গল্প
তখন জাফর সাহেব গর্জে বলেন
— আমার মেয়েকে আমি দেখাব। তুমি কী করবে?
এটা শুনে রাগে ফেটে পড়েন মাহিদ ভাই। বুক ফাটিয়ে, গর্জন তোলা কণ্ঠে চিৎকার করে ওঠেন,
— আপনার মেয়ে আমার স্ত্রী! আমার জীবন! আমি আমার বউকে কারো সামনে দেখাব না। কি করবেন আপনি? করে নিন! আমি আমার জারাকে কোনো পুরুষের সামনে আনব না, এটাই আমার শেষ কথা!"
উনার এমন হুংকারে ঘরও কেঁপে উঠে মনে হয়।
মাহিদ ভাইয়ের বাবা রাগে ধমকে উঠেন,
— এইভাবে চেঁচাচ্ছো কেন? থামো মাহিদ!"
কিন্তু মাহিদ ভাই থামেন না। উত্তেজনায় কাঁপছে উনার বুক, চোখের পাতা সহ।ঠিক তখনই, জারা ধমকে ওঠে উনার বাহুতে নিজের দুই হাত রেখে বলে
— চুপ করুন আপনি!"
ঘরের সমস্ত আওয়াজ থেমে যায়। মাহিদ ভাই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন জারা কথায়। ধীরে ধীরে মুখ ঘুরিয়ে তাকান জারার দিকে।জারা উনার গালে হাত রেখে মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,
— আমি কি বলেছি, ঐ ছেলের সামনে বসব? বলেছি আমি? বলুন, বলেছি?"
মাহিদ ভাই দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস নেন। মাথা নাড়ান না... না বোধক।
জারা আবার বলে
— তাহলে এত চিল্লানোর কি? আমি কখনোই ঐ ছেলের সামনে বসব না।"
মাহিদ ভাই এবার একটু শান্ত হন। অসহায় কণ্ঠে বলেন
— "তোমার বাবা।
জারা তখন মাহিদ ভাইয়ের কপালে হাত বুলিয়ে স্নেহময় কণ্ঠে বলে,
— আমি শুধু আপনার স্ত্রী। একান্ত আপনার। আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী। আমার জীবনে কখনোই অন্য পুরুষ আসেনি, আর আসবেও না।"
— আমার আব্বু তাঁর মেয়েকে নিয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্তু আমি কি সবসময়ই তাঁর কথা শুনব? আপনি কেন বেয়াদবি করছেন তাঁর সাথে?"
জারার এই মধুর অথচ দৃঢ় কথায় মুহূর্তটা নরম হয়ে আসেন মাহিদ ভাই! কিন্তু মাহিদ ভাই হঠাৎ চোখ তুলে অগ্নিদৃষ্টি নিয়ে তাকান জারার বাবার দিকে। গম্ভীর গলায় বলেন,
— যদি আমাদের মাঝে কোনোদিন বিচ্ছেদ হতো, তবে তার একমাত্র কারণ হতেন আপনি আপনার এই অন্যায় আবদার, এই অন্ধ গোঁড়ামি!"
জাফর সাহেব এবার কিছু বলতে পারেন না। মাথা নিচু করে ফেলেন। দীর্ঘ এত বছর পর নিজের ভুলটা একে একে স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাঁর কাছে। অপরাধবোধে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
এমন কথা চমকে উঠে জারা বলে,
— ম-মানে?"
মাহিদ ভাই জারার চোখে তাকিয়ে, ভারী গলায় বলেন
— তোর সাথে এত বছর যোগাযোগ না রাখার একটাই কারণ ছিল—তোর বাবা।"
জারা আঁতকে ওঠে বলে
— "কি বলছেন? কি...!"
মাহিদ ভাই দীর্ঘ নিঃশ্বাস বলেন,
— সেদিন..স্পেন যাওয়ার দিন্ এয়ারপোর্টে তোর বাবা আমায় বলেছিলেন যদি সফল হতে পারি, তাহলেই যেনো তোর দিকে চোখ তুলে তাকাই! তখন বেশ অবাক হয়েছিলাম। সেই মানুষই তো একসময় আব্বুর সঙ্গে বসে তোর কথা বলতেন, আর যাওয়ার আগে... যুদ্ধে নেমে গেলেন!"
— "উনার একটাই কথা ছিল যেদিন ডলার হাতে দু’মুঠো ভরে আনতে পারব, সেদিন যেনো তোর সামনে এসে দাঁড়াই। সেদিন উনি নিজেই তোকে আমার করে দেবেন! আমি সেই দিন ওয়াদা করেছিলাম, জেদ নিয়েছিলাম—তোর যোগ্য না হলে তোর সামনে যাব না! আর আজ... আজ আল্লাহ আমাকে দিয়েছে, রিযিক দিয়েছেন, তোর মতো রত্নকে আগলে রাখার শক্তি দিয়েছেন। তবে আজ তিনি কেনো এমন করছেন?
চোখ দুটো ছলছল করে উঠে জারার। বাবার অমন কাণ্ডের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। নিজের বাবার কারণেই যে মাহিদ ভাই ওর থেকে দূরে ছিলেন এই সত্যিটা বুকের ভেতর ছুরি হয়ে বসে যায়।
মাহিদ ভাই এক টানে জারাকে টেনে নেন নিজের বুকের সাথে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন।তারপর ঘরের সবার দিকে তাকিয়ে গর্জে ওঠে বলেন,
— জারা আমার স্ত্রী! শুধু আমার! ও শুধু মাহিদ মাহতাবের! এই নারী কে আমি জীবনে কখনোই ছাড়ব না। বিয়ে করেছি, আবারো করব! সবার সামনে করব!"
তারপর চোখ তুলে তাকান জাফর সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলেন,
— "জাফর সাবিত সাহেব, আমি আপনার মেয়ে জাহরা জারাকে আবারো বিয়ে করতে চাই। ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি আমি আপনার মেয়েকে! আপনি কি এই হতভাগা পুরুষটার হাতে তুলে দেবেন আপনার মেয়েকে?"
জাফর সাহেব নীরবে মাথা তুলে তাকান। চোখে পানি, কণ্ঠে অনুশোচনার নিয়ে। তারপর ধীরে
Mdemran11
Eliminar comentario
¿ Seguro que deseas eliminar esté comentario ?