১৪৫৩ সালের ২৯ মে। প্রায় এক হাজার বছরের অজেয় প্রাচ্যের এক রাজধানী কনস্টান্টিনোপল অবশেষে মুসলিম বাহিনীর হাতে বিজিত হয়। উসমানি সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহের নেতৃত্বে এই বিজয় শুধুমাত্র একটি সামরিক সাফল্য ছিল না, বরং এটি ছিল একটি নবযুগের সূচনা এবং হাদিসে ঘোষিত এক মহাসংবাদ পূরণের ঐতিহাসিক বাস্তবায়ন।
কনস্টান্টিনোপল, যা আজকের তুরস্কের ইস্তাম্বুল, একসময় ছিল বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী। খ্রিস্টীয় দশম শতক থেকে এই শহরকে মুসলমানরা অনেকবার অবরোধ করে, কিন্তু সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়—যতক্ষণ না উসমানী সুলতান মুহাম্মাদ বিন মুরাদ (মুহাম্মাদ ফাতিহ) দৃঢ় পরিকল্পনা ও বিচক্ষণ সেনা নেতৃত্বে শহরটি দখল করেন।
সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ তখন মাত্র ২১ বছর বয়সী যুবক। তাঁর অদম্য সাহস, উন্নত প্রযুক্তি এবং ঈমানি অনুপ্রেরণায় ২৯ মে ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল বিজিত হয়। এই শহরটি ছিল খ্রিস্টান জগতের একটি সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি। প্রায় দুই মাসব্যাপী (৬ এপ্রিল থেকে ২৯ মে) অবরোধ শেষে তিনি নগরীতে প্রবেশ করেন।
এই বিজয়ের ফলে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে এবং ইস্তাম্বুল উসমানি সাম্রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। সুলতান মুহাম্মাদ শহরটিকে ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমন্বয়ের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। খ্রিস্টান চার্চ ‘আয়া সোফিয়া’কে মসজিদে রূপান্তর করেন, যা তখন একটি ঐতিহাসিক প্রতীক হয়ে ওঠে।
এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় রেনেসাঁর দরজা উন্মুক্ত হয় এবং মধ্যযুগের সমাপ্তির ঘণ্টা বেজে ওঠে। এটি ইসলামি সাম্রাজ্যের বিস্তারে নতুন দিগন্তের সূচনা করে।
কনস্টান্টিনোপলের বিজয় শুধুমাত্র ইতিহাসের একটি ঘটনা নয়; এটি মুসলিম বিশ্বের জন্য ঈমান, প্রজ্ঞা ও প্রচেষ্টার এক চিরন্তন নিদর্শন। সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ আজও স্মরণীয় তাঁর জ্ঞান, নেতৃত্ব এবং ইসলামের জন্য তাঁর অবদানের জন্য।