায় বাতাসে।
আমি কেবল সেই বাতাসে কান পাতি।”
রাহুল অবাক।
তবু সে বিশ্বাস করে ফেলল।
৩
একদিন গভীর রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল।
সাদু চাচা পকেট থেকে একটা পুড়তে থাকা চিঠি বের করলেন।
চিঠিটায় লেখা ছিল:
> "প্রিয় মা,
আমি তোমার কাছে আর ফিরতে পারিনি।
কিন্তু জানো মা, যুদ্ধের শেষ রাতে আমি শুধু তোমার ডাকা নামটাই শুনেছিলাম...
ভালো থেকো মা।"
—তোমার হারিয়ে যাওয়া ছেলে, করিম।
রাহুল বলল, “কিন্তু করিম তো বিশ বছর আগে মারা গেছে!”
চাচা বললেন, “তবু তার কথা রয়ে গেছে বাতাসে। আমি শুধু পৌঁছে দিচ্ছি।”
৪
পরদিন ভোরে চাচা আর দেখা গেল না।
তবে গ্রামের ডাকঘরের পাশে হঠাৎ গজিয়ে উঠল একটা ছোট কাঠের বাক্স।
তার ওপরে লেখা—
“শেষ চিঠির ঠিকানা”
যারাই কোনো না বলা কথা রেখে দিত সেখানে,
সেই কথাগুলো পৌঁছে যেত ঠিক মানুষের কাছে।
মাঝেমধ্যে কেউ বলত—
"আমার মৃত বাবার স্বপ্নে একটা চিঠি এসেছিল..."
"আমার অন্ধ দাদির হাতে কে যেন ছুঁইয়ে দিয়েছে আমার মায়ের লেখা..."
"যার সাথে ঝগড়া করেছিলাম—সে আজ কাঁদছিল, হাতে ছিল আমার চিঠি..."
৫
রাহুল বড় হয়ে এখন সেই বাক্সের দেখাশোনা করে।
সেই বাক্সে ঢোকে না লেখা কাগজ,
বরং ঢোকে অভিমান, ভালোবাসা, অনুশোচনা আর আশ্রয় খোঁজার আর্তি।
---
শেষ লাইনে লেখা থাকে:
> “প্রতিটি না বলা কথার একটা ঠিকানা আছে।
শুধু দরকার একজন শ্রোতা।
—সাদু চাচা”
---
শেষ।
---