#
মৃন্ময় চারপাশে চোখ ঘোরাতে থাকে। চারপাশের শুদ্ধ বাতাসটা টেনে নিতে থাকে বুকে। তারও দেশে আসার পর আর ভালো ঘুম হয়নি। কেবল থেকে-থেকে একটি মেয়ের মুখই বুকের জমিনে ভেসে উঠে। ভাইকে কি আর এমন কথা বলা যায়? ভাই বুঝবে বুকের ভেতর কেমন হচ্ছে ভাঙচুর?
"বললি না তো, ঘুম ভেঙে গেলো নাকি ঘুমোসইনি?"
মৃন্ময় বুক ভরা শ্বাস নিয়ে সত্যি কথাটিই বলল, "ঘুমোয়নি।"
শাহাদাৎ ছোটো ভাইয়ের অকপটে বলা এই সত্যি কথায় হাসল। ভাইয়ের বাঁ বাহুতে ছোটো চড় দিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
"কোনো সমস্যা?"
বড়ো ভাইয়ের জানতে চাওয়ার আগ্রহী চোখ দু'টো ঘুরে বেড়াল মৃন্ময়ের মুখ জুড়ে। মৃন্ময়ের মনে হলো একটু মন খুলে মনের কথা বলতে। কথার ভারে তার প্রাণ যায় যে! কিন্তু বলতে পারলে না। সংকেচ, দ্বিধায় আটকে গেলো মুখের বুলি মুখেতেই। সে কথা ঘুরিয়ে বলল,
"না ভাই, কী আর সমস্যা হবে। গেম খেলেছি সারা রাত।"
"এখন তাহলে ঘুমুতে যা। ঘুমিয়ে নে। ভোর হয়ে গেলো বলে।"
ভাইয়ের কথা মাথা পেতে নিলো মৃন্ময়। যেমন করে এসেছিলো তেমন করেই প্রস্থান নেওয়ার জন্য পা বাড়াতেই শাহাদাৎ পিছু ডাকল। আপন মনে বলল,
"যদি প্রেম ঘটিত সমস্যা হয় জানাবি। আমরা যেকোনো মেয়েকে বউ হিসেবে আনতে রাজি তোর পছন্দের। আর বাবার অফিসে কবে থেকে বসবি সেটাও জানাস।"
মৃন্ময় যেতে নিয়েও ফিরে তাকায়। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে, "এ মাসটা কাটুক। আগামী মাসে বসবো। এ মাসে একটু নাহয় তাকে ভেবেই কাটিয়ে দিলাম।" শেষের বাক্যটা খুব ধীরে বলল। এতটাই ধীরে যে তার ভাই বুঝলো না।
মৃন্ময় চলে যেতেই আবারও ছাদে একাকী দাঁড়িয়ে রইল শাহাদাৎ। খুব মন টানল চাঁদনীকে কল দেওয়ার জন্য। কিন্তু নিজের মনকে সংযত করল। কী দরকার মানুষের ব্যথা বাড়ানোর!
*
সওদাগর বাড়ি ব্যস্ত বাড়ির মেয়ের বিয়ে সম্পর্কিত অনুষ্ঠান নিয়ে। আজ গায়ের হলুদ অহির। সকাল থেকে তাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি পড়ে গেছে। এই নাকি ফুল নেই, এই নাকি সাদা গোলাপ কম এনেছে, এই নাকি রান্নার আয়োজন শুরু করতে দেরি হচ্ছে... আরও কত কী!
অহির ঘরে ফ্যান চলছে। পর্দা গুলো এখনো টাঙানো। জানালার সামনে থেকে সরানো হয়নি পর্দা গুলো। বাহিরের হৈচৈ রুমটি অব্দি পৌঁছাতে দিচ্ছে না বন্ধ দরজাটি। সকলেই অহির একটি সুষ্ঠ নিন্দ্রার ব্যবস্থা করে দিয়েছে যেন। মেয়েটা ভোরে নাস্তা করে, স্নান সেরেই ঘুমিয়েছে।
অহির সুন্দর ঘুমটিকে বড়ো জ্বালাতন করে ভাঙিয়ে দিলো তার ফোনের রিংটোন। অনবরত তার কম্পনরত শব্দে অহির ঘুম ভাঙলো। তবে চোখে তখনও এক সমুদ্র ঘুম বাসা বেঁধে আছে। অহি ঘোলা চোখে ফোনটি রিসিভ করল। ভারী কণ্ঠে বলল,
"হ্যালো..."
অপর পাশ থেকে পুরুষালি, চনমনে কণ্ঠ ভেসে এলো, "ঘুমাচ্ছেন নাকি?"
কণ্ঠটি নওশাদের তা বুঝতে এক সেকেন্ডও সময় ব্যয় হলো না অহির। সে ঘুমন্ত স্বরে, ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসি নিয়েই বলল, "হ্যাঁ।"
"তাহলে ঘুমিয়ে নিন, পরে কল দিচ্ছি।"
"আরে না, না। বলুন।"
"আসলে মা জিজ্ঞেস করছিলো আপনার আঙুলের সাইজ কত।"
"কেন?"
"সেটা তো আম্মুই জানে। আমাকে কেবল জিজ্ঞেস করতে বলল।"
অহি হাসলো। আংটির সাইজ যে ওর শাশুড়ি নয় নওশাদেরই প্রয়োজন তা সে বুঝতে পেরেছে বেশ। তবে, সে বুঝতে পারেনি ভাব করেই সাইজ বলল।
নওশাদ বলল, "তাহলে আপনি ঘুমিয়ে নিন। পরে কথা হবে।"
"না, সমস্যা নেই। হুমু কোথায়?"
"আরে ঘুমিয়ে নিন। পরে আবার কবে না কবে ঘুমুতে পারেন রাতে। আর হ্যাঁ, হুমু খেলছে।"
অহি হয়তো বুঝলো না নওশাদের কথার ইঙ্গিত। তাই শুধাল, "ঘুমুতে পারব না কেন রাতে?"
"কারণ রাতে কাজ আছে তাই পারবেন না।"
"কী কাজ?"
"কেন, ভালোবাসা-বাসির কাজ।" কথাটি বলেই নওশাদ হো হো করে হেসে উঠল। এবার পরিপূর্ণ ভাবে অহির মস্তিষ্কে সেই কথাটি অর্থবহ হলো। লজ্জা ঘিরে ধরলো তাকে আষ্টেপৃষ্টে। অহি মাথা নামিয়ে ফেলল। "নির্লজ