# অহি এত পছন্দ করে।
অহি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বিপরীতে নিজেই ছুঁড়ল প্রশ্ন, "ট্যুর দেওয়ার কথা বলছেন, জিজ্ঞেস করবেন না ক্যারিয়ার নিয়ে কী ভাবলাম? গ্রাজুয়েশন তো শেষ করে বসে আছি আরও ছ'মাস আগেই।"
অহির প্রশ্নটি অবনী বেগম নিতান্তই স্বাভাবিক ভাবে নিলেন। হাঁটতে হাঁটতে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, "ক্যারিয়ার নিয়ে তোমাকে বলতে হবে না-কি! তুমি হলে আমার লক্ষ্মীমন্ত মেয়ে। জীবনে ঠিক তুমি কিছু একটা করে নিবেই। তাই আমি চাই সেই কিছু একটার বাঁধনে আটকানোর আগে নিজের শখ পূরণ করো। ইচ্ছে মতন দুনিয়া ঘুরো।"
অহি মুগ্ধ হলো। মা হিসেবে অবনী বেগম মারাত্মক পার্ফেক্ট। মাত্র আট বছরের পার্থক্য মানুষটার সাথে তার! অথচ কী পরিপক্ব ভাবেই না মা হয়ে উঠেছিলেন!
দু'জনের কথোপকথনের মাঝেই আকাশ ভয়ঙ্কর ভাবে গর্জন করে উঠলো। কাঁপিয়ে দিলো চারিধার। তার মিনিটের মাঝেই আচমকাই গগণ চিরে বৃষ্টির ফোঁটারা নিজ মনে তীব্র বেগে ছুটে আসতে লাগলো ধরণীর বুকে। ভিজিয়ে দিলো চারপাশটা বড়োই আকাঙ্ক্ষার বৃষ্টি হয়ে। অহি ছুটে ছাউনির নিচে যেতে নিলেই হাত ধরে থামিয়ে দিলেন অবনী বেগম। অহি বিস্ময় ভরা চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নাত্মক স্বরে জিজ্ঞেস করল, "কী হয়েছে, মা?"
অবনী বেগমের চোখের কোণায় অশ্রু দেখা গেল নিরবে নিভৃতে। বৃষ্টির জল আর নয়নের জলে রঙের তফাত না থাকলেও অহি বেশ ধরে ফেললো। বৃষ্টির জলের সাথে মিলেমিশে একাকার হওয়া অশ্রুর দিকে তাকিয়ে বিমূঢ় হয়ে বলল, "কাঁদছেন কেন?"
অবনী বেগম জাপ্টে ধরলেন মেয়েকে সাথে সাথেই। ক্রন্দনরত স্বরে বললেন,
"তুমি বলেছিলে আমাদের কোনো এক বিষণ্ণ ঋতুতে দেখা হবে। সেদিন আমাদের গল্প হবে নিকটের। এই যে দেখো অহি, আজকের ঋতুটা ভীষণ বিষণ্ণ। চারপাশে কেমন দেখো মলিনতা। আমাদের দেখো কাছাকাছি আসা হয়েছে। তোমাকে সন্তান হিসেবে পেয়ে আমি চির জীবন নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করি, চন্দনকাঠ।"
দূরে দাঁড়িয়ে থাকা চেরি হেসে দিলো। ছুটে এসে মা-বোনের মাঝে জায়গা করে নিতে নিতে বলে, "ওমা, আমার কী দোষ? তোমরা একটু আমাকেও দেখো! নিজেরা নিজেরা সব আদর করে নিচ্ছো যে!"
বোনের কথায় অহি তুমুল আহ্লাদে বোনকেও জড়িয়ে ধরল।
জীবনে সুখী হতে আর কী লাগে?
•
চুলোর খিচুড়িতে বুদবুদ উঠছে। বাহিরের বৃষ্টির ছাঁট এসে একটু একটু চোখে-মুখে লাগছে রোজা সওদাগরের। আজ বড়ো নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ছে। মেয়েটা তার খিচুড়ি পছন্দ করতো ভীষণ। একটু আচার আর মুরগীর মাংস হলেই বার বার মায়ের রান্নার প্রশংসা করতো! আজ এতগুলো বছর ধরে মেয়েটা দূরে। কী জানি কী খাচ্ছে! কেমন আছে? একটু ভালো করে কথাও বলে না মেয়েটা তার সাথে। সবসময় এমন করে যেন মা নামক মানুষটা ওর চির শত্রু। ওর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিটা যেন মা'ই করে। কিন্তু মেয়েটাকে কীভাবে বোঝাবে যে, মায়েরা কখনো সন্তানের ক্ষতি চায় না!
রোজা সওদাগর আর কিছু না ভেবে চুলোর আঁচটা কমিয়ে দিয়ে ছুটলেন স্বামীর কাছে। স্বামী আজ বাড়িতে আছেন। লোকটাকে দিয়ে যদি মেয়েটাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে একটু দেশে আনা যায় সেটাও বা কম কীসে? মেয়েটাকে দেশে এনে যদি একটা বিয়ে-শাদি দিয়ে গতি করা যায় তাহলেই তার বুকের পাথর নেমে যেতো! একটা মাত্র মেয়ে, একা একাই কি জীবন কাটিয়ে দিবে? মা হিসেবে এটা তার সহ্য হবে আদৌ?
আফজাল সওদাগর আরামকেদারায় বসে ঝিমুনি কাটছিলেন। খুব গভীর ধ্যানে যেন সে মগ্ন। ঘরের আলো নেভানো। বাহিরের আকাশও যথেষ্ট অন্ধকার বলে ঘরে তেমন আলোর ছিঁটেফোঁটা নেই বললেই চলে।
রোজা সওদাগর বেশ ধীর গতিতেই প্রবেশ করলেন ঘরে। এসে বসলেন স্বামীর পাশে। ধীর গতিতে ডাকলেন,
"শুনছেন?"
আফজাল সওদাগর চোখ মেলে তাকালেন। স্ত্রী’কে নিজের পায়ের কাছটায় দেখে নড়েচড়ে বসলেন, "কী?"
"আপনারে একটা কথা বলার ছিলো।"
"এত টালবাহানা না করে বলো।"
রোজা সওদাগর বড়ো করে শ্বাস নিলেন। নিজের স্বামীর কাছেও মেয়ের কথাটা বলতে ঠিক ভরসা পাচ্ছেন না। লোকটাও তো মেয়ের কথায় সর্বশেষ কথা হিসেবে নেন। মায়ের মনের চিন্তা কি আর বুঝেন? তবুও মেয়ের একটা গতির কথা ভেবেই গাঁইগুঁই করে বললেন,
"মেয়েটা আর কতদিন বিদেশ বিভূঁইয়ে পড়ে থাকবে? দেশে কি আসবে না?"
মেয়ের কথা শুনেই তিনি মাথা নাড়ালেন। তিনিও যে মেয়ের কথা ভাবছিলেন তা বুঝা গেলো। রোজা সওদাগর এবার একটু সুযোগ পেলেন যেন। তাই এবার আরেকটু সাহস করে বললেন,
"বলেন না ওরে একটু দেশে আসতে। বয়সও তো হচ্ছে মেয়েটার। বিয়ে-শাদিও তো দিতে হবে না-কি! আমাদের যদি ভালো-মন্দ হয়ে যায় কে দেখবে মেয়েটাকে? মরেও শান্তি পাবো আমরা?"
আফজাল সওদাগর স্ত্রীর দিকে তাকালেন স্থির দৃষ্টিতে, "বিয়ে-শাদি করার কোনো ইচ্ছে তুমি মেয়ের ভিতরে দেখেছো?"
স্বামীর এই কথাটিতে মেয়ের বেপরোয়া চালচলনে যে