হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন। একইসঙ্গে ইসলামি ঐক্যের প্রতীক। হজের সময় সারা বিশ্বের সামর্থ্যবান মুসলিমরা মক্কায় চলে আসেন হজ করতে। ভাষা-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠীতে বৈচিত্র্য থাকলেও আকিদা-বিশ্বাস ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে সবাই এক—সে কথারই সাক্ষ্য দেয় সবাই। সবার কণ্ঠে ধ্বনিত হয় লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ‘হাজির হে প্রভু আমি হাজির’।
মুসলিম মিল্লাতের এই প্রাণকেন্দ্রে সবাইকে হজের ঘোষণা দিয়েছিলেন আল্লাহর নবী হজরত ইবরাহিম (আ.)। মহান আল্লাহই তাঁকে ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দেন। বলেন- ‘মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দাও— ‘তোমাদের ওপর হজ ফরজ।’
ইবরাহিম (আ.) আরজ করলেন, হে আল্লাহ, (এটা তো একটা বিজন মরুভূমি, এখানে কোনো জনবসতি নেই।) আর যেখানে জনবসতি রয়েছে সেটা তো অনেক দূরে, সে পর্যন্ত আমার আওয়াজ কীভাবে পৌঁছাবে! আল্লাহ তাআলা বললেন, তোমার দায়িত্ব কেবল ঘোষণা দেওয়া আর সারাবিশ্বে এ ঘোষণা পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার।
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে- ‘আল্লাহ বলেন, এবং স্মরণ করো, যখন আমি ইবরাহিমের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম সেই গৃহের স্থান, তখন বলেছিলাম, আমার সঙ্গে কোনো শরিক স্থির করো না এবং আমার গৃহ পবিত্র রেখো তাদের জন্য, যারা তাওয়াফ করে এবং যারা নামাজে দাঁড়ায়, রুকু করে ও সিজদা করে এবং মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে, তারা তোমার কাছে আসবে হেঁটে ও ক্ষীণকায় উটের পিঠে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। যাতে তারা তাদের কল্যাণকর স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে।’ (সুরা হজ: ২৬-২৮)
আল্লাহর আদেশে হজরত ইবরাহিম (আ.) মাকামে ইবরাহিমে দাঁড়িয়ে (যা আল্লাহ তাআলা উঁচু করে দিলেন। অপর এক বর্ণনা অনুযায়ী জাবালে আবি কুবাইস নামক পাহাড়ে আরোহণ করে) দু—কানে অঙ্গুলি রেখে চারিদিকে এ ঘোষণা দিলেন, হে মানবমণ্ডলী, তোমাদের রব একটি ঘর নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের ওপর ওই ঘরের হজ ফরজ করেছেন। অতএব তোমরা আপন রবের আদেশ পালন করো।
তাফসিরে এসেছে, ইবরাহিম (আ.)-এর এই ঘোষণার পর পৃথিবীর পাহাড়গুলো অবনত হয়ে যায় এবং তাঁর আওয়াজ পৌঁছে যায় পৃথিবীর দিক-দিগন্তে। ইবরাহিম (আ.)-এর এ আওয়াজ আল্লাহ তাআলা সব মানুষের কানে কানে পৌঁছে দেন। এমনকি যারা ভবিষ্যতে কেয়ামত পর্যন্ত পৃথিবীতে আসবে, তাদের কানে পর্যন্ত এ আওয়াজ পৌঁছে দেওয়া হয়। যাদের ভাগ্যে আল্লাহ তাআলা হজ লিখে দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই এ আওয়াজের জবাবে ‘আমি হাজির’, ‘আমি হাজির’ বলে হাজির হওয়ার স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ইবরাহিম (আ.)-এর ঘোষণার জবাবই হচ্ছে হজে ‘লাব্বাইক’ বলার আসল ভিত্তি। (কুরতুবি, ১২তম খণ্ড, পৃ-২৮)
উল্লেখ্য, হজের প্রতিদান অনেক বড়। রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে হজ করল এবং এসময় অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকল, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে।’ (বুখারি: ১৫২১)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة এক ওমরা আরেক ওমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহর ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়। আর হজে মাবরুরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (সহিহ বুখারি:: ১৭৭৩; সহিহ মুসলিম: ১৩৪৯; মুসনাদে আহমদ: ৭৩৫৪; সহিহ ইবনে হিববান: ৩৬৯৫)