#মানুষটার প্রেমে পড়ার জন্য দায়ী। ধীরে ধীরে তার কাছে এসে বুঝেছিল নৈঋতা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কেউ। কিন্তু এক ময়ানে যে দুই তরবারি রাখতে নেই।নির্জনা যথাযথ চেষ্টা করেছে তাদের মাঝে দূরত্ব তৈরী করার। অথচ এখন মনে হচ্ছে এটাই কাল হলো তার।
বাইরে গাড়ির আওয়াজ হতেই দৌড়ে বের হলো নির্জনা।সে এই মুহুর্তে দিলশাদের বাড়িতেই ছিল। দরজার সামনে দাঁড়াতেই দেখতে পেল দিলশাদ প্রবেশ করছে, তার পাঁজা কোলে নৈঋতা।যে কপাল কুঁচকে আছে।নির্জনাকে দেখেও পাশ কাটিয়ে সরাসরি নৈঋতার বেডরুমে প্রবেশ করলো। ইতিমধ্যে ডাক্তার এসে পৌছেছে। পা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণের পর ডাক্তার জানালো কোনো সমস্যা নেই। তবে অতিরিক্ত রক্তক্ষয় যে নৈঋতার জন্য প্রাণঘাতী এটাও মনে করালো আরো একবার।
দিলশাদ কিছু বলছিল কিন্তু নৈঋতা বলল,
"একা থাকবো আমি।"
কিন্তু তার কথার কোনো মূল্য পেল বলে মনে হলো না।
দুইজন পরিচারিকার সাহায্যে লম্বা শাওয়ার নিয়ে ফিরলো সে। দিলশাদ হেড শেফকে ইতিমধ্যে খাবার তৈরি করতে বলেছে৷ নিজের রুমে ফিরে শাওয়ার নিয়ে মাত্র ফিরলো।নির্জনা তখন তার বেডরুমে বসে।দিলশাদ ভণিতা না করে বলল,
"তুমি একটা সরি ডিজার্ভ করো। আ'ম সরি।কিড্ডোকে না পেয়ে আমার সব কিছু এলোমেলো ছিল।"
"তাই বলে নিজের স্পেশাল দিনটা?অন্য কেউ ওকে খুঁজে আনতে পারতো।"
"না নির্জনা, নৈঋতাকে নিয়ে আমি কখনো কোনো রিস্ক নিতে পারবো না।ওর সামান্য এক ফোঁটা র'ক্ত ঝরলে আমি ওকে হারিয়ে ফেলব।"
"ও কি অসুস্থ?"
"কিড্ডোর ব্লাডগ্রুপ Rh-null, ওর রক্ত কেবল রেয়ার না।মাত্র ৫০ জন মানুষ আছে এই পৃথিবীতে যাদের কেবল এও গ্রুপ।ও বাসা থেকে বেরিয়েছে, এটাই আমার জন্য ভয়ংকর।"
"এটা এমন কিছু নয় দিলশাদ, যার জন্য তুমি বিয়েটাই ক্যান্সেল করলে।আমার কথা একবার ভাবলে না?যার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই, না রক্তের না মায়ার। তার জন্য তুমি এমন আমার সাথে করতে পারো না।"
দিলশাদ নৈঋতার রাগ বুঝে। গলায় ঝুলানো তোয়ালে খানিকটা ছুড়ে মেরে হেঁটে যায় ক্লোজেটের দিকে।টিশার্ট গায়ে জড়িয়ে নির্জনাকে বলল,
"তোমার রাগ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু জানো, কিড্ডোর তখন বয়স পাঁচ, প্রথম দাঁত পড়লো।আমরা সেবার মাধ্যমিক দিবো।কিন্তু কিড্ডোর মাড়ির থেকে অতিরিক্ত রক্ত পড়ার কারণে কিড্ডো কেমন ঝিমিয়ে গিয়েছিল।আমরা তখন আর কি বুঝি? ডাক্তার ট্রিটমেন্ট দেওয়ার সময় জানতো না ওর ব্লাডগ্রুপ রেয়ার।ভাঙ্গা দাঁত ফেলতে গিয়ে এমন। যখন ইলহাম জানলো এই অবস্থা তখন থেকেই আমাদের বন্ধু মহলের খোঁজ শুরু।আমরা খুঁজে বের করলাম যে বিপদে কিড্ডোকে ব্লাড দিতে পারবে।আর জানো? তাকে আমি প্রতি মাসে একটা এমাউন্টও পে করি।যাতে কিড্ডোর কখনো ব্লাডের প্রয়োজন হলে পাওয়া যায়। আর সেই মেয়ের সাহস কি করে হলো এই বাড়ি ছাড়ার?আজ পায়ে ব্যথাও পেয়েছে।"
"তুমি ওর প্রতি অবজেজসড দিলশাদ।"
দিলশাদ জবাব না দিয়ে বেরিয়ে এলো।নৈঋতা নিজ বেডরুমে নিজের চুল তোয়ালে দিয়ে মুছছিল আয়নার সামনে বসে। দরজায় টোকা পড়তেই আয়নায় তাকিয়ে বলল,
"দরজা খোলা।"
দিলশাদ ঢুকে এসে পেছন থেকে চুলের তোয়ালেটা নিয়ে বলল,
"আজকের দিনে তো তোমাকে বিশ্রামে থাকা উচিত ছিল কিড্ডো।"
"আজআজ রাতে নির্জনার কাছে যাবেন?"
প্রশ্নটা হঠাৎ করেই ছুঁড়ে দেওয়া তীরের মতো ধাক্কা দিল দিলশাদকে। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। নৈঋতা তার হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে বলল,
"আপনার দায়বদ্ধতা আছে তার প্রতি।"
"তোমার না ভাবলেও চলবে।"
"আমি তো আর আপনাত কিছু না, তাই না? শুধু একটা দায়, শুধু একটা ভয়। আর কিছু না।"
দিলশাদ কিছু না বলে তাকে নিয়ে এলো খাবার টেবিলে।নৈঋতার চেয়ার বরাদ্দ।বরাবর সে দিলশাদের বাম পাশে বসে। কিন্তু আজ সেখানে নির্জনা বসেছে।দিলশাদ কিছু বলল না। তার মতে খাবার যে কোনো চেয়ারে বসে খাওয়া যায়। ঠিক সেই সময় প্রত্যয় এলো। নৈঋতার পাশে বসে বলল,
"হে কিড্ডো....
দিলশাদ তার দিকে তাকাতেই ডাক পরিবর্তন করে বলল,
" নৈঋ তোমার জন্য সুখবর আছে।তোমার মায়ের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। আর সে আগামীকাল তোমাকে নিতে আসবে। ফাইনালি তুমি একটা পরিবার পেতে চলেছো।"
দিলশাদের দিকে তাকালো নৈঋতা। খাবারের প্লেটে তার হাতটা কি একবার থেমে গিয়েছিল? নাহ্ থামেনি।যাক অবশেষে তাহলে সে মুক্ত করতে পারলো দিলশাদকে।তার দায়, তার প্রতিজ্ঞা থেকে।
চলবে( রেসপন্স করবেন)
সম্পূর্ণ গল্পের লিংক : https://www.facebook.com/share/p/15wHHtJpVQ/
Mdemran11
Eliminar comentario
¿ Seguro que deseas eliminar esté comentario ?