#নীল_সমুদ্রের_বুকে
#পর্ব-৩২
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ
ক্লান্ত ঘর্মাক্ত রুশা বাড়ি ফিরলো রাত দশটার দিকে। জ্বরটা গতকালই সেরেছে তার। দরজাটা খুলে দিলেন রুশার মা রুমানা জাহান। মেয়ের ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হলো তার।
‘ একটু কম পরিশ্রম কর মা, তোর বিয়ে হয়েছে জামাই তো পর্যাপ্ত টাকা পাঠায় তবুও কেন যে এতো পরিশ্রম করিস। ’
রুশা মা বাবার একমাত্র মেয়ে। বাবা রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার। রুশা সবসময়ই চেয়েছে মা বাবার দায়িত্ব নিতে। সেজন্য সে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে। বিয়ের পর থেকেই সীমান্ত মায়ের একাউন্টে ও রুশার একাউন্টে টাকা পাঠায়। রুশার একাউন্টে পাঠায় তা নিয়ে রুশার আপত্তি নেই, সে যেহেতু বউ সীমান্ত বউয়ের খরচ পাঠাতেই পারে। কিন্তু ওর মায়ের একাউন্টে পাঠানোটা রুশা প্রথম পছন্দ করেনি। মা ওর বাবাও ওর, মেয়ের জামাই হয়ে সীমান্ত কেন টাকা পাঠাবে? রুশা তো খুব ভালো মতোই মা বাবার দায়িত্ব নিতে পেরেছে। তারপর অবশ্য ফোনে সেটা মিটমাট হয়। সীমান্ত জানিয়েছে সে নিজের মা বাবা মনে করেই পাঠায়। এতোটুকু সে মন থেকে করে, রুশা নিজের পরিবারের দায়িত্ব সারাজীবন নিক তাতে সীমান্ত বাঁধা দিবে না।
‘ ক্ষিধে পেয়েছে মা। ’
‘ রুমে যা তোদের দুজনের খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি। ’
‘ দু'জন? বাবা ঘুমায়নি এখনো? ’
‘ তোর বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে। ’
রুশা থমথমে দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলো। দু'জন বলতে মা যে কাকে বুঝিয়েছেন সেটা বুঝতে পেরেই কি না তার মনটা অদ্ভুত ভাবে নেচে উঠলো। মানুষটা তবে চলে এসেছে।
রুমের দরজাটা ঠেলা দিতেই খুলে গেলো। রুশা অন্ধকার রুমটার দরজার সামনে দাড়িয়ে দুরুদুরু বুকে ডাকলো, ‘ শাহবাজ? ’
ঠিক তখনই রুশা নিজের পেছনে কারো অস্তিত্ব অনুভব করলো। পেছন থেকে দু'টো হাত তাকে জড়িয়ে ধরেছে আষ্ঠেপৃষ্ঠে। গালে টুপ করে চুমু দিয়ে জানান দিচ্ছে সে রুশার জন্য অপেক্ষা করছিল অনেকক্ষণ।
‘ কখন এসেছেন? ’
‘ সন্ধ্যায়। ’
পরিচিত গলা শুনে রুশার মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠলো। এই গলাটা শুনতে সে চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করছিল।
‘ আপনি আমাকে অনেক অপেক্ষা করিয়েছেন মিসেস আফরিন। আমার ফোন রিসিভ করেননি, মেসেজ চেক করেননি। মায়ের ফোনে কল দিয়ে আপনাকে চাওয়ার পরও আপনি কথা বলেননি। এই এতো অপেক্ষা করানোর জন্য আপনাকে আমি ঠিক কিরকম শাস্তি দিতে পারি বলুন তো? ’
‘ যা ইচ্ছে। ’
সীমান্ত কুটিল হাসলো,
‘ সত্যি? ’
‘ আপনাকে আমার সাথে কোয়ার্টারে যেতে হবে। সেখানে আমার সাথে থাকতে হবে। আপনাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না আফরিন। কাজ শেষে ঘরে ফিরলে সব শূন্য লাগে। বলুন আফরিন, যাবেন আমার সাথে? আপনার আমার জন্য একটি সংসার অপেক্ষা করছে, আমাদের সংসার। ’
রুশা ঠেলে সরিয়ে লাইট অন করলো। সীমান্ত এসে বসলো বিছানায়। রুশার পড়োনের লং শার্টটি থেকে স্মেল আসছে। ওটা সে বিছানায় বসেও পাচ্ছে। সীমান্ত প্রশান্তির নিঃশ্বাস অনুভব করলো। অপেক্ষা করলো রুশার উত্তরের। রুশা অবশ্য কিছু বললো না, ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে রুশা এসে বসলো সীমান্তের পাশে। হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘ আমাকে একটু জড়িয়ে ধরুন তো। আমার হাসফাস লাগছে। ’
তখনই নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো সীমান্ত। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
‘ মা বাবার জন্য চিন্তা করছো তাই না? চিন্তা করো না, আমি আছি তো। কোয়ার্টারে থেকেই তুমি জব কন্টিনিউ করতে পারবে। আর আমি কোনো মিশনে থাকলে তুমি মা বাবার কাছেই থাকবে। চিন্তা করো না পাগলি। তোমার মন সায় না দিলে যাওয়ার দরকার নেই। আমি সামলে নিবো ঠিক। ’
রুশা মুখ তুলে চোখে চোখ রাখলো। নিয়ম অনুযায়ী ওর থাকার কথা সীমান্তের পরিবারের সাথে। মানুষটা ওকে কোনোরকম চাপ দিচ্ছে না, বরং স্বাধীনতা দিয়েছে অনেক বেশি। সীমান্ত চাইলেই পারে ওকে নিয়ে যেতে, সেই অধিকার ওর আছে। কিন্তু তবুও মানুষটা রুশার অনুমতি চায় সবকিছুতে। যেমনটা চেয়েছিল বাসর রাতে কিংবা জাহাজে কাছাকাছি আসতে। রুশার ঠোটের কোণে হাসি দেখে সীমান্তও হাসলো।
‘ তুমি তবে রাজি? ’
‘ বউ ঘরে কবে তুলছেন শাহবাজ? ’
সীমান্ত অবাকের উপর অবাক হচ্ছে। রুশা ওর ক্লিন গালে হাত রেখে বলল,
‘ নিয়ম অনুযায়ী তো আমাকে আপনার সাথেই থাকা উচিত সারাজীবন, সবকিছুতে এতো অনুমতি নিতে যান কেন বলুন তো? ’
‘ মিসেস আফরিন? ’
‘ হু? ’
‘ রিসিপশনটা তবে আগামীকাল করে ফেলি? ’
‘ সবকিছুর প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন তবে? ’
‘ না, কবে রাতের মধ্যে ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ’
‘ ঠিক আছে করুন। তবে! ’
‘ তবে? ’
রুশা চোখে চোখ রেখে হাসলো,
‘ আমি কিন্তু আবার বউ সাজবো। ’
সীমান্ত ঠোঁটের কোণে হাত বুলিয়ে কাছে টেনে নিলো।
‘ আপনি আমার জন্য সারাজীবন বউ সাজবেন মিসেস শাহবাজ, তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। এখন আমাকে একটু আদর করুন তো, আমি আপনার অভাবে দূর্বল হয়ে পড়ছি। শক্ত হয়ে আবার কাজে ফিরতে হবে তো ম্যাডাম। ’
রুশা সীমান্তকে জাপ্টে ধরতেই সীমান্ত খুবই আস্তে করে আর্তনাদ করলো। রুশা হতভম্ব হয়ে ওর মুখের দিকে তাকালো। সীমান্ত ওর বুকে মাথা রেখে বলল,