#
"ন ন না না এসো না।আমি রূপকথা কে নিয়ে আমার স্কুল ফ্রেন্ড মিতার বাড়িতে এসেছি।ওর মা ছাড়তে চাইছে না।আমাদের যেতে দেরি হবে।আবার নাও ফিরতে পারি।রূপকথার নাকি এখানে এসে ভালো লাগছে।
মেয়ের প্রতি আমজাদ হায়দার এর অগাধ বিশ্বাস।তাছাড়া মেয়েকে ঘরের কোণে চেপে রাখতেও পছন্দ করেন না তিনি।বাবার ঘরে যতদিন আছে পাখা মেলে উরুক না।সংসার শিকল ভেঙে মেয়েরা কি আর দূর আকাশে ডানা মেলতে পারে?
আমজাদ হায়দার আর কথা বাড়ালেন না।ফোন রেখে দিলেন।আমজাদ হায়দার ফোন কাটতেই ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়লো নেলি।এরপর আবার বাইরের দৃশ্যে মনোযোগী হলো।
রেস্টুরেন্ট থেকে কয়েক পদের খাবার নিয়ে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজেই বাইক চালিয়ে ফিরে এলো অভিরূপ।বাড়ির আঙিনায় ঢুকতেই কতগুলো ডাল ভেঙে পড়ে যাওয়া লিচু তার নজরে এলো।দ্রুত পায়ে সেগুলোর নিকট গিয়ে দুই হাতে কুড়িয়ে দৌড়ে ঘরে ফিরে এলো।পুরোটা দৃশ্য নেলির নজরে বন্দি হলো।হুট করেই অভিরূপ ছেলেটার প্রতি অনন্য এক ভালোলাগা কাজ করলো তার।
অভিরূপ ঘরে এসে কামালের উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লো।কামাল দৌড়ে এসে ভিজে জুবুথুবু হওয়া অভিরূপ কে দেখে বলে উঠলো
"তাড়াতাড়ি গোসল সেরে পোশাক পাল্টে নাও।আমি খাবার সার্ভ করছি।
অগত্যা অভিরূপ দৌড়ে দুতলায় সারফরাজ এর ঘরের সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়লো।সারফরাজ এগিয়ে দরজা খুলে অভিরূপ কে এমন অবস্থায় দেখে কিছুক্ষন নীরব রইলো।এরপর শুধালো।।
"ভিজেছিস কেনো?
চুল ঝাড়তে ঝাড়তে অভিরূপ বললো।
"বাসায় মেহমান এসেছে সেই হুশ আছে তোর?কটা বাজে ঘড়িতে?
অভিরূপ এর কথায় দেয়ালের ঘড়িতে নজর দিলো সারফরাজ।প্রায় তিনটার কাছাকাছি।সারফরাজ প্রত্যুত্তর করবার আগেই অভিরূপ বললো
"টাওয়েল,টিশার্ট আর ট্রাউজার দে প্লিজ।খুব ঠান্ডা লাগছে।
সারফরাজ দ্রুত হাতে কাবার্ড খুলে একটা ডার্ক নেভি ব্লু টিশার্ট আর ব্ল্যাক ট্রাউজার এগিয়ে দিলো অভিরূপ এর পানে।এরপর বললো
"পোশাক পাল্টে এখানে আয়।কথা আছে।
অভিরূপ চলে যেতেই রূপকথা সারফরাজ এর পানে তাকিয়ে বলল
"কটা প্রেম করলে এ পর্যন্ত?
প্রেমের কথা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠলো সারফরাজ।তার মতো অমানুষের সাথে প্রেম করে বেঘোরে প্রাণ হারাতে কে চাইবে?
আর এসব প্রেম ভালোবাসা করার অঢেল সময় আছে নাকি তার?প্রেমিকার ঠোঁটে টাস টাস সিল মারার চাইতে নিজের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো অপছন্দের মানুষের জীবনে সিল মারা বেশি আনন্দ যার কাছে তার আবার কিসের প্রেম প্রীতি?সারফরাজ কে নিরুত্তাপ দেখে রূপকথা বললো
"বড় হয়ে অনেক সুদর্শন হয়েছো।তোমাকে দেখে আমার কেমন কেমন যেনো ফিল হচ্ছে।
"তুমিও বড় হয়ে বেহায়া হয়েছো।ভেবেছিলাম বড় হয়ে বুঝদার হবে।কিন্তু তার বদলে মাথামোটা গাঁধী হয়েছো।এহেন গাঁধী মেয়ে লোক আমার দুচোক্ষের বিষ।যাও বাড়ি ফিরে যাও।
সারফরাজ এর মুখে আকস্মিক এহেন শব্দ বোমায় স্তম্ভিত হলো রূপকথা।মনে হচ্ছে তার কান ভুল শুনলো।তাই পুনরায় শুধালো
"কিহ আমি বেহায়া?আমি মাথামোটা গাঁধী?
সারফরাজ ভনিতা না করে বলে উঠলো
"নয়তো কি?
"কিভাবে আমি বেহায়া,মাথা মোটা গাঁধী?
ধমকে জিজ্ঞেস করলো রূপকথা।সারফরাজ ইতস্তত করে নিচু গলায় বলল
"এহেন ঝুম বরাবর বৃষ্টিতে একটা পুরুষ মানুষের সাথে দরজা বন্ধ করে আটকে রয়েছ।মানুষ কি ভাবছে?
"দরজা বন্ধ করে তোমার শ্লীলতাহানি করছি?
রূপকথার বেফায়েস কথায় সারফরাজ দুই হাতে মুখ চেপে ধরে বলে উঠলো
"আস্তাগফিরুল্লাহ।
সারফরাজ এর এহেন বোকা বোকা অবয়ব দেখে ফিক করে হেসে দিলো রূপকথা।এরপর বললো।
"ঠিক আছে বাইরে চলো।খিদে পেয়েছে।।।
মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে থাকা অসংখ্য চকলেট এর খোসার পানে তাকিয়ে সারফরাজ শুধালো
"ওই ছোট পেটে কি আছে রূপকথা?দৈত্য দানবের বসবাস?
"হাত দিয়ে ধরবে?
বলেই সারফরাজ এর কাছে এগিয়ে এসে হাত টেনে ধরলো রূপকথা।রূপকথার অকপটে বলা কথায় আর স্পর্শে ছিটকে সরে এসে সারফরাজ বললো
"ইয়া আল্লাহ ছি ছি।আমি ওসব করি না।
সারফরাজ এর চরিত্র সম্পর্কে ইতোমধ্যে অবগত হয়ে গেছে রূপকথা।মানুষটা সত্যিই তার সেভিয়র।সেই আগের মতোই রয়েছে।একটুও পাল্টায় নি।আচ্ছা তাদের এই সম্পর্কের নাম কি এখন?কোন সম্পর্ক ধরে সারফরাজ এর আশেপাশে ঘুরঘুর করবে রূপকথা?সেভিয়র?পরিচিত মানুষ নাকি বন্ধু?
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে পায় না রূপকথা।এদিকে সারফরাজ দরজা খোলে বাইরে বের হতে নিতেই রূপকথা এক বিশাল আবদার করলো।
"আমাকে ছোট বেলার মতো একবার কোলে নেবে সারফরাজ?বহু দিন কোলে উঠিনা।আমার বাবার পর তোমার মত কেউ এতো যত্ন করে আমায় কোলে নিতে পারে নি।তোমার গলা জড়িয়ে ধরে কোলে উঠার মতো প্রশান্তি আমি আর কোথাও পাইনি।নেবে একবার?
রূপকথার আবদারে সারফরাজ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।ঘিলু হীন মেয়েটা আজ তাকে এভাবে পেয়ে বসেছে।পরিচয় না দিলেই বোধ হয় ভালো ছিলো।এতবড় মেয়েকে কিভাবে কোলে