# ভেতর কিছু কি হলো?"
"জানি না। আমি একদিন কল করেছিলাম বললো ব্যস্ত না-কি, পরে কল দিবে। অথচ এ অব্দি আর কল দিলো না।"
মুনিয়া বেগমের চিন্তিত স্বর শোনা গেলো। সবারই চোখে-মুখে ছড়িয়ে গেলো সেই চিন্তার আবহাওয়া। চেরি চোখ তুলে চিত্রা আপার দিকে তাকালো। সেদিন কমিউনিটি সেন্টারে তো সে-ও ছিলো। নিরু আপুর বিয়ের খবরটা তার যে আর অজানা নয়। সে কি এটা বলে দিবে সবাইকে?
চেরির মুখ অবয়ব দেখে মনের খবর ঠিক বুঝলো চিত্রা। চোখের ইশারায় বলল কিছু যেন না বলে। চিত্রা মনে মনে ঠিক করলো আজ তার ভাইজান এলে কথা বলবে। ভাইজানকে বুঝাবে। জীবন হেলায় ভাসানোর জিনিস নয় মোটেও। যে চলে গেছে তাকে ভুলেই যে বাঁচতে হবে!
টেবিলের কথপোকথন ঘুরে যায়। তুহিনের কথা ঘুরে চাঁদনীর দিকে। কতদিন মেয়েটা দেশে নেই সে নিয়ে শুরু হয় আলাপ-আলোচনা। চিত্রা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। যাক সবাই ভাইজানের ব্যাপারটা তেমন আমলে নেয়নি।
•
চাঁদনীর নিঃসঙ্গ জীবনে টুইংকেল যেন এক টুকরো ভালো থাকার কারণ। মেয়েটা এত চঞ্চল। আবার কখনো কখনো খুব বুঝদার যেন!
আজও মেয়েটা হাজির চাঁদনীর ফ্ল্যাটে। ও এলেই একটা উৎসব উৎসব আমেজ অনুভব হয়।
চুলোয় ফুটছে চায়ের জল। ধোঁয়া উড়ছে। তার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে টুইংকেল। টুইংকেলের একটু পেছনে চাঁদনী। ও রাতের খাবারের জন্য আয়োজন করছে। টুইংকেল বায়না ধরেছে ও আজ বাঙালি খাবার খাবে। শুঁটকি ভর্তা আর ভাত। চাঁদনী সেটাই আয়োজন করছে। দেশীয় খাবার খেলে ওর খুব বাড়ির কথা মনে পড়ে। সেজন্য রান্না করে না সেসব খাবার। একা খেতে গিয়ে চোখে জল আসে। ছোটোবেলা থেকে টেবিল ভর্তি মানুষের মাঝে খেয়ে বড়ো হয়েছে। খাওয়ার সময় অনেক আইটেমের মাঝে গালগল্প করাও ছিলো তাদের নিত্য দিনের রুটিন। প্রতিটা খাবারের সাথে মিলে আছে একেকটি গল্প। মাছের মাথাটা চিত্রা খেতে ভালোবাসতো, চেরির পছন্দ ছিলো কচুবাঁটা, তুহিন তো চিকেন পেলেই সন্তুষ্ট, অহির পছন্দ ছিলো আলু ভর্তা আর ডাল ভুনা। এই এতসব স্মৃতি নিয়ে কি আর খাওয়া যায় তৃপ্তি করে? গলায় আটকে যায় খাবার। বুকে জ্বলন হয়। তাই সে দেশীয় খাবার তেমন রান্না করে না, খায়ও না।
চায়ের জলে চা-পাতা দিয়ে টুইংকেল চাঁদনীর দিকে তাকালো। ওর চাঁদনী আপুইকে ভীষণ পছন্দ। কেমন চুপচাপ মানুষ! কত আদরও করে তাকে। এই মানুষটার এমন শুকনো চোখ-মুখ দেখলে ওরা মায়া লাগে। কেবল মনে হয়, কী করলে যে আপুইটা হাসবে।
চাঁদনী একটি বাটিতে আলু নিলো কতগুলো। সিদ্ধ করার জন্য। তখনই তার মোবাইলের স্ক্রিনটি জ্বলে উঠলো। নোটিফিকেশন এলো, "ইন্দুবালা, ছেড়ে যাচ্ছি আপনার শান্ত শহর। সুখে থাকবেন বলেছিলেন কিন্তু। কথা রাখবেন।"
ছোট্টো একটি মেসেজ। তিনটি বাক্যেই মেসেজ শেষ। চাঁদনীও ফোনের দিকে তাকালো সাথে টুইংকেলও তাকালো। মেসেজটি পড়া শেষ হলেই চাঁদনী নিবিড় চোখে টুইংকেলের দিকে চাইলো। মেয়েটাও তাকিয়ে আছে তার দিকে। চাঁদনী ফোনটা উল্টো করে রাখলো। কিছুই হয়নি যেন এমন ভাব করলো। সবকিছু নিমিষেই ধামাচাপা দেওয়ার তীব্র চেষ্টা ছিলো তার ভেতর।
"মৃন্ময় ভাইয়া চলে যাচ্ছেন?"
টুইংকেলের প্রশ্নাত্মক গলার স্বর, চোখের ভাষা। মৃন্ময়ের কথা সে আগে থেকেই জানে। চাঁদনী বলেছিলো।
চাঁদনী ছোটো করে উত্তর দিলো, "হ্যাঁ।"
"তুমিই কি বলেছো চলে যেতে?"
"হ্যাঁ।"
"আরেকটা সুযোগ কি দিতে পারতে না, আপুই?"
"পারতাম।"
"দিলে না কেন তবে?"
"কারণ এবার আমি সুযোগ নিজেকে দিতে চাই। বিশ্বাস করা, ভরসা করা খুব কঠিন কাজ। এবং সেই কঠিন জিনিসটা যখন ভেঙেচুরে যায় তখন মানুষ আর সুযোগ দেওয়ার অবস্থানে থাকে না। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে আমি বাড়াবাড়ি করছি। মৃন্ময়ের এই ছোটো অপরাধ ক্ষমা করাই যায়। কিন্তু তুমি একবার বলো তো, তুমি যাকে বিশ্বাস করেছো সে তোমাকে পাওয়ার জন্য পুরো শহরজুড়ে বদনাম ছড়িয়ে দিলো। তখন তোমার কেমন লাগবে? ভালোবাসা মানে তো পবিত্রতা তাহলে আমিই কেন বদনামের ভাগিদার হবো? এই সমাজে একটা মেয়ের নামে কালি লাগানো খুব সহজ কিন্তু সেটা মুছে ফেলা তার চেয়েও বেশি কঠিন। আমার বদনামের দিনগুলো কেমন ছিলো জানো? আমার মা আমার গায়ে হাত তুলেছেন। নিজের গর্ভকে কলঙ্কিত বলেছেন। আমার বাবাকে মানুষ কিছু বলতে দু'বার ভাবেনি। যদি সেই সময়টাতে আমি যুদ্ধ করতে না পারতাম? যদি মরে যেতাম? তাহলে মৃন্ময় বাঁচাতে পারতো আমাকে? কবর থেকে তুলে এনেই কি সরি বলতো? যাদের সাথে ঘটনা গুলো ঘটে তারাই জানে কী যায় ভেতর ভেতর। কতটা ঝ